ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও বিএনপির পরাজয়

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও বিএনপির পরাজয়

আবারও ভুল করল বিএনপি। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যাবার আমন্ত্রণ গ্রহণের পর এমন একটা ধারণা হয়েছিল এবার বোধ করি বরফ গলবে। রাজনীতিতে যে শিষ্টাচার ও ভদ্রতাবোধ সেটা প্রায় বিলুপ্ত। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ তার এবারকার কাউন্সিলে বিএনপিকে কিভাবে দাওয়াত দেয়, আদৌ দেয় কি না, সেটা ছিল দেখার বিষয়। বঙ্গবন্ধুর দল সে ভুল করেনি। তারা নেতা পাঠিয়ে চিঠি দিয়ে দাওয়াত জানিয়েছিল। বিএনপির পক্ষে তাদের মহাসচিব সে দাওয়াত গ্রহণ করে বলেছিলেন দেখছি, আমরা যেতে পারি কি না। ধারণা করা হচ্ছিল রাজনীতির মাঠে উধাও প্রায় বিএনপি এই সুযোগ গ্রহণ করে তাদের হারানো ইমেজ পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। কিন্তু যে লাউ সেই কদু। তারা যায়নি। মনে হলো এককালের বয়সী মুসলিম লীগার ও ভাসানীর দলের নেতারা চলে যাবার পর বিএনপিতে আসলেই কোন অভিভাবক বা বিচক্ষণ নেতা নেই। নেই যে তা পরে গয়েশ্বর বাবু ও ফখরুল সাহেবের জবানীতেই স্পষ্ট। গয়েশ্বর বলেছেন তাদের যাওয়া না যাওয়া কোন জাতীয় সমস্যা না। দেশের প্রধান রাজনৈতিক সমস্যা তার মতে গণতান্ত্রিক আচরণের অভাব। গণতন্ত্র না থাকাকেই তারা মূল সমস্যা মনে করছেন। এটাই যদি মনের কথা হতো তাহলে তাদের যাওয়াটাই ছিল কাজের কাজ। সরকারী দল যে গণতন্ত্রবিরোধী সেটা তো গিয়েই প্রমাণ করতে পারতেন। উল্টো আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে দিল তারা গণতান্ত্রিক আচরণ করে বিএনপিকে ডাকল আর আপনারা ঘরে লুকিয়ে রইলেন। বুঝলাম আপনারা অতীতে তাদের পাননি। কিন্তু ডিমের খোলস তো কারও না কারও ভাঙতে হবে। ঠেকা যখন আপনাদের তখন আপনাদেরই তা করা উচিত ছিল। করেননি। এদিক থেকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের বিরাট লাভ তাদের প্রতিপক্ষকে অনায়াসে ধরাশায়ী করা। কাউন্সিলের ভেতর দিয়ে সত্তর বছর ছুঁই ছুঁই দলটি এও বুঝিয়ে দিয়েছে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে বিএনপি কোন ইস্যু হতে পারেনি। বরং তাদের নিজেদের ভেতর কে সম্পাদক হবেন সেটাই ছিল মুখ্য বিষয়। বিগত দিনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ থাকবেন কি থাকবেন না এটাই ছিল দেশ-বিদেশের হট টপিক। কোনদিন এমন আগ্রহ বা উত্তেজনা দেখিনি। এই ভদ্রলোক তেমন উচ্চকিত কেউ ছিলেন না। প্রগলভ আর জোরে কথা বলার রাজনীতিতে মিতভাষী অনুচ্চ স্বরের আওয়ামী লীগার। অথচ কি দারুণ পপুলারিটি। মনে পড়ে এদেশের বহুল প্রচলিত দৈনিকের আলোচিত আওয়ামী ও শেখ হাসিনাবিরোধী সম্পাদকের ফাঁস হয়ে যাওয়া অডিও টেপটির কথা। আমার এক বন্ধু সাংবাদিক, যিনি ঐ কাগজেরই লোক, তাঁকে সম্পাদক টেলিফোনে বলেছিলেন সৈয়দ আশরাফকে নাকি সাইজ করা হবে। সরকারী দল, বিশেষত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এরপরও তিনি এ নিয়ে জল ঘোলা করেননি। হুংকারও ছাড়েননি। আপন বিনয় ও নীরবতায় তাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তারা কিছু করতে পারবেন না। এমন একজন মানুষ যিনি আওয়ামী দুর্গে অজস্র ভক্তের জন্ম দিয়ে গেছেন। বলছিলাম একক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে খেলতে দিয়ে বিএনপি নিজের পাশাপাশি জাতিরও ক্ষতি করছে। মুশকিল এই, তাদের বিদায় করে নতুনভাবে শুরু করার দলও নেই ময়দানে। বামধারার দলগুলো এখন একেবারে অকেজো। দু’একটা ইস্যুতে কথা বললেও আসলে জনগণের কাছে নেই তারা। বদলে যাওয়া দুনিয়ার সঙ্গে চলার শক্তি নেই অথবা গতিহীনতাই তাদের কাল। প্রধানমন্ত্রীর কথামতো আরও একবার তাঁর সরকারের প্রয়োজন আছে বৈকি। সঙ্গে এটাও চাই নানা বিষয়ে অনিয়মে কথা বলার দল থাকুক। রক্ত ও শ্রমে পাওয়া গণতন্ত্র বজায় রাখতে এর কোন বিকল্প নেই। বিএনপি আরও একবার প্রমাণ করল তারা গদির দল। মাঠে অকেজো। কেবল নেগেটিভ ভোট আর ছদ্মবেশী রাজাকার-মুসলিম লীগারদের সমর্থনে বেশিদূর যাওয়া যায় না। তাছাড়া বেগম জিয়ার ক্যারিশমাও শেষ। শেষ যে তা জাফরুল্লাহ সাহেবের মতামতেই স্পষ্ট। ক’দিন আগে খালেদা জিয়ার শাড়ির ভাঁজ ঠিক করতে পায়ের কাছে বসে থাকা ইনি আওয়ামী কাউন্সিলের পর তাঁকে একহাত নিতে ছাড়েননি। মানসিক ভারসাম্যের কথাও তুলেছেন। এটা নিশ্চিত বিএনপির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের পাশাপাশি একটি গঠনমূলক কার্যকর বিরোধী দলও কি আওয়ামী লীগকেই ঠিক করে দিতে হবে?
×