ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরেক ঠাণ্ডা লড়াই চায় না ন্যাটো ॥ স্টলটেনবার্গ

নয়া সমরশক্তি দেখাচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

নয়া সমরশক্তি দেখাচ্ছে রাশিয়া

সিরিয়া ও বাল্টিক অঞ্চলে রাশিয়ার সাম্প্রতিক সৈন্য মোতায়েনের ঘটনায় দেশটির নতুন সামরিক শক্তি ও অনেক অঞ্চলে একসঙ্গে সামরিক তৎপরতা চারানোর ইচ্ছাই প্রকাশ পেয়েছে। মার্কিন ও ন্যাটো কর্মকর্তারা একথা জানান। এদিকে পশ্চিমা সামরিক জোটের মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্স বিবিসিকে বলেছেন, ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত বা আরেকটি নতুন ঠা-া লড়াই চায় না। তিনি বলেন, পূর্ব ইউরোপে আরও ৪ হাজার সৈন্য মোতায়েন পরিকল্পনার এর লক্ষ্য সংঘাত উস্কে দেয়া নয়, বরং তা রোধ করা। তিনি আরও বলেন, বর্তমান উত্তেজনা সত্ত্বেও সামরিক জোট রাশিয়াকে কোন হুমকি হিসেবে দেখছে না। পশ্চাত্য ও রাশিয়ার সম্পর্ক এখন ঠা-া লড়াইয়ের পরবর্তী সময়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। খবর বিবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। বিমানবাহী জাহাজ এ্যাডমিরাল কুজনেতসভের নেতৃত্বে সিরিয়া অভিমুখী রুশ নৌবহর ওই সংঘাতের ওপর কোন বড় রকমের প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। রাশিয়ার বিমানবাহিনী বা স্থলবাহিনী যতখানি আধুনিক করা হয়েছে, এর নৌবাহিনী ততখানি আধুনিক করা হয়নি। আর কুজনেতসভ সীমিত বিমান শক্তিই বহন করতে পারে। কিন্তু নৌবহর মোতায়েন আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। রাশিয়া ন্যাটোর ভেতর উত্তেজনা জাগিয়ে তুলে। স্পেন প্রথমে কয়েকটি জাহাজে আবার জ্বালানি ভরতে রাশিয়াকে অনুমতি দিলেও মাদ্রিদের ওপর অনুমতি প্রত্যাখ্যানের চাপ বাড়লে মস্কো তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। বহরটি উত্তর আফ্রিকার অদূরে নোঙর করে নতুন করে জ্বালানি ভর্তি করে বলে জানা যায়। বহরটির সঙ্গে তেলবাহী দুটি ট্যাঙ্কার রয়েছে। রাশিয়া যখন বহু অঞ্চলে এর সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করছে, তখন সিরিয়ায় নৌবহর পাঠানো হলো। রাশিয়া বাল্টিক সাগরে আরও জাহাজ পাঠাচ্ছে এবং ক্রিমিয়াতে পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে। ন্যাটোও বাল্টিক ও কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে এর নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলছে। সদস্য দেশগুলো চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলস বৈঠকে নতুন নতুন সৈন্য দল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। ব্রিটিশ ও জার্মান ট্যাঙ্ক বহর বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। কানাডা ৪৫০ সৈন্য ও হালকা সাঁজোয়া বহর পাঠাবে। ন্যাটোতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আরেকজান্ডার গ্রাশকো বলেন, সামগ্রিকভাবে ন্যাটো ও সদস্য দেশগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং রাশিয়ার সীমান্তে বার বার সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। গ্রাশকো বলেন, সংলাপের আগ্রহ নিয়ে কথাবার্তা সত্ত্বেও বর্তমান পর্যায়ে আসলে ন্যাটোর লক্ষ্য হলো রাশিয়াকে সামরিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঘিরে ফেলার নীতি উদ্ভাবন ও শক্তিশালী করা। ইউরোপের সুপ্রীম এ্যালাইড কমান্ডার মার্কিন আর্মি জেনারেল কার্টিস স্ক্যাপারোটি বুধবার ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের রাশিয়ার সামরিক শক্তি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি রাশিয়ার সামরিক আধুনিকায়ন, কমান্ড সংস্কার, পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং কালিনিনিগ্রাড ছিটমহল বন্দরে এ রূপ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের কথা উল্লেখ করেন। জেনারেল স্ক্যাপারোটি বৃহস্পতিবার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, আমরা রাশিয়ার সামরিক কায়দা কানুন লক্ষ্য করছি, যা পরিমাণ পরিধি, বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য ও স্বচ্ছতার দিক দিয়ে আমাদের কায়দা-কানুন থেকে ব্যাপকভাবে পৃথক। নতুন নতুন বিমান, আরও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ও উৎকৃষ্ঠতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্যদের পেছনে বিনিয়োগ করা ছাড়াও রাশিয়া ঠা-া লড়াইয়ের কৌশল ছুড়ে ফেলে দিয়ে এর সামরিক মতবাদ ও কর্মপদ্ধতিকে ঢেলে সাজিয়েছে। তারা সিরিয়ায় সৈন্য মোতায়েন এবং ন্যাটোর সীমান্তে সেনা মহড়া অনুষ্ঠান উভয়ের সাহায্যে সামরিক শক্তি প্রয়োগের আরও আধুনিক ও কার্যকর উপায় প্রদর্শন করেন। মার্কিন ও ন্যাটো কর্মকর্তারা একথা বলেন। সিরিয়ায় সৈন্য মোতায়েন এবং পৃথকভাবে বাল্টিক সাগরে আরও দুটি যুদ্ধজাহাজ পাঠানো উভয়েই বহু অঞ্চলে একসঙ্গে সামরিক শক্তি প্রয়োগে রাশিয়ার সামর্থ্যরে প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মার্কিন ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা একথা বলেন। কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, রাশিয়া সমুদ্র থেকে নিক্ষেপণ যোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র তৈরি করেছে। এতে দেশটির ক্রমবর্ধমাণ সামরিক শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
×