ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে কোর্টহাজত

পুলিশের মোবাইল বাণিজ্য, কথা বলার সুযোগ আসামিদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

পুলিশের মোবাইল  বাণিজ্য, কথা  বলার সুযোগ  আসামিদের

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম আদালতের কোর্টহাজত ও উত্তর পার্শ্বের বারান্দাকে ঘিরে চলছে পুলিশের মোবাইল বাণিজ্য। কোর্ট হাজতের দায়িত্বে থাকা পুলিশের মোবাইল থেকেই আসামিদের কথা চলছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আসামিদের এভাবে অবৈধ মোবাইল সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু পুলিশ সদস্যরা। এ অবৈধ আয়ের পার্সেন্টেজ চলে যায় কোর্ট পুলিশের দায়িত্বে থাকা কর্ণধারদের কাছেও। অভিযোগ রয়েছে, কোর্ট পুলিশের কারণে খুনী, চাঁদাবাজ ছাড়াও মাদক ও কোকেন মামলার আসামিরাও সুবিধা নিচ্ছে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে। কোর্ট হাজতকক্ষের চারপাশ ঘুরে দেখা গেছে, কোর্ট হাজতের সামনের দিকে ব্যাপক নিরাপত্তা বেষ্টনী। কিন্তু চট্টগ্রাম আদালতের নতুন ভবনের নিচতলায় থাকা মেট্রো হাজতখানার পেছনের বারান্দায় আসামিরা আরাম-আয়েশে বসে বিভিন্ন ধরনের আহারসহ ধূমপানে ব্যস্ত থাকে। এসব আসামি কয়েক দফায় কনস্টেবল সুমনের (নং-২০৯০) মোবাইল (০১৮১৬১২৮৩২৭) থেকে কথা বলছে। এ ঘটনায় সহায়তা করেছে হাজতখানার দায়িত্বে থাকা হাবিলদার ও এসআই সাইফ, এএসআই শাহজাহান। কনস্টেবল মোতাহের (মোবাইল নং-০১৮১৭৭৬৯৮৭৬), কনস্টেবল মনির হোসেন প্রকাশ কবিরাজ (মোবাইল নং- ০১১৯৯২৪৯১৮৪), কনস্টেবল হান্নান প্রকাশ হান্নান ভাই (মোবাইল নং-০১৮১৯৬২৩৩০৩) কোর্টহাজত থেকে আসামিদের বিভিন্নজনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে দিয়ে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। তবে এর মধ্যে কনস্টেবল মনির বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল এলাকার চন্দ্রনগরে জায়গা ও বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই ভাবে কনস্টেবল সুমন কান্তি দে প্রতিনিয়ত আসামিদের কথা বলার জন্য মোবাইলের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। এসআই সাইফ সম্পর্কে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাইফ হালিশহর থানায় কর্তব্য পালনকালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্লোজড হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন দামপাড়া পুলিশ লাইনসে ক্লোজড অবস্থায় থাকার পর কোর্ট হাজতে যোগদান করেছেন কয়েক মাস আগে। কিন্তু সেখানেও চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থেকে প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন। আদালতের দায়িত্ব পালনেও আসেন নিজের প্রাইেভেটকারে চড়ে। প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত (আদালতে হাজিরার সময় ব্যতীত) হাজতখানার পেছনের বারান্দায় মেট্রো হাজতের দায়িত্বে থাকা এসআই সাইফ থেকে আসামিরা বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব আসামি নিজেদের আত্মীয়স্বজন ছাড়াও কয়েকজনের সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে কথা বলে। একই আদালত ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে থাকা জেলা পুলিশের হাজতখানার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, আসামির নাম-পরিচয় বলার পর সাক্ষাতের বিপরীতে কত সময়ের জন্য থাকবেন সে বিষয়টি জেনে নিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। সেই সঙ্গে আসামিকে খাওয়ানোর জন্য কোন ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে কি-না সে অনুযায়ী অর্থ আদায়ের মাপকাঠিটিও ছোট-বড় হচ্ছে। কোন কোন আসামির সঙ্গে দুই-তিনজন দলবেঁধে দেখা করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।
×