ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছায়াছবি ছায়া ফেলেছিল জীবনে

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

ছায়াছবি ছায়া ফেলেছিল জীবনে

চলচ্চিত্র জগতের নায়ক-নায়িকাদের অভিনয় থেকে শুরু করে জীবনাচরণের সবকিছুই একটা সময়ে সাধারণের আকর্ষণ ছিল। সাদা পর্দার আলো ঝলমলে ঘর থেকে বেরিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় শৈলী থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি সবকিছু ছিল আলোচনার বিষয়। চলচ্চিত্রের কাহিনী, গান, সুর, তাল, লয় কোন কিছু আলোচনা থেকে বাদ যায়নি। গাঁয়ের মেঠোপথের রাখালিয়া সুরের বাঁশিতেও বেজে উঠেছে জনপ্রিয় সিনেমার কলি। সময়ের বিবর্তনে সেসব এখন নিতান্তই ইতিহাস। প্রবীণরা স্মরণ করেন, সে সময়কার নানা স্মৃতি। সে সময়ে চলচ্চিত্র মানুষের মনোজগতের কতটা জায়গা জুড়ে ছিল, তার কিছুটা প্রমাণ মেলে এখনও গাঁ গেরামের নি¤œ, নি¤œ মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের জীবনযাপনে। সে সময়ে চলচ্চিত্রে দাপটের সঙ্গে যারা অভিনয় করেছেন, সেসব তারকার নামে নিজ সন্তান কিংবা প্রিয়জনদের নাম রাখার হিড়িক পড়েছিল। এখনও গাঁ গেরামে দেখা মেলে রাজ্জাক, কবরী, ববিতা, সুচন্দা, সুজাতা, সুলতানা, সোহেল রানা, আলমগীর, ফারুক, জাফর ইকবাল, জাবেদ, ওয়াসিম, শবনম, রোজিনা, কবিতা, চম্পা, আজিম, রহমান প্রমুখ নায়ক-নায়িকা নামের অসংখ্য মানুষ। তাদের পূর্বসূরিরা এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয়ের আকর্ষণেই পরবর্তী প্রজন্মের নাম রেখেছে। শুধু কি নামকরণ! জাফর ইকবালের চুলের স্টাইল কিংবা রাজ্জাকের শার্ট ছিল সে সময়ে অনেক তরুণের অনুকরণীয়। সোহেল রানার কণ্ঠস্বর কিংবা জাবেদের নৃত্যে আকর্ষিত হয়নি, এমন তরুণের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। কোন ছবিতে হয়ত কোন নায়ক হাঁটার স্টাইলে হয়েছে আকর্ষিত। দেখা গেছে, ওইভাবে হাঁটার কসরত করছে অসংখ্য তরুণ। কান্নার অভিনয় দিয়েও বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী সাধারণের মন জয় করেছেন। আবার চলচ্চিত্রের চরিত্রের নামকরণেও সে সময়ে অনেক শিশুর নাম রাখা হয়েছে। যেমন, রূপবান ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র রূপবান নামের অনেক নারীর দেখা মেলে আজও। একইভাবে বেদের মেয়ে জোছনা, রাখালবন্ধুসহ হিট ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামে সে সময় অনেক তরুণ-তরুণীরও দেখা মেলে। শুধু দেশী চলচ্চিত্রই নয়। ভারতের বাংলা-হিন্দী সিনেমার অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। যেমন বাংলা সিনেমার উত্তম, সুচিত্রা, সৌমিত্র, সুপ্রিয়া কিংবা হিন্দী ছবির দিলীপ কুমার-সায়রা বানু মানুষের মনি কোঠায় সমান জায়গা করে নিয়েছেন। সুচিত্রার ব্লাউজের স্টাইল ওই সময়ে তরুণীদের কাছে ছিল ঈর্ষণীয়। সেলুনে চুল কাটা হতো হিরোদের স্টাইলে। টেইলার্স শাট-প্যান্ট বানাতেন একইভাবে। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখার পাশাপাশি ওই সময় চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রপত্রিকারও ব্যাপক কদর ছিল। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের কাছে। প্রত্যন্ত গ্রামেও মিলত এ জাতীয় পত্রপত্রিকা। পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হতো সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের বড় ছবি। যা দিয়ে ঘরের বেড়ার আকর্ষণ বাড়ানো হতো। মোটকথা একটা সময়ে রূপালী পর্দার তারকারা ছিলেন বিনোদন বঞ্চিত সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের অঙ্গ। যা এখন আর নেই। -শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে
×