ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিত্রাণ সীমাবদ্ধ উদ্যোগের মধ্যে

গুলশান বারিধারার মতো আবাসিক এলাকাও হয়েছে বাণিজ্যিক

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

গুলশান বারিধারার মতো আবাসিক এলাকাও হয়েছে বাণিজ্যিক

এমদাদুল হক তুহিন ॥ কংক্রিটের নগরী রাজধানী ঢাকার পরতে পরতে অসঙ্গতি। আইনের তোয়াক্কা নেই; এখানকার আবাসিক এলাকায় হরদম গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ছায়াসুনিবিড়, সুনসান-নীরব এলাকা হিসেবে পরিচিত ধানম-ি, বিত্তশালীর বাস গুলশান, বানানী আর কূটনীতিকদের বসতি বারিধারায় যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আকাশছোঁয়া অট্টালিকায় গড়ে উঠছে; হচ্ছে ব্যাংক-বীমা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এমনকি ফার্মেসিও। অলিগলি, রাস্তার পাশের প্রায় সকল ভবনের নিচতলায় গড়ে উঠেছে মুদির দোকান। বেশিরভাগ ভবনে নেই গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যক্তিগত গাড়ি আর ফুটপাথে গড়ে ওঠা চায়ের স্টলে মানুষের ভিড় ঠেলে হাঁটাচলা দায়। সর্বত্রই মানুষের শরীরে মানুষ ছুঁয়ে যাচ্ছে। আবাসিকের স্থলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে গাড়ির জট, দূষণ হচ্ছে শব্দের। কোথাও নীরবতা নেই, কোথাও স্বস্তি নেই। সবখানেই নাগরিক অতীষ্ঠ। শুধু কি তাই ঢাকা হারাচ্ছে রাজধানীর সৌন্দর্য। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, আবাসিক এলাকার যেসব ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব ভবনের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছি। গুলশানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মনিরুজ্জামান তুষার জনকণ্ঠকে বলেন, এলাকাটি আবাসিক না বাণিজ্যিক, তা অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা মুশকিল। যে হারে প্রতিটি এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে ভবিষ্যতে আবাসিক এলাকা বলতে কিছু থাকবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। একই রকম অভিযোগ করেন বনানীর বাসিন্দা আবু জাফর খান দুলাল। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এলাকাটি আবাসিক হলেও এখন আর আবাসিক নেই। যে এলাকার প্রতিটি ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ফুটপাথে চায়ের দোকান এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে নতুন ভবন করার স্তূপাকারে রাখা হয় নির্মাণসামগ্রীÑ আর যাই হোক সে এলাকাকে আবাসিক বলা যায় না। অন্যদিকে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এমন ভবন মালিকদের নেই আইনের প্রতি তোয়াক্কা। তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ধানম-িতে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে এমন একটি ভবনের মালিকের ছেলে কাজী জাহিদুল ইসলাম দম্ভভরে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ধানম-ির ৭০ শতাংশ ভবনই এখন বাণিজ্যিক। আবাসিকের অনুমোদন নিয়ে সবাই তার ভবন বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করছে। আমিও করছি। তার দাবি, আবাসিক ভবনে অনৈতিকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালালেও তাতে কোন সমস্যা নেই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভবনের নামফলকে আবাসিক লেখা থাকলেও সেখানে রয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কোন কোন ভবনে কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পর্যন্ত চলছে। আবার কোন কোনটিতে সেবাপ্রতিষ্ঠান। আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী ও ধানম-ির ফুটপাথের মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান। আপেক্ষিকভাবে কম ব্যবহৃত রাস্তার দুপাশে রাখা আছে সারি সারি গাড়ি। মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে জটলা ও দীর্ঘ যানজট। এসব এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণে অঞ্চলগুলোতে বেড়েছে জনঘনত্ব। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সঙ্কট। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল মতিন জনকণ্ঠকে বলেন, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় নগরজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ওসব এলাকায় লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের সেবা ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ছে। তাই আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকা কোনভাবেই ঠিক নয়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চাপে আবাসিক এলাকার ঐহিত্য হারাচ্ছে ধানম-ি। এক সময়কার ছায়াসুনিবিড় নিরিবিলি এলাকাটির অর্ধেকই চলে গেছে শত শত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দখলে। প্লট বরাদ্দের শর্ত ভেঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় নিত্যকার শব্দ দূষণে এলাকার বাসিন্দার জীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানম-ির ৮ নম্বর সড়কের ৩৯/এ নামের বহুতল ভবনটি আবাসিক হিসেবে অনুমোদন নেয়া হলেও এর প্রতিটি ফ্লোরে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। জানা গেছে, ভবনটিতে ‘স্পেশালাইজড ডেন্টাল কেয়ার’ নামের ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে কয়েক বছর ধরে। ‘টপক্লিন’ নামের একটি লন্ড্রি ছাড়াও ভবনটির নিচতলায় গড়ে উঠেছে ‘ব্লু বেলি’ নামের বিউটি পার্লার। সাবেক এক প্রকৌশলীর বাড়ি এটি! এই ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তাদের কোন বেগ পোহাতে হচ্ছে না। বরং কার্যক্রম চলছে নির্বিকারে। টপকিীন লন্ড্রির এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে ব্যবসা করে আমাদের তেমন কোন লাভ হচ্ছে না। দোকান ভাড়া অনেক। বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় সামনের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয় বলে স্বীকার করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক লুৎফর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ৮ থেকে ৯ বছর যাবত ভবনটিতে হাসপাতালসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। কোনদিন কোন সমস্যা হয়নি। লুৎফর জানান, বাণিজ্যিক হিসেবে অনুমোদনের জন্য রাজউকে আবেদন করা হয়েছে। আর ভবন মালিকের ছেলে কাজী জাহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এখানকার অধিকাংশ ভবনেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। আমার ভবনেও। এতে সমস্যার কী! তার অভিযোগ, সঠিকভাবে আবাসিক এলাকার পরিকল্পনা না হওয়ায় বর্তমান অবস্থার কারণ। একই সড়কের ৩৭ নম্বর বাড়িতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি কার্যালয়। আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানায় লেখা রয়েছে ধানম-ি আবাসিক এলাকা! প্রতিষ্ঠানটির উর্ধতন কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলেও নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা এক কর্মী বলেন, আশেপাশের বহু ভবনেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। পাশের গলিতে কয়েকটি স্কুল। পার্শ¦বর্তী ভবনটিতেও (৩৯/এ) হাসপাতালসহ কোচিং সেন্টার রয়েছে। সকাল ৭ থেকে ৯ টা পর্যন্ত এই রাস্তায় প্রচ- যানজট থাকে, আবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত একই অবস্থা। এছাড়া রাস্তায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাথে চায়ের দোকানপাট গড়ে ওঠায় এলাকার আবাসিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ৮ নম্বর সড়কের মতো অন্যান্য সড়কের চিত্রও একই। এখানকার বহু ভবনেই রয়েছে এনজিও সংস্থার অফিস। ১৮ নম্বর সড়কে কথা হয় এনজিও কর্মী আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সমাজের প্রয়োজনেই আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যানজটের অজুহাত দেখিয়ে তিনি বলেন, ধানম-ির ছেলেরা তো আর গাজীপুর বা উত্তরা গিয়ে লেখাপড়া করতে পারবে না। একই স্থানে কথা হয় ড্রাইভার আবু হানিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ধানম-ির ৮, ২৮ ও ৩২ নম্বর সড়কে বেশি যানজট থাকে। বাসিন্দারা বলছেন ছায়াসুনিবিড়, সুনসান ও নীরব হিসেবে পরিচিতি থাকা এই এলাকার অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণের কারণে তারা আছেন অসহনীয় যন্ত্রণায়। অধিকাংশের দাবি, দ্রুত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়া হোক। নতুবা এলাকাটি হারাবে তার আবাসিক মর্যাদা। ধানম-ির মতো বানানীর চিত্রও প্রায় অভিন্ন। কয়েক বাসিন্দার ভাষ্যমতে, গুলশান ও ধানম-ির চেয়ে এই এলাকার চিত্র আরও নাজুক। তাদের মতে, এলাকাটি প্রায় হারিয়ে ফেলেছে তার আবাসিক পরিবেশ। প্রতিটি অলিগলিতে দেখা যায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা গেছে, বনানী ৪ নম্বর সড়কে ১০ নম্বর বাড়িটি আবাসিক হিসেবে অনুমোদন নেয়া হলেও এখানে ‘ফাইজা এ্যান্ড মম’ নামের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে এখানে কেন ব্যবসায়িক কার্যক্রমÑ তার কোন সদুত্তর করতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্বরত এক কর্মী। পাশের ভবনটিতেও চলছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানে গড়ে উঠেছে ‘প্রবাসী পল্লী ইলেক্ট্রনিক্স’। এলাকাবাসীর অভিযোগ, খেলা চলাকালীন টেলিভিশন দেখানোর ফলে দোকানটির সামনের রাস্তায় তৈরি হয় জটলা। কোন কোন ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় যানজট। ৯ নম্বর সড়কে একটি ভবনে রয়েছে ‘প্রিমিয়ার সুইট’ নামের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ১১ নম্বর সড়কে রয়েছে আড়ংয়ের আউটলেট। বনানী সুপার মার্কেট ও বানানী কাঁচাবাজারের আশপাশে আরও মারাত্মক বিপর্যয়। এখানকার ফুটপাথে চায়ের স্টল ও ভ্যানে ফলমূল বিক্রি করতে দেখা গেছে। ১২ নম্বর সড়কে গড়ে উঠেছে বনানী ক্লিনিক। পাশেই অপর একটি আবাসিক ভবনে রয়েছে ফার্মেসি। ৪ নম্বর সড়কের একটি বহুতল ভবনের নিরাপত্তারক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, এলাকাটি আবাসিক হলেও আশপাশের অধিকাংশ ভবনেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ৪ নম্বর সড়কের সি ব্লকের নাফা মেডিক্যাল সেন্টারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, পাশের ভবনেই হাসপাতাল। অল্পদূরে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এই রাস্তায় প্রচ- যানজট লেগে থাকে। বানানীর মতো একই অবস্থা গুলশানের। মূল সড়কের ভেতরের অলিগলির রাস্তার আশপাশের ভবনে রয়েছে ছোটখাটো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তবে এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন দৃশ্যমান নয়। এই এলাকার বাসিন্দা নয়ন বলেন, মূল রাস্তার পাশের সব ভবনই বাণিজ্যিক। ভেতরের বহু বাসায় গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। গুলশান, বনানী ও ধানম-ির মতো প্রতিটি আবাসিক এলাকার চিত্র প্রায় অভিন্ন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল মতিন জনকণ্ঠকে বলেন, আবাসিক এলাকার পরিবেশ রক্ষায় কেবল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করলেই ইতিবাচক ফল বয়ে আসবে না। তারা কোথায় যাবে তার পরিকল্পনা থাকতে হবে। নতুবা এক এলাকা থেকে গিয়ে আরেক এলাকায় জটলা তৈরি করবে। মোট কথা, নগরকে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য সামগ্রিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। সুন্দর ও পরিচচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে দ্রুত সময়ে ঢাকার বিশদ অঞ্চল (ড্যাপ) বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি। সামগ্রিক প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরি জনকণ্ঠকে বলেন, যারা আইন না মেনে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে। এর মধ্যে উত্তরা, বনানী, ধানম-ি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় বেশ কয়েকটি ভবনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, পরিকল্পনায় সব কিছু চিহ্নিত করা আছে। কোথায় কি ধরনের ভবন হবে তা বিশদভাবে বলা আছে। কেউ চাইলেই যেখানে সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাতে পারে না।
×