ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সিরিয়ায় যাচ্ছে রুশ নৌবহর॥ যুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

সিরিয়ায় যাচ্ছে রুশ নৌবহর॥ যুদ্ধের আশঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্প্রতি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন যদি রাষ্ট্রপতি হন, তাহলে তার সিরিয়ানীতি মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সংঘাত অনিবার্য করে তুলবে এবং তার ফলে ঘনিয়ে আসবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু ট্রাম্পের সেই আশঙ্কা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল অবধি বোধহয় আর অপেক্ষা করল না। পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি কড়া অবস্থান নিতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। গত বুধবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সামনের বছরই পূর্ব ইউরোপের রুমানিয়াতে যুদ্ধবিমান পাঠানো শুরু করবে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, পোল্যান্ডে বিপুল অস্ত্রসম্ভার পাঠানোর কথা। ন্যাটোর অন্যান্য সদস্য দেশও জানিয়েছে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে সেনা মোতায়েনের কথা। সব মিলিয়ে, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই গরম হয়ে উঠেছে পূর্ব-পশ্চিম সম্পর্ক। বলা হচ্ছে, ঠাণ্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ন্যাটোর এটাই সর্ববৃহৎ সামরিক পদক্ষেপ। কিন্তু হঠাৎ এই ব্যস্ততা কেন? ক্রুজ মিসাইল নিয়ে রাশিয়ার দুটি যুদ্ধজাহাজ সুইডেন এবং ডেনমার্কের মধ্যবর্তী বাল্টিক সাগরে প্রবেশ করার পরই নড়েচড়ে বসে পশ্চিমি দেশগুলি। স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া ওই যুদ্ধজাহাজগুলিতে উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত স্পেনের সিউটা বন্দরে জ্বালানি ভরার আবেদনও প্রত্যাহার করে নেয়। স্পেনের বন্দরে সাধারণত রাশিয়া তাদের জাহাজ নোঙর করে কিন্তু এবার তার অন্যথা হওয়াতেও উদ্বিগ্ন পশ্চিমি দেশগুলি। ন্যাটোর আশঙ্কা, রাশিয়ার এই যুদ্ধজাহাজগুলো আসলে এগোচ্ছে সিরিয়ার অভিমুখে। সেখানে নির্দোষ মানুষকে প্রাণে মারার লক্ষ্যে। কূটনীতিবিদরা জানিয়েছেন, রাশিয়ার এই রণতরীগুলো ছাড়াও সিরীয় উপকূলে ইতিমধ্যে ১০টি রাশিয়ান জাহাজ পৌঁছে গেছে। অতএব, এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ার এডমিরাল কুজনেৎসোভ এর নেতৃত্বাধীন এই নৌবহরের উপস্থিতি যে সিরিয়াতে পরিবেশ আরো ঘোরালো করে তুলবে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ন্যাটো অবশ্য বলেছে, রাশিয়ার এই সামরিক পদক্ষেপের জবাব তারা মেপেই দিচ্ছে। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোল্টেনবার্গ বলেন তারা বাল্টিক এবং পূর্ব ইউরোপে ৪০০০ সেনা মোতায়েন করেছেন যেখানে পশ্চিম সীমান্তে নিযুক্ত রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল করা এবং তার ফলে ইউক্রেনে রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের মতে ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর রাশিয়া এবং পশ্চিমি দুনিয়ার মধ্যে সম্পর্কে অবনতি এই প্রথম। মাসখানেক আগে সিরিয়াতে শান্তিপ্রক্রিয়া চালু করতে মার্কিন-রাশিয়া চুক্তিও ব্যর্থ হয়। বেশ কিছু পরমাণু-বিষয়ক চুক্তিও লঙ্ঘন করে মস্কো। সিরিয়ার শাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার প্রশ্নে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর সংঘাতও চরমে উঠেছে। স্টোল্টেনবার্গ এও জানিয়েছেন, রাশিয়া তার পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চল কালিনিনগ্রাদে ইস্কান্দার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন করেছে। যা নিয়ে স্বভাবতই ত্রস্ত পশ্চিমি দুনিয়া।
×