ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ’

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

‘শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ’

রুমেল খান ॥ শুক্রবার, দুপুর। শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়াম। এক নম্বর কোর্ট। সামার ওপেন (র‌্যাঙ্কিং) ব্যাডমিন্টনের মহিলা এককের ফাইনাল। সেনাবাহিনীর এলিনা সুলতানা মুখোমুখি হবেন কাওয়াসাকি ব্যাডমিন্টন ক্লাবের শাপলা আক্তারের। মজার ব্যাপার হলো, কোর্টে নেমে শাপলা যখন পরনের জ্যাকেট খুলছেন, তখন নজরে পড়লো তার জ্যাকেটের পেছনে লেখা নিট কনসার্ন ক্লাব, যেটা তার সাবেক ক্লাব! তাহলে কি পুরনো ক্লাবের মায়া এখনও কাটাতে পারেননি শাপলা? ফাইনাল শুরুর আগে অনেকের কাছেই শোনা গেল এবার নাকি এলিনাই ফেবারিট। প্রথম সেটে একপর্যায়ে পিছিয়ে থেকে ১৩-১২ পয়েন্টে লিড নেন এলিনা। কিন্তু ওই একবারই। দারুণ খেলে ২১-১৫ পয়েন্টে প্রথম সেট জিতে নেন শাপলা। দ্বিতীয় সেটেও একই অবস্থা। চারবার লিড নিয়ে একপর্যায়ে এলিনা ৫-২ পয়েন্টে এগিয়ে যান। তার সতীর্থ-সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধেনÑ এই বুঝি এলিনা এই সেটে জিতে সমতা আনেন। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়েবালি। বরং যখন দ্বিতীয় সেটে ৮-১১ পয়েন্টে পিছিয়ে, তখন ডান পায়ের ব্যথা বেড়ে যাওয়াতে পায়ে স্প্রে করতে দেখা যায় এলিনাকে। হাফ স্ম্যাশ, ড্রপ শট ও নেটশট খেলে তাকে ধীরে ধীরে কোণঠাসা করে ফেলেন শাপলা। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় সেটেও একই পরিণতি হয় এলিনার। হেরে যান ২১-১৪ পয়েন্টে। শিরোপার স্বাদ পান পাবনার মেয়ে শাপলা। এই নিয়ে ২০০৭-১৬ সাল পর্যন্ত সামার ওপেনে এককে ছয় বার শিরোপা জিতলেন শাপলা। শিরোপা জেতেননি ২০০৮ এবং ২০১০ সালে। আর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে টুর্নামেন্ট হয়নি। এ নিয়ে সামার ওপেন এবং জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে সাতবার ফাইনালে মুখোমুখি হলেন শাপলা-এলিনা। জয়ের পাল্লা ভারি শাপলারই। তিনি জিতেছেন চার ফাইনালে। দুটি সামার এবং দুটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। খেলা শেষ হবার অনেকক্ষণ বাদে শাপলা একটু ধাতস্থ হয়ে একটা মজার তথ্য জানালেন। তার আসল নাম শাপলা আক্তার নয়! তাহলে? ‘আসলে আমার নাম শায়লা শারমীন শাপলা। ২০০৬ সালে বিদেশে খেলতে যাবার সময় পাসপোর্ট করার সময় ছোট নামের প্রয়োজন পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে ‘শায়লা শারমীন’ বাদ দিয়ে শাপলার পর ‘আক্তার’ অংশটি যোগ করি। সেই থেকে আমার নতুন নাম শাপলা আক্তার।’ হাসতে হাসতে জানালের জাতীয় ফুলের নামে যার নাম, সেই শাপলা। ‘দুই সেটেই একপর্যায়ে পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু মনোবল হারাইনি। আত্মবিশ^াস ছিল আমিই জিতব। চেষ্টা করেছি কোচের নির্দেশনা মেনে খেলতে। এ আসরের খেলা গত দুই বছর হয়নি। তারপরও শিরোপা অক্ষুণœ রাখাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছি বলে ভাল লাগছে।’ চ্যাম্পিয়ন হবার পর শাপলার প্রথম প্রতিক্রিয়া। খেলার সময় ইনডোর স্টেডিয়ামের এসি বন্ধ ছিল। এসি অন থাকলে বাতাসে শাটল নড়ে, খেলতে সমস্যা হয়। প্রচ- গরমে এভাবেই শাপলাদের খেলতে হয়েছে পুরো টুর্নামেন্টে। অথচ অন্যান্য দেশে এমনটা হয় না। ম্যাচ শেষেই পরিবারের সবাইকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুসংবাদটি মোবাইলে জানান শাপলা। ‘সবাই খুব খুশি হয়েছে। এ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে যতগুলো পুরস্কার পেয়েছি, সেগুলো রেখেছি একটি শোকেসে। বেশিরভাগই ভরে গেছে। বাকিগুলো ভরা না পর্যন্ত খেলে যাব। শিরোপার তৃষ্ণা এখনও আছে! হা হা হা!’ আজ শনিবার বিকেলে দ্বৈতের ফাইনালে শাপলা নামবেন শিরোপা অক্ষুণœ রাখার জন্য। সঙ্গী দুলাল হালদার। প্রতিপক্ষ আবারও সেই এলিনা সুলতানা। তার পার্টনার একই দলের নাবিলা জামান। ‘ইনশাল্লাহ্ দ্বৈতেও চ্যাম্পিয়ন হব। আত্মবিশ^াসের ঘাটতি নেই।’ শাপলার উচ্চারণ। পরিশেষে জানান, ‘ভালমতোই জানি শীর্ষে ওঠার চেয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখা কঠিন।’
×