ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী আট দেশের নাগারিক জড়িত থাকায় সময় লাগছে

রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্তে ৭০ ভাগ অগ্রগতি

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্তে ৭০ ভাগ অগ্রগতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এ বছরই শেষ হচ্ছে না রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত। সবগুলো দিক শেষ করতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। যেহেতু এ ঘটনায় বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেজন্য তদন্তে সময় লাগছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে তাদের দাবি, তদন্তের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এখন বিদেশী হ্যাকার ও জুয়াড়িদের নেপথ্যে কারা রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ কোথায় সে বিষয়টি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও রিজার্ভ চুরির ঘটনায় চুরি, আইসিটি ও মানি লন্ডারিংয়ের মতো তিন ধরনের অপরাধ তদন্ত করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ছাড়াও আটটি দেশের নাগারিক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত। দেশগুলো হলো- ফিলিপিন্স, হংকং, ম্যাকাও, চীন, শ্রীলঙ্কা, মিসর, সিঙ্গাপুর ও জাপান। ওই সব দেশের যেসব নাগরিক এ ঘটনায় জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা লাগে। তাদের তৎপরতার ওপরও নির্ভর করছে তদন্ত কবে শেষ হবে। সিআইডির এক কর্মকর্তা আরও জানান, চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি করা হয়। তারা হলো- হ্যাকার, মানি লন্ডার, নেগোশিয়েটর ও ‘ইনসাইডার’। ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) কর্তৃপক্ষই মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। হ্যাকিংয়ের বিষয়টিও কয়েকদিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। হ্যাকারদের ম্যালওয়ারের মাধ্যমে আক্রান্ত ৩৫টি ডিভাইসও এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে বসে পরিকল্পিতভাবে যারা হ্যাকারদের সার্ভারে প্রবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছিল সেই ইনসাইডার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২০ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্টতার অনেক তথ্যউপাত্ত পাওয়া গেছে। তারা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য দেশের সব বিমান, স্থল ও নৌবন্দরগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তাদের চলাচল ও গতিবিধির ওপরও নজরদারি রাখা হয়েছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনার মামলার তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হচ্ছে- জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কমান্ড্যান্ট ও মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা শাহ আলম একটি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত এগোচ্ছে। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ জড়িত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তদন্তটা যদি আজকেও শেষ করা যেত, তারপরও আমার আরও তিন-চার মাস সময় লাগবে চার্জশীট দিতে। কারণ, তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া তথ্যপ্রমাণগুলো নিশ্চিত করতেও কয়েক মাস সময় লাগবে। কম করে হলেও তিন মাস।’ তিনি বলেন, এ মামলার তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের উদ্যোগে গত ৪ থেকে ৬ অক্টোবর আমরা সিঙ্গাপুরে বসেছিলাম একটা কো-অর্ডিনেশন মিটিংয়ে। সেখানে আমি ছাড়াও বাংলাদেশের আরও তিন প্রতিনিধি গিয়েছিলেন আর মিটিংয়ে আটটি দেশের ২৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমেও কয়েকটি দেশ আমাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে। ওই বৈঠকে অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে তদন্ত কিভাবে দ্রুত এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়টি বৈঠকে অগ্রাধিকার পেয়েছে। রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে আদালতের নির্দেশনা আছে কিনা- জানতে চাইলে সিআইডির কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, এ নিয়ে একটা বিভ্রান্তি হয় মাঝে মাঝে। যে কোন মামলা হলেই আদালত কয়েকদিন পরপর তারিখ দেয় শুনানির জন্য। তবে যেভাবে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করা যায় সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু ঘটনাস্থল যখন দেশের বাউন্ডারি পেরিয়ে কয়েকটা দেশে চলে যায়, তখন আমরা পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ি ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার ওপর। ওই দেশের একজনকে আমরা পেলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারব না। সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সেজন্য কাজের ক্ষেত্রে একটু চাপ তো পড়েই। সিআইডি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সবগুলো বিভাগের একটি সমন্বিত টিম এ তদন্তকাজ চালাচ্ছে। অর্থ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান।
×