ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্দী জীবনের স্বাদ টাকার বিনিময়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

বন্দী জীবনের স্বাদ টাকার বিনিময়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক কারাগারে রাত কাটানোর সুযোগ পাবেন। কারাগারে বন্দী জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে তা জানতে আগ্রহীদের জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কারা অধিদফতর। যদিও এ উদ্যোগ এখনও পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ফিলিপিন্স, ভারত, আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় এ ধরনের সুযোগ বাংলাদেশেও বাস্তবায়ন করা যায় কি-না তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিষযটি নিয়ে গবেষণা শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিসাপেক্ষে সরকারের সহায়তা পেলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে কারা অধিদফতরÑ এমনটাই জানালেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। শুক্রবার দেশে প্রথমবারের মতো পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ৩ নবেম্বর জেলহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে ‘সংগ্রামী জীবনগাথা’ নামে কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জার্নির আয়োজনে আলোকচিত্র প্রদর্শনী নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন শেষে কারা মহাপরিদর্শক সাংবাদিকদের এমন ধারণা দেন। তিনি বলেন, এই কারাগারকে জাদুঘরে রূপান্তর করতে তাদের যে মূল প্রজেক্ট, তা বাস্তবায়ন করতে অন্তত তিন বছর সময় লাগবে। তারপর পুরোপুরি উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে এবং সরকারের অনুমতিসাপেক্ষেই এই ধরনের জেলে রাত কাটানোর সুযোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘ফিল দ্য জেল’ নামের এ প্রকল্পে টাকার বিনিময়ে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে রাত কাটানো এবং খাওয়ার সুযোগ মিলবে। পাওয়া যাবে বন্দী জীবনের অভিজ্ঞতা। সেই সঙ্গে জানা যাবে কারাগারের ভেতরের নিয়ম-কানুন। তবে বিষয়টি এখনও ধারণার পর্যায়ে রয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের অনুমতি ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে তারা আশাবাদী, সরকারের সদয় অনুমতি পেলে এ প্রকল্প চালু করা যাবে। তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের মধ্যে অনেকে এ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, কারাগারে থাকতে কেমন লাগে সে বিষয়টা ‘ফিল’ করতে চান তারা। আমরা হয়ত সে সুযোগটা এখানে রাখতে পারি। কারা মহাপরিদর্শক জানান, ফিলিপিন্স ও ভারতে জাদুঘরে রূপান্তরিত পুরনো কয়েকটি কারাগার সম্প্রতি পরিদর্শন করে তারা ‘ফিল দ্য জেল’ আইডিয়াটি পেয়েছেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল ভারতের হায়দরাবাদের বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শন করেছে, যেখানে এমন সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। ইফতেখার বলেন, আমরা জেনেছি, অক্সফোর্ডে নাকি এমন একটি কারাগার আছে যেটাকে কারাগারের আদল ঠিক রেখে হোটেলে রূপান্তর করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে যে কেউ অর্থের বিনিময়ে একদিন বা দুদিনের জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে যে সমস্ত নিয়ম-কানুন আছে, যে সমস্ত খাবার আছে, যেভাবে চলাফেরা করতে হয়, সব বিধিনিষেধ মেনে ভেতরে থাকার সুযোগ পাবেন। যাতে করে তারা উপলব্ধি করতে পারেন কারাগারের ভেতরে কেমন লাগে। উল্লেখ্য, নাজিমউদ্দিন রোডে ২২৮ বছরের পুরনো ঠিকানা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগারের উদ্বোধন করার পর ২৯ জুলাই নাজিমউদ্দিন রোড থেকে বন্দীদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে ওই স্থানেই সর্বসাধারণের জন্য ২ থেকে ৫ নবেম্বর পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ঘুরে দেখার সুযোগ ॥ দীর্ঘ ২২৮ বছর পর প্রথমবারের মতো সাধারণ নাগরিকদের দেখার জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের সদ্য পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক। ৩ নবেম্বর জেলহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে ১ নবেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় ৪ নেতার দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে ‘সংগ্রামী জীবনগাথা’ নামে কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জার্নির আয়োজনে কারাভ্যন্তরে ৫ দিনব্যপী এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার দুর্লভ ১৪৫টি আলোকচিত্র দেখা যাবে। উদ্বোধনের পর এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে নাগরিকগণ পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এ কারাগারটি ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। কারাগারটি পরিদর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হবে। তবে নাগরিকগণ ২ থেকে ৫ নবেম্বর পর্যন্ত কারাভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় পুরাতন এ কারাগারটির অভ্যন্তরে কারা অধিদফতর কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এ তথ্য জানান। এ সময় জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রদর্শনীর কিউরেটর এম আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) সাজ্জাদ হোসেনসহ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
×