স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার নামে বিশ্বব্যাংক ঋণের ব্যবসা করছে, আর এ কাজে সহায়তা করছে দায়ী উন্নত দেশগুলো। এমন মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। একইসঙ্গে সুন্দরবনের সমস্যা এখন শুধু দেশের মানুষের চিন্তা নয়, জাতিসংঘের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) টিআইবি সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) যৌথ আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। গত ২২ থেকে ২৮ অক্টোবর জলবায়ু ন্যায্যতা সপ্তাহ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উভয় সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উন্নত দেশের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। আর এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই দায়ী দেশগুলো বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কূটকৌশলে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যেমে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক সুদ ছাড়া ঋণ দেয় না। বাংলাদেশকে যে ২ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তা ঋণ। ক্ষতিপূরণে সহয়তার নামে বিশ্বব্যাংক ঋণ ব্যবসা করছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তেনের ক্ষতিপূরণ চাই, ঋণ চাই না। সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য সরকার ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করেছে। এজন্য সরকার আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃতও হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুন্দরবন এখন শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, জাতিসংঘেরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বিষয়টির প্রতি সরকারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া উচিত।
ইফতেখার বলেন, সরকারের যে কূটনৈতিক দক্ষতা রয়েছে তাতে দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে। আশা করছি আগামী সম্মেলনে দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আসবে সরকার। পাশাপাশি দায়ীরা যাতে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দোষী করতে না পারে সেজন্য পরিবেশবান্ধব শিল্প কারখানা গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি। ৭-১৮ নবেম্বর মরক্কোর মারাকাসে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিদ্যমান প্রতিশ্রুতির তুলনায় গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন ব্যাপকহারে কমিয়ে নতুন বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, যাতে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ গড়ে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকাসহ ১১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার কমানো হচ্ছে কি না সেটি যাচাই, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করার জন্য শক্তিশালী আইনী ব্যবস্থা এবং পরিবীক্ষণ সংস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে, যাতে কার্বন নির্গমন কমানোর বিপরীতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। প্রতিশ্রুতি অনুসারে শিল্পোন্নত দেশ থেকে সবুজ জলবায়ু তহবিলের প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি ডলার প্রদান নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।