ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর ৩৭নং পিলার প্রস্তুত ॥ শীঘ্রই বসবে প্রথম সুপার স্ট্রাকচার

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

পদ্মা সেতুর ৩৭নং পিলার প্রস্তুত ॥ শীঘ্রই বসবে প্রথম সুপার স্ট্রাকচার

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর একটি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেটি হলো ৩৭ নম্বর পিলার। এই পিলারের ছয়টি পাইলই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। কাজ চলছে ৩৮ নম্বর পিলারের। দ্রুত এগিয়ে চলছে এর পাইলিংয়ের কাজ। এই পিলারের চারটি পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি পাইলিংয়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম সুপার স্ট্রাকচারটি স্থাপিত হবে। এছাড়া দ্বিতীয় স্প্যানটি বসানো হবে মাওয়া প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের উপর। এ দুটি পিলারের তিনটি করে পাইলিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ দুটি পিলারের অবশিষ্টাংশের কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে মাওয়ার আরও কাছাকাছি চলে এসেছে চার হাজার টন ক্ষমতার ক্রেন। মালয়েশিয়ার কাছে এখন এটি। সমুদ্রপথে চীন থেকে আসছে এই ক্রেন। ক্রেনটি মাওয়ায় পৌঁছার পরপরই পাল্টে যাবে দৃশ্যপট। পদ্মা সেতুর কাজে ব্যবহৃত এটিই সবচেয়ে ভারি যন্ত্র। এই ক্রেন দিয়েই দৃশ্যমান হবে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর এক স্প্যান পরিমাণ (১৫০ মিটার) সুপার স্ট্রাকচার ক্রেনই তুলে নিয়ে পিলারের মধ্যে বসিয়ে দেবে। এক স্প্যান সুপার স্ট্রাকচারের ওজন প্রায় দুই হাজার ৯শ’ টন। আর এই ক্রেনের ধারণক্ষমতা চার হাজার টন। তাই সুপার স্ট্রাকচারটি অনায়াসেই বসিয়ে দিতে পারবে। গত ১২ অক্টোবর চীনের জোহাও থেকে মাদার ভেসেলে করে সমুদ্রপথে এটি রওনা হয়েছে। নবেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে ক্রেনটি মাওয়ায় পৌঁছার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, বর্ষার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা সেতুর কাজের গতি বেড়ে গেছে। চতুর্দিকে এখন কাজের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে। সেতুর প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজের গতি বেড়েছে। ইতোমধ্যেই ৩৭ নম্বর পিলারের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ৩৮ নম্বর পিলারের পাইলিংও শেষের পথে। সেতুর নক্সা পরিকল্পনা অনুযায়ী উপরের অংশের সোনালি রঙের দুটি স্প্যানের মধ্যে ৩৪টি জয়েন্ট হবে। ওয়ার্কশপে এখন পর্যন্ত চারটি জয়েন্টের কাজ শেষ হয়েছে। একেকটি জয়েন্টের ওজন ৪৮ থেকে ৬০ টন। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারে ছয়টি করে মোট ২৪০টি পাইল থাকবে। আর দুই প্রান্তে আরও ১২টি করে ২৪টি পাইল থাকবে। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, দুটি পিলারের উপর ¯প্যান-গার্ডার বসিয়ে দেয়া হবে। স্প্যান একটার পরে একটা করে ৪২টি পিলারের উপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ ৪১টি স্প্যান বসিয়ে দেয়ার পর দৃশ্যমান হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। মাওয়ায় কুমারভোগে পদ্মা তীরের অদূরে ট্রাস ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে সেতুর উপরিভাগের সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) জয়েন্টের কাজ চলছে। চীন এবং বাংলাদেশের শ্রমিকরা যৌথভাবে সেতুর জয়েন্ট, সেকশন, গার্ডার, টপকর্ড ও বটমকর্ড প্রতিটি অংশেই অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এখন পর্যন্ত ৩২ শতাংশ এগিয়েছে। ভায়াডাক্টের সাতটি পিলার হয়ে গেছে। আরও ২০টি পিলারের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায়ই চলে আসেন সেতু এলাকায়। শুক্রবারও সেতু এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রথম স্প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) পিলারের উপর বসবে। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। নিজস্ব অর্থায়নে এগিয়ে চলছে এর কাজ। এতে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে বিশ্বে আমাদের জাতীর সম্মান জড়িয়ে আছে। এই সেতুকে আমরা অতি গুরুত্ব দিয়ে নীরবে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি। এ নিয়ে আমাদের কোন তোলপাড় নেই। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজের সার্বিক অগ্রগতির ৩৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে চলেছে পদ্মা সেতু।
×