ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বতীপুরে শিশু নির্যাতন

শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পূজাকে ধর্ষণ করেছে সাইফুল

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পূজাকে ধর্ষণ করেছে সাইফুল

শ আ ম হায়দার, পার্বতীপুর থেকে ॥ পাঁচ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণকারী সাইফুল এলাকায় মদ্যপ ও লম্পট হিসেবে পরিচিত। সমস্ত অপকর্মে তার প্রধান সহযোগী স্থানীয় আফজাল কবিরাজ। এই আফজালের কুপরামর্শেই হিন্দু পরিবারের নিষ্পাপ শিশুটির ওপর চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। স্ত্রীর তালাক প্রদান এবং স্ত্রীর দেয়া মামলায় হাজতবাসের পর শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর প্রতিশোধ নিতে ও তাদের ফাঁসানোর লক্ষ্যে এই অমানবিক কাজটি করে সাইফুল। ওই ধর্ষণ মামলায় ধর্ষক সাইফুলের পরে দুই নম্বর আসামি আফজাল। এলাকার নারী-পুরুষ-শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন করে আসামিদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণের শিকার ৫ বছরের শিশুকন্যা পূজা এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে। ঘটনাটি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। খোদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শিশু ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা হবে। এ বিষয়ে প্রসিকিউশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পার্বতীপুর-রংপুর হাইওয়ের পাশের চৌপুকুর থেকে গ্রাম্য পাকা রাস্তা ধরে দেড় কিমি উত্তরে জমিরহাট তকেয়াপাড়ায় শিশুর পিতা সুবল দাসের বাড়ি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সেখানে গিয়ে ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে নেপথ্যের কারণ উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান চালানো হয়। সুবল দাস ও ধর্ষক সাইফুলের পাশাপাশি বাড়ি। ব্যবধান একটি গলি। সুবল জানায়, আমি গরিব মানুষ। মাইক্রো চলাই। সাইফুলের সঙ্গে আমার কী এমন শত্রুতা থাকবে। কোন বিরোধ আছে বলেও তো আমার মনে হয় না। গ্রামের সাধারণ নারী-পুরুষ জানায়, ধর্ষক সাইফুল একজন মদ্যপ। লাম্পট্যের কারণে গ্রামবাসী তাকে পছন্দ করে না। পার্বতীপুর টার্মিনালের কাছে স মিলের ব্যবসা ও কিছু জমিজমা ছিল সাইফুলের। বদ নেশার কারণে সবই নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত। আপন চাচাত বোনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২৫ বছরের বৈবাহিক জীবনে তার ১ মেয়ে ৩ ছেলে। একটি ছেলে এতিমখানায়। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মেয়ের শাশুড়ির সঙ্গেও তার অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে এলাকায় কানাঘুষা রয়েছে। এসব কারণে মেয়ে-জামাই বাড়ি ছেড়ে ঢাকা চলে গেছে। মনের দুঃখে ৬ মাস আগে স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা করেছে। একটি মামলায় দেড় মাস হাজতে ছিল। নির্যাতনের মামলাটি চলমান। স্ত্রী তালাকের ঘটনার জন্য সাইফুল তার শ্বশুরকে দায়ী করে। এর প্রতিশোধ নেবে, একথা প্রকাশ্যেই বহুবার বলেছে। সুবলের পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা জমিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, কাওসার হোসেনসহ এলাকার কতিপয় সচেতন ব্যক্তি তাদের বলেছেন, সাইফুল তার শ্বশুর সহিরউদ্দিন (৬৫) ও শ্যালকদের ফাঁসিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটাতে পারে। কারণ শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় যে হলুদ ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় সেটি তার শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনে। তবে ২৩ অক্টোবর পার্বতীপুরের পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সাইফুলের টিউবওয়েলের পানি যাওয়ার ড্রেন খুঁড়ে শিশুটির রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে। যে কারণে সাইফুলের শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনায় ফেঁসে যায় সে। তারা জানায়, তার সঙ্গী আফজালের পরামর্শেই বেছে নেয় সংখ্যালঘু পরিবারের শিশুকে। যাতে সারা দেশে বেশ প্রতিক্রিয়া হয়। দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ, ইউএনও তরফদার মাহমুদুর রহমান, ওসি মাহমুদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং শিশুটির স্বজনসহ গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় গ্রামবাসী নরপিশাচ সাইফুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ ॥ এদিকে শিশু ধর্ষণের অপরাধে গ্রেফতার ধর্ষক সাইফুলের রিমান্ড ও তার সহযোগী আফজল কবিরাজকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টায় শিশুটির গ্রাম রামপুর ইউনিয়নের জমিরহাট তকেয়াপাড়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। এতে গ্রামবাসীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত মানুষ যোগ দেয়। শিশুর বাড়িতে গিয়ে তার শোকাতুর পিতা সুবলচন্দ্র দাসের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, আমার শিশুটির জন্য আপনাদের নিকট দোয়া চাই, ও যেন সুস্থ হয়ে আমার কোলে ফিরে আসে। সমবেদনা জানাতে ও খবর নিতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এসে ভিড় করছে তার বাড়িতে। সাইফুলের ফাঁকা বাড়ির প্রতি মহিলাদের ঝাড়– নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি মাহমুদুল আলম জানান, সাইফুলের রিমান্ড আবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এটি শুনানির অপেক্ষায়। সাইফুলের সহযোগী মামলার ২ নম্বর আসামিকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
×