ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক হাঁকালেন এ বাঁহাতি ওপেনার

তামিমের মধুর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

তামিমের মধুর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ম্যাচের ফলাফল যেমনই হোক। কিংবা দলের ব্যাটিং যত খারাপই হোকÑ বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যান যিনি সবসময়ই দুর্বার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। টেস্ট ক্রিকেটে বরাবরই শক্তিমত্তায় অনেক বেশি এগিয়ে ইংলিশরা। কিন্তু সেই টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদের পেলেই যেন ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের পক্ষে তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই সর্বাধিক রানের মালিক এ বাঁহাতি ওপেনার বারেবারেই সেটার প্রমাণ দিয়েছেন। ইংলিশ বোলারদের কাছে মাঠের মোকাবেলায় তাই একেবারে চরম শত্রুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও সেটার প্রমাণ দিলেন তামিম। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথমদিনেই ক্যারিয়ারের অষ্টম এবং ইংলিশদের বিরুদ্ধে তৃতীয় সেঞ্চুরি আদায় করে নিলেন তিনি। ১০৪ রান করার পর বিদায় নিয়েছেন এদিন তামিম। এর মাধ্যমে যে কোন প্রতিপক্ষের চেয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই সর্বাধিক রানও করলেন তিনি। শুরুটা করেছিলেন ২০১০ সালে ‘ক্রিকেট মক্কা’ ঐতিহাসিক লর্ডসে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম সেঞ্চুরিটা (ক্যারিয়ারের তৃতীয়) হাঁকিয়েছিলেন সেই টেস্টে। ১০৩ রানের ইনিংস উপহার দেয়ার পরের টেস্টে ম্যানচেস্টারেও ১০৮ রানের ইনিংস উপহার দেন তামিম। এরপর আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা হয়নি তামিমের। দীর্ঘ ৬ বছর ৫ মাস পর আবার প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ডকে পেলেন তিনি। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই আবার জ্বলে উঠলেন, ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেললেন। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক ৭ সেঞ্চুরির মালিক তামিম বেশ আগেই হয়েছেন। তবে টানা ১৪ মাসেরও বেশি সময় টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ দল। তবে এমন দীর্ঘ বিরতির পরও মধুর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নৈপুণ্যে হেরফের ঘটেনি তামিমের। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারেননি, ৯ রানেই বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনেই আবার জ্বলে উঠেছেন। শুরুতেই উদ্বোধন সঙ্গী ইমরুল কায়েসকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে বিচলিত হননি একটুও। সাবলীল ভঙ্গিমা নিয়েই মোকাবেলা করেছেন ইংলিশদের বোলিং আক্রমণ। দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হক সৌরভের সঙ্গে ১৭০ রানের বড় জুটি গড়েছেন। এটি টেস্টে দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ সেরা। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এটিই সেরা জুটি দ্বিতীয় উইকেটে। এর আগে হান্নান সরকার ও হাবিবুল বাশার ১০৮ রানের জুটি গড়েছিলেন ২০০৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি পেয়ে যান তামিম। তবে এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। ১৪৭ বলে ১২ চারে ১০৪ রান করার পর সাজঘরে ফিরে গেছেন। তবে বাংলাদেশকে দারুণ একটা অবস্থান তৈরি করে দিয়েই গেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এটি তামিমের তৃতীয় সেঞ্চুরি। আগের দুটি করেছিলেন টানা দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের মাটিতে। এবার তাদের বিরুদ্ধে প্রথম দেশের মাটিতে শতক হাঁকালেন। যে কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তার সর্বাধিক। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা ব্যতীত বাকি সবগুলো দলের বিরুদ্ধেই টেস্টে শতক হাঁকিয়েছেন। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আছে ২ সেঞ্চুরি। তবে যে কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মোট রান করার দিক থেকে এখন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই সর্বাধিক তামিমের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলমান ম্যাচসহ ৬ টেস্টের ১১ ইনিংসে ৬৩.২৭ গড়ে তিনি করেছেন ৬৯৬ রান। এই ৬ টেস্টেই অন্তত একটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস আছেই। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৮ টেস্টে ৪২.৮৭ গড়ে করেছেন ৬৮৬ রান। সবচেয়ে বাজে অবস্থা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ৬ টেস্ট খেলে মাত্র ১৬.৬০ গড়ে মাত্র একটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে করতে পেরেছেন ১৬৬ রান! ক্যারিয়ারে যত রান করেছেন এর মধ্যে সিংহভাগই করেছেন তিনি ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে। ২১ টেস্টে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে তিনি ৪৭.৩০ গড়ে ৬ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফসেঞ্চুরিসহ করেন ১৮৪৫ রান। আর ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে ২৩ টেস্টে ৩৪.০৪ গড়ে করেছেন ১৪৬৪ রান। সবমিলিয়ে এখন ৪৪ টেস্টে ৪০.৩৫ গড়ে তার রান ৮ সেঞ্চুরি ও ১৯ হাফসেঞ্চুরিসহ ৩৩০৯। এটি ছিল ঘরের মাটিতে তামিমের পঞ্চম সেঞ্চুরি। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে এই প্রথম শতক হাঁকালেন তামিম। যাদের বিরুদ্ধে ১১ ইনিংস খেলে ৫টিতেই অর্ধশতক আর ৩টি সেঞ্চুরি এখন তার। বাকি তিন ইনিংসে তিনি করতে পেরেছেন ১৪, ২ ও ৯। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র চারটি সেঞ্চুরি পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তামিম ছাড়া আরেকটি শতক পেয়েছেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। ২০১০ সালের মার্চে তিনি চট্টগ্রামে ১০৬ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন।
×