ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বই ॥ শান্তির পথ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

বই ॥ শান্তির পথ

পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল বই পড়লে জ্ঞান বাড়ে। কিন্তু আজকাল ছাত্রছাত্রীরা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল বই পড়তে চায় না। পড়াশোনার পরে হাতে যেটুকু সময় থাকে মোবাইল, ফেসবুক, ই-মেইলসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে করতেই পার হয়ে যায়। টিভি, সিরিয়াল, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সারা দুনিয়া তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু সৃজনশীল বই না পড়লে জ্ঞানের পরিধি বাড়বে না, এ কথা বুঝতেও চায় না। কোন রকম পাস করতে পারলেই হলো, বাহ্যিক জ্ঞান আহরণের প্রয়োজনীয়তা রোধ করে না। আজকালকার ছেলে-মেয়েরা নিজ গৃহে আবদ্ধ থেকেও সারা পৃথিবী দেখতে পারে। তারা হাতের মুঠোয় দেখতে পারে পৃথিবীর কোন দেশে কি ঘটছে, প্রত্যেক দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং উপভোগও করতে পারে। আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ার কথা। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাবার সুবর্ণ সুযোগ তাদের নাগালের মধ্যে। দেশে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। স্কুলগামী ছেলে ও মেয়ের সংখ্যার আনুপাতিক হার প্রায় সমান। পড়াশোনার মান আগের চেয়ে অনেক ভাল। চাকরির ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ঘরে ঘরে শিক্ষিত মায়ের দেখা পাওয়া যায়। শিক্ষিত বাবা চাকরি করছে, কোথাও মা-বাবা দুজনেই কর্মজীবী। পরিবারে সচ্ছলতা আনার জন্য যুগল প্রচেষ্টা চলছে। এতোসব অগ্রগতির পরও কেন সমাজে অনৈতিক কাজ বাড়ছে, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বাড়ছে? শিক্ষিত লোকেরা কেন মূর্খের মতো আচরণ করছে? নিজেরা যেমন ধ্বংস হচ্ছে, সমাজকেও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে, আর ভবিষ্যত প্রজন্মকেও কলুষিত করে তুলছে। এ সবের মূল কারণ তারা লেখাপড়া করে পাস করেছে, মানুষ হওয়ার মতো প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুন্দর মানব চরিত্রের গুণাবলী তারা অর্জন করতে পারেনি। যে বই মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখায় সে বই থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। যারা বাজার করেন ভাল জিনিস খোঁজ করে বের করেন, কিন্তু জ্ঞানের আলো জ্বালাতে যে বই সত্যি উপকারী, যে বই পড়ে যৎসামান্য বাক্য আত্মস্থ করার চেষ্টা করলে মানুষের জীবন পাল্টে যেতে পারে, এমন একটি বই শান্তির পথ লিখেছেন বিশিষ্ট লেখক ফোরকান আহমদ। লেখক ভিন্ন ভিন্ন প্রবন্ধের মাধ্যমে তার রচনাশৈলীতে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তার প্রধান বক্তব্য হলো মানুষ ব্যক্তিজীবনে শান্তি চায়, পারিবারিক জীবনে শান্তি চায়। সমাজ জীবনে শান্তি চায়, রাষ্ট্রীয় জীবনেও শান্তি চায়। শান্তির জন্য মানুষ অবিরাম সংগ্রাম করছে কিন্তু সর্বত্র অশান্তি বিরাজমান। এর কারণ সত্য থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছে, আর ততই অশান্তিকে কাছে টেনে আনছে। অসৎ ও দুর্নীতির রাহু দেশকে গ্রাস করছে। নিজের সন্তান-সন্ততি বিপথে যাচ্ছে। কেউ বা জঙ্গী হচ্ছে। কেউ অনৈতিক কাজ করছে, অসৎ লোকের দাপট বাড়ছে। মানুষকে সৎ পথে আনা ছাড়া এ থেকে মুক্তির পথ নেই। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎ কাজ করা, পরোপকার করা, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেয়া, কোন অবস্থায় মিথ্যা না বলা, মানুষকে চরিত্রবান করে গড়ে তোলার জন্য ফোরকান আহমদের লেখা শান্তির পথ বইটি যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের বই শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনে সহায়ক হবে। বইটি পাঠ করলে মানব মনে সুকোমল বৃত্তি জেগে উঠবে, জঙ্গী-ভাবনা তরুণদের মন থেকে দূরীভূত হবে। যারা দুর্নীতিবাজ তারা নিজেদের শোধরাবার মহৌষধ হিসেবে এই বইটি পাঠ করতে পারবেন, আর যারা অসততার ধূম্রজাল ছিন্ন করতে চান তাদেরকে সুপথের সন্ধান দেবে। ব্যক্তিসংগ্রহ ও লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করলে পাঠকের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। বইটি প্রকাশ করেছে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পালক পাবলিশার্স। ৮০ গ্রাম বিদেশি অফসেট কাগজে সুন্দর ছাপা, ২০০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ৩০০ টাকা। রুচিশীল ও মার্জিত প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছেন পঙ্কজ পাঠক। কাওসার রহমান
×