ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গীতাঞ্জলির যুগপূর্তিতে তিন গুণীজনকে সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

গীতাঞ্জলির যুগপূর্তিতে তিন গুণীজনকে সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের স্রোতে প্রতিষ্ঠার এক যুুগে পদার্পণ করল সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি। যুগপূর্তি উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে তিন দিনব্যাপী বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসবের সূচনা হলো শুক্রবার। উদ্বোধনী দিনে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিন গুণীজনকে প্রদান করা হলো গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক। সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্বরা হলেন বরেণ্য শিল্পী শিল্পী রফিকুন নবী, কবি আসাদ চৌধুরী ও নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। স্মারক প্রদানের পাশাপাশি পদকের সম্মানী হিসেবে তাদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরার ৬ নং সেক্টরের স্কিটি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি তিন গুণীর হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান, রূপালি প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ খোকা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাহবুব আমিন মিঠু। সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে রফিকুন নবী বলেন, আমি ছবি আঁকার মানুষ; ছবির মাধ্যমেই কথা বলার চেষ্টা করি। আজ খুব ভাল লাগছে এ সম্মাননা পেয়ে। কারণ, সব পুরস্কারই আগামী দিনের কর্মপ্রবাহের উজ্জীবনী হিসেবে কাজ করে। আসাদ চৌধুরী বলেন, রবি ঠাকুরের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতাঞ্জলি নামটি। সেই নামের সঙ্গে যুক্ত এ পুরস্কারটি পেয়ে খুব ভাল লাগছে। এদিনের সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিল সকাল বেলার পাখি শীর্ষক শিশু-কিশোরদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। এছাড়া তিন দিনের আয়োজনে থাকছে বার্ষিক সনদপত্র বিতরণী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মঞ্চনাটক ‘মুনীর চৌধুরী’-র প্রদর্শনী। আজ শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। এরপর বেশ কিছুদিনের বিরতি শেষে উৎসবের সমাপনী আসরটি হবে শিল্পকলা একাডেমিতে। ১৮ নবেম্বর সন্ধ্যায় সে আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। রবিরশ্মির বর্ষপূর্তির আয়োজন ‘আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা’ ॥ সময়ের পথ পরিক্রমায় প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পূর্ণ করল রবীন্দ্রসঙ্গীত সংগঠন রবিরশ্মি। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ বর্ষপূর্তি উদ্্যাপনের আয়োজন করা হয়। শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে ‘আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবি ঠাকুরের পূজা, প্রেম ও প্রকৃতিসহ নানা পর্যায়ের গানে সাজানো হয় আয়োজন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রবিরশ্মির পরিচালক শিল্পী মহাদেব ঘোষ। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ ও রবিরশ্মির প্রধান উপদেষ্টা অনুপ ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় সম্মেলক ও একক গান, আবৃত্তি এবং নৃত্য । শুরুতেই ছিল সম্মেলক গান ‘আপনারে দিয়ে রচিলিরে’। এরপর সমবেত কণ্ঠে আরও গীত হয় ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ ও ‘নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা’। একক কণ্ঠে রুপদা রহমান মৌ পরিবেশন করেন ‘আমার না বলা বাণী’, সুষ্মিতা হোসেন শোনান ‘ওই শুনি যেন চরণ ধ্বনি রে’, তন্বী বিশ^াস শোনান ‘যে ছিল আমার স্বপন চারিণী’। এভাবেই গানে গানে এগিয়ে যায় আয়োজনটি। গানের পাশাপাশি ‘মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো’ ও ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিমুল মুস্তাফা। ঢাকার চলচ্চিত্রের হীরক জয়ন্তী ॥ এই ভূখ-ে চলচ্চিত্রশিল্প যাত্রার সূচনা হয় ১৯৫৬ সালে। নির্মিত হয় আবদুল জব্বার খানের সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। সেই সুবাদে এ বছরে পূর্ণ হলো ঢাকার চলচ্চিত্রের ৬০ বছর। এ উপলক্ষে বাঙালী সমগ্র জাদুঘরের আয়োজনে ঢাকার চলচ্চিত্রের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় বিগত ষাট বছরে নির্মিত বাংলা ছবির অংশ বিশেষ নিয়ে নির্মিত কোলাজ। চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন দুর্লভ স্মারক নিয়েও অনুষ্ঠিত হয় পৃথক প্রদর্শনী। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলমের গাওয়া গানে আয়োজনটিতে যুক্ত হয় ভিন্ন মাত্রা। তিনি গত শতকের ষাট ও সত্তরের বাংলা ছবির জনপ্রিয় বেশ কিছু গান গেয়ে শোনান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মানবাধিকারকর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, চিত্রনায়ক ফারুক প্রমুখ। হীরক জয়ন্তীর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াত। প্রয়াত চলচ্চিত্রকার এম আবদুস সামাদের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার মসিহউদ্দিন শাকের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাঙালী সমগ্র জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক তারিক রহমান সৌরভ। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে প্রদর্শিত হয় জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ও সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ প্রদর্শিত হয়। জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ॥ দুর্বৃত্তদের রোষানলে অকালে প্রাণ হারায় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। তার ২১তম জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় সারাদেশের ১২০০ প্রতিযোগী এবং রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৩০০ প্রতিযোগী। চিত্রাঙ্কন ও রচনার তিনটি বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রতিটির প্রথম স্থান অর্জনকারীদের প্রদান করা হয় ‘ত্বকী পদক’। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের স্মারক, সনদপত্র প্রদানের পাশাপাশি প্রতি বিভাগের সেরা ১০ জনকেও স্মারক, সনদ ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। চিত্রাঙ্কনে ক বিভাগে রাফিয়া তাহসীন ত্বাহা (নারায়ণগঞ্জ), খ বিভাগে রাইয়ান আলম রাফিন (নারায়ণগঞ্জ) ও গ বিভাগে আফিয়া বিনতে সিরাজ (নারায়ণগঞ্জ) পেয়েছেন ত্বকী পদক। রচনায় ক বিভাগে তাসনিম আলম রামিসা ( মেহেরপুর), খ বিভাগে আশফিকা রহমান (ময়মনসিংহ) ও গ বিভাগে রক্তিম কুমার মিলন (লালমনিরহাট) পেয়েছেন ত্বকী পদক। নজরুল মেলার দ্বিতীয় দিন ॥ বৃহস্পতিবার ছোটদের গান দিয়ে শুরু হওয়া ব্র্যাক ব্যাংক-নজরুল মেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবারের আয়োজন শেষ হয় প্রখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনার মাধ্যমে। নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ আয়োজিত তিন দিনের মেলার শেষ দিন আজ শনিবার। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনের সুসজ্জিত মঞ্চে বসে শুক্রবার নজরুলের নানা আঙ্গিকের গান শোনান ক্ষুদে শিল্পীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন আবরার আল ফাহাদ, কানিজ খাদিজা তিন্নি, মূর্চ্ছনা বিনতে বিপ্লব, তাসনিম আনাম রাইসা, যারীন সাদাফ বৈশাখী, তনিমা ইসলাম তারিন, নুজহাত সাবিহা পুষ্পিতা, সানজিদা ইসলাম সেতু, অনিন্দিতা সাহা ও তাবাসসুম। ছোটদের পরিবেশনার পর ছিল পরিষদের বিভিন্ন জেলা কমিটির সদস্যদের পরিবেশনা। নজরুলের গান গেয়ে শোনান পাবনার আবুল কাশেম, চুয়াডাঙ্গার নিশাত শারমিন, ফেনীর সাজিয়া সুলতানা পুতুল, কক্সবাজারের শ্রাবন্তী ধর, নারায়ণগঞ্জের সুপর্না সাহা প্রমুখ। সন্ধ্যার পর ছিল বরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনা। যাতে শুরুতেই ‘চল চল’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে সাদিয়া ইসলাম মৌ ও তার দল। একক আবৃত্তি করে বাচিকশিল্পী মাহিদুল ইসলাম। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, মফিজুর রহমান, অনিন্দিতা চৌধুরী, সঞ্জয় কবিরাজ, তানজিনা করিম, শাহীন কবির, প্রিয়াঙ্কা গোপ, শেখ জসিম, রুমি আজনবী, বিপাশা গুহঠাকুরতা ও জাবুল ইসলাম। সব শেষে গান শোনান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত মোস্তফা। তার গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। জাদুঘরে প্রমোদ দত্তের সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ শুক্রবার শিল্পী প্রমোদ দত্তের একক সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী প্রমোদ দত্তের গান মুক্তিযুদ্ধ শিবির থেকে ধারণ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অংশ হিসেবে এ সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
×