ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন নানারোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূমিহীন মোঃ ইসমাইল খান (৬৮)। গত ২৫ অক্টোবর ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে এ খোলা চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, এরপূর্বে তিনি (ইসমাইল খান) গত ২৬ মে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি সাক্ষাত করার জন্য তার কার্যালয়ের সামনে গিয়েছিলেন। ওইসময় রাষ্ট্রীয় কাজে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় ইসমাইল খান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডাক গ্রহণ ও বিতরণ শাখায় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে লেখা একটি আবেদন জমা দিয়ে এসেছিলেন। দীর্ঘদিনেও তার আবেদনের সারা না পেয়ে এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের সাকোকাঠি গ্রামের মৃত গঞ্জর আলী খানের পুত্র ইসমাইল খান চিঠিতে উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে সাত সদস্যর পরিবারের সবার অমতে দেশ স্বাধীনের জন্য তিনি একই গ্রামের সেনা সদস্য আব্দুল আজিজ হাওলাদারের উৎসাহে অন্যদের সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে গমন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল মুহূর্তে ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণের জন্য যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোঃ আউয়াল হাবিলদারের নেতৃত্বে দেশে ফেরার সময় সহযোদ্ধাদের সাথে তিনি একাধিকস্থানে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরই মধ্যে ১৯৭১ সালের নবেম্বর মাসের শেষের দিকে শ্যামনগর এলাকার একটি যুদ্ধে পাক সেনাদের ছোড়া গ্রেনেডে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। ওইসময় সহযোদ্ধা বাবুগঞ্জের কবির খান তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভারতের হাসনাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি করেন। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে পুনরায় তিনি দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আজও তার শরীরে গ্রেনেড হামলার ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর সরকারের মুক্তিবার্তা নং (লাল বই)-০৬০১১০০২৫৪, যুদ্ধাহত গেজেট নং-১৫০১, মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-৩৪২৩, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং-১৩৫২৫ অন্তর্ভুক্ত হয়ে শুরু থেকেই তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা পেয়ে সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনমতে খেয়ে পরে জীবন বাঁচিয়েছেন। একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিনি অসংখ্যবার জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছেন। ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল খান বলেন, আমি প্রায় সময়ই বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত গেঞ্জি ও টুপি পরি। গত বছরের (২০১৫ সালের) প্রথমার্ধে সাকোকাঠি মিশুকস্ট্যান্ডে বসে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত গেঞ্জি ও টুপি পরিহিত অবস্থায় আমাকে দেখে অশ্লীলভাষায় গালিগালাজ করে শাহজিরা গ্রামের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল খান ও তার সহযোগী অপর বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার। একপর্যায়ে তারা আমাকে বিএনপিতে যোগদানের আহ্বান করায় তাদের সাথে আমার তুমুল বাগ্বিত-ার জের ধরে তারা আমাকে মারধর করে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত গেঞ্জি টেনে ছিঁড়ে ফেলে। এর জেরধরে বিএনপি ও জামায়াতের দোসর মোজাম্মেল খান ও শাহজাহান হাওলাদার আমাকে ভুয়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে ওই বছরেই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন দফতরে মিথ্যা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ফলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে গত ডিসেম্বর মাস থেকে অদ্যবধি আমার ভাতা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমি এখন চরম অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সূত্রমতে, অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য অভিযোগকারীদের পক্ষে স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল খানের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন। ইসমাইল খান আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দফতর থেকে আমাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যুদ্ধকালীন জীবিত কমান্ডার, সহযোদ্ধা ও সাক্ষীদের নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিটি দফতরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যুদ্ধকালীন কমান্ডার, সহযোদ্ধা ও সাক্ষীদের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করার পর আমার পক্ষে রায় দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালকের সাথে সাক্ষাত করলে তিনি আমার সকল কাগজপত্র পর্যালোচনাসহ যুদ্ধকালীন কমান্ডার, সহযোদ্ধা ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আমার পক্ষে রায় দিয়ে বলেন, সাময়িকভাবে বন্ধ ভাতা খুব শীঘ্রই চালু করা হবে। পরবর্তীতে দীর্ঘদিনেও ভাতা চালু না হওয়ায় সম্প্রতি আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি’র বরাবরে ‘যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা চালুর দাবিতে’ আবেদন করে সরাসরি দু’বার তার সাথে সাক্ষাত করি। দু’বারই মন্ত্রী মহোদয় আমার আবেদনের যাচাই করে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। মন্ত্রীর নির্দেশের পর গত দশ মাসেও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আমার বন্ধ ভাতা চালু করা হয়নি। কোন উপায় না পেয়ে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল খান তার বন্ধ ভাতা চালু করার দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একমাত্র শক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন।
×