ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুগপূর্তিতে গীতাঞ্জলির ‘আলোয় ভুবন ভরা’

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

যুগপূর্তিতে গীতাঞ্জলির ‘আলোয় ভুবন ভরা’

গৌতম পাণ্ডে ॥ মিলনায়তনের বাইরে ভেসে আসছে সম্মেলক কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী গান ‘আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা।’ শিশু-কিশোরদের আঁকা চমৎকার কিছু ছবি নিয়ে বাইরে আয়োজন করা হয়েছে ‘সকাল বেলার পাখি’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী। মিলনায়তনে প্রবেশ করেই দেখা যায় বর্ণাঢ্য সাজে মঞ্চজুড়ে বসে থাকা শিশু-কিশোররা গাইছে দেশজ সুরের গান ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি।’ মিলনায়তনে উপচেপড়া দর্শনার্থীর ভিড়ে তিলধারণের জায়গা মেলানো ভার। উত্তরার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির যুগপূর্তি উৎসবের উদ্বোধনী দিনের পরিবেশটা ছিল এমনই। ‘আলোয় ভুবন ভরা’ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর উত্তরায় ৬ নম্বর সেক্টরের স্কিটি মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধনী পর্ব। নাচ, গান, আবৃত্তি, সম্মাননা প্রদান ও স্মরণিকা প্রকাশ ছিল প্রথম দিনের বিশেষ আকর্ষণ। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিন গুণীজনকে প্রদান করা হয় গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক। সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্বরা হলেন- বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, কবি আসাদ চৌধুরী ও নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। অনুষ্ঠানের শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। তিন গুণীর হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। স্মারক প্রদানের পাশাপাশি পদকের সম্মানী হিসেবে তাদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান ও রূপালী প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ খোকা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্ভীক সাংস্কৃতিক সংগঠক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাহবুব আমিন মিঠু। সম্মাননা প্রদান পর্বের পর অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক প্রবীর দত্তের সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরপর দুটি দলীয় গানের পর নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসে সংগঠনের শিশু-কিশোররা। তারা পরপর ‘এমন যদি হতো আমি, পাখির মতো’, ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’, ‘আমরা সবাই রাজা’ ও ‘শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন প্রিয়তি। তার কণ্ঠে ‘সাজিয়াছো যোগী বল কার লাগি’ গানটিতে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়। আসিফ পরিবেশন করেন ‘যা দিয়েছো তুমি আমায়।’ পরে পরিবেশিত হয় দলীয় আবৃত্তি। পরপর দুটি দলীয় গান ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ ও ‘নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে’ পরিবেশনের পর ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’ ও ‘মধু মালতি ডাকে আয়’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হয়। গিটারে দলীয়ভাবে ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটি পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ দলীয় গানের সাথে শেষ হয় উৎসবের উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠান। উৎসবে দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে ছিল বার্ষিক সনদপত্র বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবের সমাপনী আসরটি হবে শিল্পকলা একাডেমিতে ১৮ নবেম্বর সন্ধ্যায়। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি থাকবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহাবুবুল হক শাকিল ও রূপালী প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ খোকা। সমাপনী আয়োজনের সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আলোচনা শেষে মুনীর চৌধুরীর কর্মময় জীবনের ওপর লেখা নাটক ‘মুনীর চৌধুরী’ মঞ্চায়ন হবে। এটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রবীর দত্ত।
×