ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজি মূল্য নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

এলএনজি মূল্য নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি

রশীদ মামুন ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মূল্য নির্ধারণে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার। দেশে এলএনজি ব্যবহার বিষয়ে ব্যাপক তোড়জোড়ের মধ্যে সরকার জ্বালানি সচিবকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের এই কমিটি গঠন করল। কমিটি অন্যদেশের সরকার অথবা সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এলএনজি ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। মহেশখালীতে পেট্রোবাংলা একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে। এর বাইরে আরও ১৩টি প্রতিষ্ঠান এলএনজি টার্মিনাল করার বিষয়ে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। এরমধ্যে দেশী একটি বিদ্যুত কোম্পানিও রয়েছে। সরকার এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের প্রধান জ্বালানির একটি হয়ে উঠবে এলএনজি। এখন বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম অনেকটা কম। সরকার মনে করছে এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করা হলে লাভবান হওয়া যাবে। জ্বালানি তেলের দর প্রতিদিন নির্ধারণ হলেও অনেকেই এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করতে আগ্রহী। কমিটিতে জ্বালানি সচিব ছাড়াও জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম এবং অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার প্রতিনিধি, একই পদমর্যাদার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, আইন ও সংসদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তিন কর্মকর্তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এই কমিটিতে থাকছেন। কমিটি কাতারের রেস গ্যাস ছাড়াও এলএনজি আমদানিতে অন্যদেশের সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এলএনজি আমদানির মূল্য নির্ধারণ করবে। কমিটি কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই মূল্য নির্ধারণ করবে। কমিটির প্রস্তাব সরকারের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। দেশে গ্যাসের বর্তমান মজুদের মাত্র আট টিসিএফ অবশিষ্ট রয়েছে। দেশের মোট প্রমাণিত মজুদ ২০ টিসিএফের মধ্যে ১২ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়ে গেছে। দেশের জ্বালানি পরিস্থিতিতে যা বড় শঙ্কার কারণ। সরকার বলছে ২০৩০ সালেই বর্তমান মজুদ শেষ হয়ে যাবে। পেট্রোবাংলা বলছে নতুন ক্ষেত্র না পেলে আর আগামী বছর শেষের দিকে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন কমতে শুরু করবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করলে ২০২০-২০২২ সালের দিকে সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। গত কয়েক বছরে দেশের স্থলভাগে বড় কোন মজুদের খবর দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। আর বাইরে বাপেক্স যে দ্বিতীয়মাত্রার জরিপ পরিচালনা করছে সেখানেও বড় কোন সুখবরের কথা কেউ বলছেন না। কেবল ভোলার পুরাতন গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ আগের ধারণার চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দাবিও কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতে কূপ খননের আগে আগাম গ্যাস আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে বিপাকে পড়েছে বাপেক্স। সরকার ২০১১ সালে কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য একটি এমওইউ সই করে। পরে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় আর চুক্তি হয়নি। এখন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করার পর আশা করা হচ্ছে ২০১৭ সালের শেষে দেশে এলএনজি আসবে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চারটি চীনা কোম্পানি সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো হলো- হুয়ানকিং কন্ট্রাক্টিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, অফশোর অয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং গুয়াডং। আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপানের মিতসুই এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, বেলজিয়ামের এক্সামার, সিঙ্গাপুরের সিমক্রপ ইউটিলিটিস প্রাইভেট লিমিটেড ও গ্লেনকোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, দক্ষিণ কোরিয়ার কেওজিএএস এবং থাইল্যান্ডের সিয়াম গ্যাস এ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া মালয়েশিয়ার দুটি কোম্পানি এবং ভারতের একটি কোম্পানি পেট্রোনেট দেশে এলনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ৪২ শতাংশ। সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশে। দেখা যায় ২০০৯ সালে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন হতো ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এভাবে গ্যাসের সংস্থান কমে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার কমছে। এলএনজিভিত্তিক তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। এর মধ্যে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি খুলনায় ৭৫০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় একটি কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজির সরবরাহ নিয়ে পরিচালনা করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে। এর বাইরে দেশের বৃহৎ বেসরকারী কোম্পানি সামিট পাওয়ার এক হাজার ৬৫০ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। তারা একই সঙ্গে একটি এলএনজি টার্মিনালও নির্মাণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দিয়েছে। এমসিপি নামে অন্য একটি কোম্পানিও ৮৫০ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। ভারতের প্রসিদ্ধ কোম্পানি রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে ৪ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার ওই প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে।
×