ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমা নেই এ পাশবিকতার

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

ক্ষমা নেই এ পাশবিকতার

অমানুষ, নরপিশাচ, পাষ-, নরাধম, নরকের কীট, বিকৃত মস্তিষ্কÑ এমন সব শব্দও উপযুক্ত নয় ওই শিশু ধর্ষকের নামের পাশে। এর চেয়ে কঠিন কোন শব্দ ব্যবহার করলেও বোধকরি মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হবে না। কেননা শিশুটিকে শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি ওই ধর্ষক, তার শরীর ধারালো অস্ত্র দিয়ে ও কামড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছে যে, মেয়ে শিশুটি ভবিষ্যতে মা হতে পারবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কোন মেয়ে শিশুর ওপর পিতার বয়সী একজন ধর্ষকের এমন নির্মমতা নিকট অতীতে ঘটেছে বলে জানা যায় না। এমন বর্বরোচিত ও নারকীয় ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এ জঘন্য অপরাধ সময় ও সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বৈকি! দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার জমিরহাট তাকোয়াপাড়া গ্রামে মাত্র পাঁচ বছর বয়সী শিশুর ওপর যে পাশবিক অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা স্তম্ভিত, বেদনাহত। ১৮ আক্টোবর শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পর বাড়ির অদূরে এক হলুদ ক্ষেতে পরদিন তাকে পাওয়া গেল ধর্ষিত-বিধ্বস্ত অবস্থায়। ধর্ষককেও প্রাথমিকভাবে মোটামুটি চিহ্নিত করা গেছে। সে ওই গ্রামেরই চল্লিশোর্ধ মাদকাসক্ত সাইফুল ইসলাম। পুলিশ তাকে আরেক সহযোগীসহ আটক করেছে। অভিভাবক ও স্বজনরা মেয়েটিকে খুঁজতে গেলে ধর্ষক সেখানে বিভ্রান্তি ছড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি স্বাভাবিক ও স্বীকৃত চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাধা দিয়ে আইনের আরেকটি ধারা লঙ্ঘন করেছে। বিষয়টি নির্মমতার আরেকটি নমুনা। মানবিকতার চিরন্তন নিয়মানুযায়ী শিশুর প্রতি বড়দের স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালবাসা থাকবে এটাই স্বাভাবিক ও বাঞ্ছনীয়। শিশুরাও বড়দের কাছ থেকে এমনটা চায়। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তা হলে বুঝতে হবে সেটা অস্বাভাবিক ও অসুস্থতা। সেই অসুস্থতা যদি ছড়িয়ে পড়ে তখন তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়। দিনাজপুরের শিশুটির ওপর যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটল সেটা সামাজিক অবক্ষয়ের এক খ-চিত্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা সম্প্রতি বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। এ সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণ নারী বা নারী শিশুকে শুধু অবমাননাই করে না জীবন্মৃত পর্যায়ে নিয়ে যায়। দুষ্ট পুরুষের ক্ষণিকের অপরাধের কলঙ্ক ও বেদনা সারাজীবন তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। এ বেদনা অপার। এমন বাস্তবতা উদ্বেগের বিষয়। সমাজে নারী ও নারী শিশুর নির্বিঘেœ চলাফেরা ও বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিরাপদ এবং নিশ্চিত না হলে প্রগতির পথ রুদ্ধ হতে পারে। নারী ও শিশু নির্যাতনসহ ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান দৃঢ় ও কঠিন। কিন্তু এমন নির্মম ও বর্বরোচিত ঘটনার জন্য আছে আইনের সীমাবদ্ধতা। অপরাধীর আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনাজপুরের মেয়ে শিশুটির ওপর এমন নির্যাতনের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। দৃষ্টান্তমূলক না হলে এ জাতীয় অপরাধীদের আস্কারা বেড়ে যেতে পারে। এমনটা কারও কাম্য হতে পারে না।
×