ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পথের নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

পথের নিরাপত্তা

সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম এবং এশিয়ায় সপ্তম। এই হিসাব করা হয়েছে প্রাণহানি বিবেচনায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২১ হাজার মানুষ মারা যায় যানবাহনের কারণে। তবে দেশীয় যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে গত বছর সাড়ে আট হাজার মানুষ মারা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এই হিসাব প্রধানত দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিবেচিত। প্রাণহানির সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক না করেও বলা যায় যে, দেশের দুর্ঘটনার পরিমাণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দিক থেকে সপ্তম স্থানে অবস্থানরত বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। এও সত্যি যে, সেসব দেশের অধিকাংশের আয়তন, জনসংখ্যা এমনকি যানবাহনের সংখ্যাও বহুগুণ বেশি বাংলাদেশের তুলনায়। সেই অনুপাত বিবেচনা করলে বলতেই হয় যে, বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে সড়ক দুর্ঘটনার হার ও প্রাণহানির পরিমাণ অনেক বেশি। এক কথায় আশঙ্কাজনক, উদ্বেগজনক ও চিন্তা উদ্রেককারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত তিন কারণ- ওভারস্পিড, ওভারটেকিং এবং যান্ত্রিক ও রাস্তাঘাটের ত্রুটির কারণে ঘটে থাকে সড়ক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে এর সবটাই সমানভাবে ক্রিয়াশীল। তবে প্রধানত দায়ী যানবাহন চালকের অসতর্কতা। অজ্ঞানতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো। দেশে যানবাহনের তুলনায় চালকের সংখ্যা অনেক কম। দক্ষ ড্রাইভারের অভাব তো প্রকট। ২০১৫ সালের যাত্রীকল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারাদেশে চালকের সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। তাদের মধ্যে বৈধ চালক বড় জোর ২৬ লাখ। বাকি সব চালক অবৈধভাবে রাস্তায় চালাচ্ছে বিভিন্ন রকম যানবাহন। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর চালকও আছে অনেক। অন্যদিকে, বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশনভুক্ত যানবাহনের সংখ্যা ২৭ লাখ। অর্থাৎ, ৬০ লাখ চালকের মধ্যে বৈধ তথা লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংখ্যা মাত্র ১২ শতাংশ। এর পাশাপাশি রয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধ প্রায় ২২ লাখ নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ অনুমোদনহীন নানা যানবাহন। কিছুদিন আগে এক মন্ত্রী ও নেতা উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, চালকদের শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু সড়ক পথে যানবাহন চালানোর সময় মানুষ, গরু-ছাগলের তফাৎ বুঝলেই চলবে। সে অবস্থায় এহেন চালকরা মানুষ মারবে নাকি গাড়ি চালাবে সে প্রশ্ন উঠবে অনিবার্য। বিআরটিএ নামের সরকারী যে সংস্থাটি যানবাহন ও চালকের বৈধতার বিষয়টি দেখভাল করে থাকে, সেটির অনিয়ম, অব্যবস্থা, ঘুষ, দুর্নীতি সর্বোপরি অরাজকতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি একরকম ওপেন সিক্রেট। সেক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণ ও সম্পদহানির দায় এড়াতে পারে না সংস্থাটি। রাজধানীসহ সারাদেশের বেহাল সড়ক এবং জরাজীর্ণ সেতু-ব্রিজ-কালভার্টও কম দায়ী নয় সড়ক দুর্ঘটনার জন্য। একই সড়কে বিভিন্ন গতির যানবাহন চালানো, ধান-পাট শুকানো, গরু-ভেড়া-ছাগল চরানো সর্বোপরি পথচারীদের অসতর্ক চলাচল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বহুলাংশে। ইদানীং নতুন উপদ্রব হয়ে দেখা দিয়েছে সেলফোনে কথা বলা ও সেলফি তোলা। এসব ক্ষেত্রেই জনসাধারণের সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। গণমাধ্যমে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে। জাতীয় পর্যায়ে সরকারীভাবে সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রহণ করা যেতে পারে প্রতিকারমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা। প্রয়োজনে সাহায্য-সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে উন্নত দেশের আইনকানুন, নিয়মনীতি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের। মোটকথা, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবরকম সতর্কতা ও সাবধানতার বিকল্প নেই।
×