ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনলাইন হেল্পলাইন

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

অনলাইন হেল্পলাইন

মানুষের মধ্যে মনুষ্যবোধ জাগিয়ে তোলা সহজসাধ্য কাজ নয়। তার ভেতরের পশুত্বকে দমন করা না গেলে মনুষ্যবোধ জাগ্রত হবার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণতর। এটা তো বাস্তব যে, মানুষের মধ্যে সুপ্রবৃত্তি যেমন থাকে, তেমনি কুপ্রবৃত্তিও বাসা বাঁধে। এই দু’য়ের দ্বন্দ্বে মানুষ অনেক সময় হারিয়ে ফেলে খেই। নিজের ভেতরের মানবিক বোধ ও গুণাবলীকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হলে স্বাভাবিকতা বিলুপ্ত হয়। অপরের ক্ষতি করতে গেলে, সেই ক্ষতিটা যে নিজের হতে পারে, সেই চিন্তা থেকে নিজের ভেতরের মানবিক গুণাবলী জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষের ভেতরের সুপ্রবৃত্তিগুলো এখন জাগে না, বরং কুপ্রবৃত্তি এসে তাকে তাড়া করে। আর সেই দাপটে সে সমাজে বিষফোড়া তৈরি করে, অপরের ক্ষতিতে হয় নিমগ্ন। সমাজ সচেতন হলে এবং সামাজিক মূল্যবোধের বিস্তার ঘটলে মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলী বিকশিত হয়ে ওঠার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়। সচেতনতা মানুষকে তার ভেতরের পশুত্বকে হটিয়ে দিতে পারে। সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য জরুরী, তাই মানবিক বোধকে সবার মধ্যে সম্প্রসারিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেনও সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই সমাজকে সচেতন করে তোলাই তার সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপও নিয়েছেন। শিশু হেল্পলাইন চালু সেই পদক্ষেপেরই অংশ। এই হেল্পলাইনে ছেলেমেয়েরা বিপদে পড়লেই ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাইতে পারছে। চব্বিশ ঘণ্টা চালু এই হেল্পলাইনের কলসেন্টারে কর্মরতরা দুস্থ এবং সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ফোনের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনমাফিক তথ্য ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করছে। যখনই কোন শিশু বিপদে পড়বে, তারা এখানে ফোন করে সাহায্য পাবে। স্কুলে কোন সমস্যা হলেও শিশুরা তা বলতে পারবে। দেশে শিশু অপহরণ, ধর্ষণ ও শিশু হত্যার হার বাড়ছে। ঘরে বাইরে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্ন হবার মতো ঘটনা ঘটছে। সেখানে এই হেল্পলাইন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এজন্য সরকারকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। এর সঙ্গে বাল্যবিয়ে রোধের ব্যবস্থা সংযোজিত হওয়া সমাজের জন্য গুরুত্ববহ বৈকি। টেলিফোনের পাশাপাশি অনলাইনের ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজ চালানোর পদক্ষেপও নিয়েছেন শেখ হাসিনা। আগামীতে অনলাইনে বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারাদেশের আদালতগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারের সঙ্গে আদালত কক্ষ থাকবে। যেসব আসামি ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ প্রকৃতির, যাদের বারবার আদালতে আনানেয়া করাটা সমস্যা, তাদের জন্য সেখানেই বসবে আদালত। সেখানে আইনজীবীরা থাকবেন এবং অনলাইনে বিচার হবে। শিশু আদালতের জন্য এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। দেশে দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের আদালত থেকে কারাগারে ফেরত নেয়ার সময় পালিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটেছে। সেদিক থেকে বিচার করলেও এই পদ্ধতি অত্যন্ত ফলদায়ক হতে পারে। অনলাইন চালু হলে মামলার জট যেমন কমবে, তেমনি আসামি আনানেয়ার ক্ষেত্রে বিঘœ হবে না নিরাপত্তা, ব্যয়ও হ্রাস পাবে। বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ নেয়া হলে মানুষের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি বিচারের দীর্ঘমেয়াদী সূত্রতাও হ্রাস পাবে। আইনের শাসনকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপটি যুগান্তকারী এবং মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে মানুষ এবং সমাজকে আরও অগ্রগতি এবং উন্নত জীবন ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে, কলুষতামুক্ত এক দেশ গড়ে তুলবে, গৃহীত ব্যবস্থাগুলো সেই দিককেই উন্মোচিত করছে। আমরা এসবের সাফল্য কামনা করি।
×