ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইংল্যান্ডের সঙ্গে শেষ টেস্ট

তামিমের শতকেই রক্ষা, বাংলাদেশ এগিয়ে ১৭০ রানে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

তামিমের শতকেই রক্ষা, বাংলাদেশ এগিয়ে  ১৭০ রানে

মিথুন আশরাফ ॥ ছয়জন ব্যাটসম্যান, তিনজন স্পিন অলরাউন্ডার ও একজন স্পেশালিস্ট স্পিনার রাখা হয়েছে একাদশে। সেইসঙ্গে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দলে আছেন একজন স্পেশালিস্ট পেসারও। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো একজন পেসার নিয়ে টেস্ট খেলতে নামল। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, পেস আক্রমণ নিয়ে কোন ভাবনা নেই। যা ভাবনা স্পিন ও ব্যাটিং নিয়ে। স্পিনাররা ইংল্যান্ডকে চেপে ধরেন। দিন শেষে যে ৩ উইকেটে ৫০ রান করল ইংল্যান্ড, সবকটি উইকেটইতো স্পিনাররা নেন। বৃষ্টিতে আর খেলা না হওয়ায় ১৭০ রানে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই এগিয়ে থাকাতো আরও বেশি রানে হতে পারত। ব্যাটসম্যানরা এ কী করলেন! তামিম যদি শতক না করতেন, তাহলেতো ২২০ রানও করতে পারত না বাংলাদেশ। তামিমের ১০৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসেইতো রক্ষা হলো। তামিমের সঙ্গে আরেকজন ব্যাটসম্যান অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। তিনি মুমিনুল হক সৌরভ। যিনি ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। বাকিরা সবাই মিলে করেছেন ৫০ রান! ব্যাটিংয়ের কি বাজে হাল। তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, শুভাগত, মিরাজ হচ্ছেন ব্যাটসম্যান। সবাই পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান। সেই হিসেবে ৯ জন ব্যাটসম্যান আছে একাদশে। তাহলেতো প্রথমদিন দূরে থাক, দ্বিতীয়দিনও বাংলাদেশের ব্যাটিং করার কথা। তা না হলেও দেড়টা দিনতো ব্যাটিংয়ে থাকবে বাংলাদেশ। তা হলো না। একদিনে তিনটি সেশন। তৃতীয় সেশন শুরু হওয়ার পর একঘণ্টা না যেতেই অলআউট বাংলাদেশ! টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয়ার পর ইমরুল (১) অহেতুক আউট হয়ে গেলেন। মাহমুদুল্লাহ (১৩) বাজে শট খেলে সাজঘরে ফিরলেন। মুশফিকের (৪) কাঁধ ছুয়ে একবার বল লাগল মাথায়। তা থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যাট হাতে বেশিদূর যেতে পারলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। পেটের ব্যথা থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকা টেস্টে খেললেন সাব্বির (০)। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের সেই চমক মিলল না। শুভাগতকে (৬) নিয়ে আশায় বসবাস করেন কোচ। কোন কাজ হলো না। মিরাজ (১) বল হাতে যতটাই সরব, ব্যাট হাতে ততটাই নীরব। সাকিব (১০) ব্যাট হাতে আবারও ‘ফ্লপ’। পেসার রাব্বির (০) কী আর দলকে বেশিদূর নেয়ার সক্ষমতা আছে? তাইজুলই শুধু ৫ রানে অপরাজিত থাকলেন। বাকিরা সব আউট। যাদের আউটগুলো নিয়ে এত আলোচনা, এরমধ্যে ইমরুল শুধু দলের স্কোর যখন ১, তখন আউট হলেন। বাকিরা সবাই ১৭১ রানের পর থেকে ২২০ রান হতে ৪৯ রানেই আউট। বাংলাদেশের শেষ ৯টি উইকেটই পড়ল ৪৯ রানে। যদি ১৭১ রানের আগে এ হাল হতো, তাহলে কি বিপদই না ঘাড়ে চেপে বসত। তা হতে দেননি তামিম। ইমরুল আউটের পর মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে চলেন। দুইজন মিলে এমনই ব্যাটিং করতে থাকেন, মনে হয় টেস্ট খেলা নয়, হচ্ছে সাদা-পোশাকে ওয়ানডে খেলা। শুরুতে একটু ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। ৪ ওভারে ১ রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়। ৫ ওভারে গিয়ে জমা হয় ৯ রান। এই সময়ের মধ্যে তামিম ১৯ বলে কোন রান করেননি। যা রান নেন মুমিনুলই। এরপর যে দ্রুতই রান তোলা শুরু হয়, ১২ ওভারেই ৫২ রান হয়ে যায়। দেখতে দেখতে ২৩ ওভারে গিয়ে দলের স্কোরবোর্ডে ১০০ রানও জমা হয়ে যায়। এরমধ্যে তামিম অর্ধশতকও করে ফেলেন। দুইজন মিলে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে জুটিটি ১০০ রানেও নিয়ে যান। কি দারুন ব্যাটিং করতে থাকেন দুইজন। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে ১ উইকেটে ১১৮ রান করে বাংলাদেশ। দুইজন মিলে ১১৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিটিও গড়েন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর তামিম আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ও নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক করে ফেলেন। মুমিনুলও এরমধ্যে অর্ধশতক পেয়ে যান। যে উইকেট দেখা গেছে সেটা ব্যাটিং উইকেট। তাতে করে তামিম বড় কিছু করবেন। এমনই মনে করা হয়। কিন্তু যেই ১৪৭ বলে ১২ চারে ১০৪ রান করেন, বিপদ এসে পড়ে। ৬৬ রানে ‘রিভিউ’ নিয়ে বাঁচেন। ৭২ রানে ‘নতুন জীবন’ পান। তাতে শতক আসে। কিন্তু শতকের সঙ্গে আর ৪ রান যোগ হতেই মঈন আলীর বলে এলবিডাবলিউ হয়ে যান। এবার ‘রিভিউ’ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তামিম। দলের ১৭১ রানের সময় মুমিনুলের সঙ্গে ১৭০ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফেরেন। কিছুই বুঝে ওঠার আগে বল পায়ে লেগে যায়। বাংলাদেশের ব্যাটিংটা যেন সবসময়ই একই রকম। সেট হওয়া জুটিটা ভাঙ্গতেই তরতর করে সবাই আসা-যাওয়ার মিছিলে লিপ্ত হন। তামিম আউট হওয়ার পর মুমিনুল ১৯০ রানের সময় মঈনের ঘূর্ণি বলটি বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান। এরপরতো তাসের ঘরের মতো সব ভেঙ্গে যায়। দিনটি নিজেদের করে নিয়ে শেষ হওয়ার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মুমিনুল আউটের পর ধরলেতো ৩০ রানেই ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়। অথচ দলের সেরা ব্যাটসম্যানরাই তখন উইকেটে ছিলেন। এমন বেহাল দশা হলে কি আর টেস্ট জেতা যায়! এ প্রশ্ন ওঠে। তামিম যখন বলেন, ‘দেখুন যতই আমি উইকেটের কথা বলি, আমরা যেভাবে ৭-৮ উইকেট হারিয়েছি; সেগুলোর কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। ব্যাটিং ইউনিটের ব্যর্থতা ছিল। ১০০ রান যদি বেশি করতাম তাহলে খুব ভাল অবস্থানে থাকতাম।’ তখন বোঝাই যায়, ব্যাটসম্যানরা কতটা খারাপ ব্যাটিং করেছেন। সেই খারাপটা কিন্তু ইংল্যান্ড ইনিংসেও দেখা গেছে। তবে মঈন যে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না উইকেট খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে। স্টোকস দুর্দান্ত রিভার্স করিয়েছে।’ বাংলাদেশের কোন বোলার যে রিভার্স করাবে, সেই সুযোগইতো নাই। দলেতো একজন মাত্র পেসার। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুধু একজন স্পেশালিস্ট পেসার (আল আমিন) খেলেছিলেন। এরপর রাব্বি খেললেন। তাকেতো বলই দেয়া হলো না। দুই স্পিনার সাকিব ও মিরাজ মিলেইতো বারোটা বাজিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের। বৃষ্টি না হলে দিনটি আরেকটু পরে শেষ হতো। তাহলে হয়তো ডাকেট (৭), কুক (১৪) ও ব্যালান্সের (৯) উইকেট নয়, আরও দু’একটি উইকেট পড়তো। সেক্ষেত্রে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার সুযোগও থাকত। এখন যে উইকেটে রুট (১৫*) ও মঈন (২*) আছেন, এ দুইজনের একজনকে আউট করতে পারলেতো চাপে পড়ে যেত ইংল্যান্ড। আজ দ্রুত কয়েকটি উইকেট ফেলতে পারলে খেলা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। না হলে হাতছাড়া হয়ে যাবে। তা বুঝছে দু’দলই। কিন্তু প্রথম ইনিংসে যে বাংলাদেশ মুহূর্তেই উইকেটগুলো হারাল, স্কোরবোর্ডে বেশি রান জমা করতে পারল না; সেই আফসোসে আবার পুড়তে হবে নাতো? প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যে শেষ ৫ উইকেট ২৭ রানে পড়েছিল, তাতেই আফসোস কুরেকুরে খাচ্ছে। সেই ইনিংসটির জন্যইতো চট্টগ্রাম টেস্টে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এবার ২০১০ সালই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তামিম ১০৮ রান করলেন। তারসঙ্গে ইমরুল ৩৬ রান করে উদ্বোধনী জুটিতে ১২৬ রান যোগ করলেন। ইমরুল আউট হলে আর ৯০ রান যোগ করতেই ২১৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সেই টেস্টটি ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। সেবারের সঙ্গে এবারের পার্থক্য আছে অবশ্য। সেবার বাংলাদেশ ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে। আর এবার প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছে। সেবার প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের বেশি করে ইংল্যান্ড। এবার বাংলাদেশ ২২০ রান করেও দ্রুতই ৩ উইকেট তুলে নিয়েছে। এখন দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি হয়। যদি আজ দ্রুতই ইংল্যান্ডকে অলআউট করে দেয়া যায়, এরপর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ভাল করতে পারেন; তাহলে ম্যাচটি হাতের মুঠোতেই থাকতে পারে। তবে তামিমের শতকে রক্ষা মিললেও, ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আফসোস থাকলই। ভয়ও আছে। কোনভাবে না আবার ব্যাটসম্যানদের এই ব্যর্থতাই আফসোসে পোড়ায়।
×