ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ ৪৯ রানেই বাংলাদেশের ৯ উইকেটের পতন, ইংল্যান্ড পিছিয়ে ১৭০ রানে

শুরুর ঝলক শেষে ম্লান

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

শুরুর ঝলক শেষে ম্লান

মিথুন আশরাফ ॥ শুরুতে কী দুর্দান্ত ব্যাটিংই না দেখা মিলল। সেঞ্চুরিয়ান তামিম ও হাফসেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল কী দুর্দান্ত ব্যাটিংই না করলেন। যেই তামিম ১৭১ রানে গিয়ে আউট হলেন, ৪৯ রানেই বাংলাদেশের ৯ উইকেটের পতন ঘটে গেল। শেষ পর্যন্ত ২২০ রানের বেশি করতে পারল না বাংলাদেশ। শুরুর ঝলক শেষে গিয়ে ম্লান হয়ে গেল। এরপর ইংল্যান্ডও প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে বিপত্তিতে পড়ল। ৪২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসল। যখন ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ৫০ রান জমা হলো, ১৭০ রানে পিছিয়ে ইংল্যান্ড, এমন সময় আসল বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টিতে খেলা যে আর হবে না, তা বোঝাই গেল। শেষ পর্যন্ত দিনটি সেখানেই শেষ হলো। বাংলাদেশের ইনিংস দিন শেষ হওয়ার আগে সমাপ্তি ঘটল। ইংল্যান্ডও ব্যাট হাতে নামল। তামিম ও মুমিনুল ছাড়া কেউই ব্যাট হাতে বাংলাদেশের হাল ধরতে পারেননি। ইংলিশরা কী করবে? এ প্রশ্ন ওঠার আগেই যেন ধুমধাম উইকেট পড়তে লাগল। বাংলাদেশের শক্তি স্পিন। সেই স্পিনই নতুন বলে বল করা শুরু করে দিল। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাকিবের বলে বেন ডাকেট (৭) আউট। মেহেদী হাসান মিরাজও কী বসে থাকবেন। ‘রিভিউ’ নিয়ে অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুককে (১৪) সাজঘরে ফেরালেন। ৪২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই গ্যারি ব্যালান্সকেও (৯) একই পথের পথিক বানালেন মিরাজ। ঢাকা টেস্টের প্রথমদিন আর ৫ ওভারও যদি খেলা হতো আরও উইকেট পড়ার সম্ভাবনাই ছিল। তা থেকে বৃষ্টি যেন বাঁচিয়ে দিল ইংল্যান্ডকে। জো রুট (১৫*) ও মঈন আলী (২*) তাই আজ দ্বিতীয়দিনে ব্যাট করতে নামার সুযোগটিও পেয়ে গেলেন। উইকেট নিয়ে যে ভাবনা, তা খেলা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। উইকেট শুষ্ক। আর এই উইকেটে যে ব্যাটিংটা দারুণ হবে, তা বোঝাই যায়। টস জেতা মানেই আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া। সেই কাজটিই করলেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। কিন্তু এমন ব্যাটিংনির্ভর উইকেটেও ভুল করলেন ইমরুল কায়েস। শর্ট বল। ওয়াইড বলও। ইমরুল করলেন কী? বলে খোঁচা দিতে গেলেন। তাতেই পয়েন্টে আউট। দলের ১ রান। ইমরুলেও অহেতুক আউট হয়ে গেলেন। টেস্টে যে কাজটি করতে হয় না, সেটিই করলেন। এমন উইকেটে ভুল করা মানেই হচ্ছে বিপদ। ইমরুল তা করলেও তামিম ও মুমিনুল কোনভাবেই সেই পথে পা বাড়াননি। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকলেন। টেস্ট মেজাজেই ব্যাটিং করতে থাকলেন। শুরুতে উইকেটে ‘থিতু’ হলেন। এরপর স্কোরবোর্ডে রানও জমা করতে থাকলেন। তামিম যেমন ১৯ বলে কোন রানই করলেন না। এরপর এক ওভারেই তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দিলেন। মুমিনুলও ব্যাটিং উইকেট পেয়ে ‘ত্যাজ’ দেখালেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেতো দুইজন মিলে ১১৭ রানের জুটিই গড়ে ফেললেন। স্কোরবোর্ডে তখন ১ উইকেটে ১১৮ রান। তামিম ততক্ষণে ক্যারিয়ারের ২০তম অর্ধশতকটি করে ফেলেন। যে ব্যাটসম্যান ১৯ বলে কোন রান নেননি, তিনিই কিনা ৬০ বলে ৫০ রান ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবার টানা ৬ ম্যাচে কোন না কোন ইনিংসে ৫০ উর্ধ রান করার রেকর্ডও গড়েছেন তামিম। মুমিনুলকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৯ রানের জুটি গড়তেই সর্বোচ্চ জুটি গড়ে ফেলেন। দুইজন মিলে সুন্দর এগিয়ে যেতে থাকেন। তামিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুমিনুলও একই পথের পথিক হতে থাকেন। ৭১ বলে ক্যারিয়ারের ১০তম অর্ধশতকও করে ফেলেন মুমিনুল। তামিমতো আরেকধাপ এগিয়ে যান। ৯৩ রান যখন হয়, মঈন আলীকে কাভার দিয়ে টানা দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান। ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট শতকও তুলে নেন। ৬৬ রানে একবার ‘রিভিউ’ নিয়ে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। ৭২ রানে আরেকবার ‘নতুন জীবন’ পান। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় শতকই তুলে নেন। দলও ৪২ ওভারের মধ্যেই ১৭১ রানে চলে যায়। সাদা পোশাকে খেলা হয়। তামিম, মুমিনুল এমন ব্যাটিংই করতে থাকেন, মনে হয় ওয়ানডে খেলা হচ্ছে। দুইজন মিলে ১৭০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। হঠাৎ করেই বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসে। একবার ‘রিভিউ’ থেকে বাঁচলেও এবার আর শেষরক্ষা হয়নি তামিমের। তামিমের স্কোরবোর্ডে ১৪৭ বলে ১২ চারে ১০৪ রান হতেই আউট হয়ে যান। মঈনের বলে এলবিডাবলিউ হন। আম্পায়ারও আউটের সিদ্ধান্তই দেন। কিন্তু তামিম ‘রিভিউ’ নেন। তাতে লাভ হয়নি। সাজঘরেই ফিরতে হয়। দুইজন মিলে ব্যাটিং উইকেটের পুরো ব্যবহার করছিলেন। তামিম আউট হতেই সব ‘ওলট-পালট’ হয়ে যায়। এরপর ব্যাটসম্যানদের সেই পুরনো চরিত্রই ফুটে ওঠে। তাসের ঘরের মতো ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙ্গে যায়। আর ৩১ রান যোগ হতেই ২০২ রানে বাংলাদেশের ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ১২ রানের ব্যবধানে নেই ৪ উইকেট! ১৯০ রানে মুমিনুল (৬৬) আউট হওয়ার পর ৬ রান যোগ হতেই দুর্বল শট খেলে মাহমুদুল্লাহ (১৩) স্লিপে আউট হন। দলের যখন ২০০ রান, এমন সময় স্টোকসের বাউন্স বলটি মুশফিকের কাঁধ ঘেঁষে মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সবার ভেতর তখন আতঙ্ক দেখা দেয়। কী হলো? একটিই প্রশ্ন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিক। কিন্তু উইকেটে সেই দাঁড়িয়ে থাকা আর বেশিক্ষণ সম্ভব হলো না। যেন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। ২০১ রানে গিয়ে লেগ স্লিপে আউট হয়ে গেলেন মুশফিক (৪)। ১ রান যোগ হতেই আবার চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের আশা দেখান পেটের ব্যথা থেকে মুক্ত হয়ে খেলা সাব্বির সাজঘরে ফিরলেন। দল পুরোই বিপদে পড়ে গেল। শুরুটা কী দুর্দান্ত হলো। অথচ মধ্যাহ্ন বিরতির পরেই সব ছন্নছাড়া হয়ে পড়ল। প্রথম সেশনে যাওয়ার আগে ১ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১১৮ রানও স্কোরবোর্ডে যোগ হয়। দ্বিতীয় সেশনের বিরতি হতেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড (২০৫/৬) রোগা হয়ে পড়ে। স্টোকস ও মঈন মিলেই বাংলাদেশকে বিপত্তিতে ফেলে দেন। এমনই অবস্থা হয়, সাকিব উইকেটে থাকলেও মনে হয় প্রথম দিনেই ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংস খেলতে নামবে ইংল্যান্ড। আর তাই হলো। মাত্র ১৫ রান যোগ হতেই বাকি থাকা ৪ উইকেটও শেষ! ১০ রান যোগ হতেই শুভাগত হোম চৌধুরীও (৬) সাজঘরে ফিরলেন। ১ রান যোগ হতেই আবার মেহেদী হাসান মিরাজও (১) আউট। ৮ উইকেটের পতন ঘটে যায়। সাকিব কিছু একটা করবেন। সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়। ২১৫ রান হতেই সাকিবও (১০) সাজঘরে ফিরেন। ২২০ রানে কামরুল ইসলাম রাব্বির আউটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসও গুটিয়ে যায়। সেই সঙ্গে মঈন ৫ উইকেট তুলে নেন। ১৭১ রানে ২ উইকেট পড়ার পর, পরের ৪৯ রানেই খতম বাকি ৮ উইকেট! এতটাই বেহাল দশা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের! তাতে করে দিনের শুরুটা বাংলাদেশের হলেও শেষটা সেই শুরুর তকমা বজায় রাখা গেল না। যদি তামিম-মুমিনুলের জুটি ভাঙ্গার পর আর ১০০ রানও স্কোরবোর্ডে যোগ হতো, তাহলে দিনটি বাংলাদেশেরই হতো। তা হলো না। শুরুর ঝলক যে ধরে রাখা যায়নি।
×