ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাতজনকে থানায় হস্তান্তর, দুজন মুক্ত

ঢাবি ঘ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, আটক ৯

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

ঢাবি ঘ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, আটক ৯

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে নয় ভর্তিচ্ছুকে আটক করেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা তাদের আটক করে। এদের মধ্যে সাতজনকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি দাবি করে বাকি দুজনকে ছেড়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আটককৃতদের কাছে মোবাইল ফোন ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়। অভিযুক্তদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান শাস্তি দিতে অস্বীকার করেন। আটককৃতরা হলেন- তারিকুল ইসলাম, আজিজুল আবিদ খান রিফাত, আবদুল্লাহ আল মহসি, মিলন, তাওহিদুল ইসলাম, এনামুল হক, রাব্বিক হাসান মুন, তাসকিনুর রায়হান তমাল, আবু সাঈদ। এদের মধ্যে নীলক্ষেত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তারিকুল ইসলাম, কার্জন হল থেকে আজিজুল আবিদ খান রিফাত ও আবদুল্লাহ আল মহসি, কাকরাইল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে মিলন, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে রাব্বিক হাসান মুন, মোহাম্মদপুর গার্লস স্কুল থেকে তাসকিনুর রায়হান তমাল, মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে তাওহিদুল ইসলাম ও এনামুল হক। পরে তমাল এবং রাব্বিক হাসান মুনের তথ্যের ভিত্তিতে আবু সাঈদ নামে এক জালিয়াত চক্রের সদস্যকে আটক করা হয় এবং তাদের দুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, নয়জনকে আটক করা হলেও দুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের মোবাইলে এসএমএস এলেও মোবাইল হলের বাইরে ছিল। তাই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আগ্রহী ছিলেন না। ম্যাজিস্ট্রেট শুধু শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিতে অপারগ। মূলহোতারা কখনও ধরা পড়ে না। তাই ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি না দিয়েই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তিনি আরও বলেন, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। শুক্রবার সকাল দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ৫৪ ও ক্যাম্পাসের বাইরে ৪৫ স্কুল-কলেজসহ মোট ৯৯ কেন্দ্রে এই ভর্তি পরীক্ষা হয়। ১ হাজার ৫৪০ আসনের বিপরীতে মোট আবেদনকারী ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ১৭০ জন। প্রক্টর অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ॥ সকাল পৌনে ১১টায় ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে প্রক্টর অফিসে সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন সহকারী প্রক্টর এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোঃ ফজলুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তোমরা পরে আসো। আমরা (প্রক্টরবৃন্দ) এক সপ্তাহ পর এখানে মিলিত হই। একটু খোশগল্প করব। রসাত্মক কথা হবে। তোমরা আমাদের ছাত্র ও সাংবাদিক। তোমরা থাকলে আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট হয়। পরে আসো, তোমাদের সব তথ্য দেয়া হবে।’ সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে এখানে আসছে বললে সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলাম ও অধ্যাপক মোঃ ফজলুর রহমান রেগে যান। তারা বলেন, ‘বের হতে বলছি বের হও। এত কথা বলছ কেন?’ এসময় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলীও শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের কক্ষ থেকে বের হয়ে পাশের কক্ষে যেতে বলেন এবং সিঙ্গাড়া খেতে বলেন। ‘আমরা সিঙ্গাড়া খেতে আসিনি। তথ্য নিতে এসেছি।’ এ কথা বলে প্রক্টর অফিস থেকে বের হয়ে আসেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে অবহিত করেন। এ সময় অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অফিস টাইমে কিসের খোশগল্প। তোমরা প্রক্টর অফিসে যাও। তোমাদের দায়িত্ব তোমরা পালন কর। আমি বিষয়টি দেখছি। কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিকরা প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য পুনরায় প্রক্টর অফিসে গেলে তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন অধ্যাপক মোঃ ফজলুর রহমান ও অধ্যাপক রবিউল ইসলাম। অধ্যাপক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এখানে একজন স্যার তোমাদের বের হয়ে যেতে বলেছেন। তোমরা উপাচার্যকে কেন নালিশ করলে। বেয়াদব হয়ে গেছ।’ অধ্যাপক মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকতার ইথিক্স জান না তোমরা।’ উল্লেখ্য, গত বছর একটি ভর্তি পরীক্ষায় এভাবে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। পরে ওই ভর্তি পরীক্ষায় আটককৃতদের কোন রকম সাজা না দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও বিষয়টি এড়িয়ে যান প্রক্টরিয়াল টিম। শিক্ষামন্ত্রীকে বক্তব্য স্পষ্ট করতে বললেন উপাচার্য ॥ ‘নীলক্ষেত থেকে বই কিনে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়’ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এমন বক্তব্যকে স্পষ্ট করতে বললেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।
×