ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিয়া হায়দার

এ লে বে লে

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

এ লে বে লে

(পূর্ব প্রকাশের পর) মহিলা : তাহলে মোহরানার এক পয়সাও আমি পাবো না, বুঝলে। পুরুষ : অনেক দিন পরে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগলো। মেয়ে : আমারও। হৃদয়টা বড়ো হালকা হয়ে গেল। পুরুষ : মাঝে মাঝে টেলিফোন করতে পারো। ছেলে : তোমার হাতটা একটু ধরতে দেবে। মহিলা : আমি তো এখন পরস্ত্রী। ছেলে : তাতে কি হয়েছে। আমাদের সোসাইটিতে এসব... মহিলা : তা সে না হয় পরে হবে। ছেলে : ও। ইচ্ছে হলে খোঁজ-খবর নিতে পারো। মহিলা : তুমিও পারো। পুরুষ : তোমার হাতে একটু হাত রাখবো। মেয়ে : তা তুমি তো এখন পর পুরুষ। পুরুষ : তাতে কি হয়েছে বরং... মেয়ে : তা প্রথম কিছু দিন তোমার ফেইথফুল থাকা উচিৎ। ছেলে : আগের মতো পার্টিতে আসতে চাইলে জানিও। মহিলা : পার্টি আমাদেরও আছে। ছেলে : ও চলি। এখন বড়ো লাগলো। মহিলা : আমারও। পুরুষ : নাটক কি শুরু হয়নি তোমাদের। মেয়ে : এখুনি হবে। পুরুষ : ও। যাই তাহলে। (দুই টেবিলে চারজন উঠে দাঁড়ায়। ছেলে ও পুরুষ নিজ নিজ টেবিলের দিকে যেতে যেতে মুখোমুখি হয়।) ছেলে : হ্যালো। পুরুষ : হ্যালো। দু’জনে হাত মেলায়। তারপর নিজ নিজ আসনে গিয়ে বসে। সামান্য নীরবতা। ছেলে : (নিজের ভেতরের অস্থিরতা কাটাবার জন্যই যেন) অনেকদিন পর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হলে বেশ ভালো লাগে তাই না। মেয়ে : (সেও নিজেকে সহজ করতে চায়) যেমন ভালো লাগে তেমনি খারাপও লাগে। ছেলে : তোমার চোখে যেন এখনো ঘোর লেগে আছে। মেয়ে : মনে হয় তোমারও কাটেনি। ছেলে : তা কাটেনি তবে কিনা... ছেলের কথা শেষ হবার আগেই নির্দেশক প্রবেশ করে এবং ছেলেকে যথাস্থানে দেখে। অতঃপর পূর্ব-উত্তেজনা সহকারেই ছেলে ও মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। কাঞ্চু : নির্দেশক এ্যাক্টরদের টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্দেশক : (ধমক দিয়ে ) কাঞ্চু? কাঞ্চু : আমি ঘোষকের, মানে তথ্যমন্ত্রীর কাজ করে দিচ্ছি। নির্দেশক : (ছেলে ও মেয়েকে) তোমাদের কাজ-কর্মে, আচরণে আমি ক্ষেপে গেছি। মেয়ে : ছি ছি তা কেন। নির্দেশক : তোমরা আমাকে ডোবাবে, পথে বসাবে। ছেলে : আপনি নির্দেশক আপনার হুকুম ছাড়া... নির্দেশক : থামো। এতোক্ষণ তো নিজেদের কাজই সেরে নিলে। মেয়ে : (আদুরে গলায়) এবার তাহলে আপনারটা। ছেলে : (কণ্ঠে কাঠিন্য) এবারে কি আপনি শেষ হুঁশিায়ারি উচ্চারণ করবেন। নির্দেশক : দরকার হলে নিশ্চয়ই করবো। ছেলে : তা করুন। (একটু বিগলিতভাবে) তবে কিনা, আমাদের দিয়েই তো আপনার প্লান, আইডিয়া, আর ওই যে... কৃতিত্ব, এ সবই সফল করবেন। অতএব শেষে আবার মাফও করে দেবেন। নির্দেশক : ওসব মন ভোলানো কথা ছেড়ে দিয়ে আমার কথার জবাব দাও। ছেলে : বলুন। নির্দেশক : নাটকের শেষ কি মনে আছে। ছেলে : (মেয়েকে) মনে আছে? মেয়ে : আমরা দু’জনে ঝগড়া-টগড়া করবো তারপর... ছেলে : মনে পড়েছে। আপনি ঘাবড়াবেন না, আমরা ম্যানেজ করে নেবো। নির্দেশক : ম্যানেজ? ছেলে : (বিগলিত হাসিতে) ওটা তো আপনার কাছেই শিখেছি। স্বল্প নীরবতা। নির্দেশক ফিরে যেয়ে নিজ আসনে বসে। কাঞ্চু : নির্দেশক ফিরে এসে বসে পড়ে। নির্দেশক : কাঞ্চু ! কাঞ্চু : আমি ঘোষক মাত্র। নির্দেশকের কাজকর্ম বয়ান করছি। দর্শকের কাছে আমি তাকে মহান করে তুলছি (নির্দেশক হাঁচি দেয়) নির্দেশক হাচি দিয়েছে। নির্দেশক : ইডিয়ট। কাঞ্চু : কিন্তু আমি ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট করছি। নির্দেশক : আমি কি তোমাদের নীরব থাকতে বলেছি? কাঞ্চু : সাইলেন্স খুব ইমপট্যান্ট। মেয়ে : (স্বল্প নীরবতার পর) আমাদের ফুচকা-টুচকা কিন্তু এখনো এলো না। ছেলে : ওয়েটার। ওয়েটার : (নেপথ্যে) আরেকটু ওয়েট করতে হবে স্যার। (ছেলে সিগারেট ধরায়।) মেয়ে : কি ভাবছো? ছেলে : কি নিয়ে ভাবা যায়, তাই ভাবছি। মেয়ে : (হেসে, আদুরে গলায়) বলো না। ছেলে : চলো, আমরা পালিয়ে যাই। মেয়ে : পালাবো? ছেলে : হ্যাঁ নিশ্চয়ই। মেয়ে : আমি ভদ্রঘরের মেয়ে। ছেলে : আমিও ভদ্রঘরের ছেলে। মেয়ে : আমাদের ফ্যামিলি আধুনিক বলে সম্মানিত গর্বিত। ছেলে : আমাদেরও তাই। মেয়ে : আমাদের সোসাইটির মেয়েরা এক সঙ্গে একশো একটা ছেলের সাথে শুধু ফান কেন আরো অনেক কিছু করতে পারে, বেড়াতে যেতে পারে, কিন্তু কারো সাথে পালাতে পারে না। ছেলে : (এ্যাশট্রেতে জোরে সিগারেট গুঁজে দেয়) অবশ্যই পারে। আমার এবং তোমার সোসাইটিতে সেইটেই গৌরবজনক। মেয়ে : হ্যাঁ পারে। কিন্তু বিয়ের জন্য নয়। সে সব হলো... প্লেজার ট্রিপ। তুমিও করছো। ছেলে : তুমি আমার সঙ্গে যাওনি। মেয়ে : সে বিয়ের কথা বলেনি। ছেলে : আমিও তাকে বিয়ের কথা বলিনি। মেয়ে : তাহলে? এবারে কেন? ছেলে : আমি মহৎ হতে চাই। মহৎ হবার জন্য আর কোন পথ আমাদের সোসাইটির তো জানা নেই। মেয়ে : ইন দ্যাট কেস, জর্জ হ্যারিসন হয়ে যাও। গলায় গীটার ঝুলিয়ে গান গাইতে গাইতে নতুন পথ খুঁজে নাও গে। আমি এখন যেতে চাই। (উঠে দাঁড়ায়।) মহিলা : আমি আর ও ঠিক একই ধরনের কথাই বলেছিলাম। পুরুষ : আমি আর ও আমরা দু’জনেও তাই। নির্দেশক : (মহিলা ও পুরুষের দিকে দ্রুত এগিয়ে এসে ) আচ্ছা, আপনাদের বুঝি খুব ইচ্ছে নাটকে অভিনয় করা। মহিলা : মোটেই না। পুরুষ : কেন? নির্দেশক : (চাপা ক্রোধে) নাটক চলছে। খুব সিরিয়াস সিচুয়েশন। আর আপনারা খুব ফুর্তিতে নিজেদের গপ্পো বয়ান করে চলেছেন। আমার নাটকের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। মহিলা : (হাতে ঘড়ি দেখে) এখনো অনেক দেরি আছে। (বলেই ফিক করে হেসে ওঠে। পুরুষ, ছেলে, মেয়েও হাসে।) নির্দেশক : আপনারা নাটকের উপযুক্ত দর্শক নন। কাঞ্চু এরপর থেকে ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’ নোটিশ ঝুলিয়ে দিবি, বুঝলি। (নিজ আসনে ফিরে যায়।) কাঞ্চু : তেমন দিন যদি আর না আসে। (খিক খিক করে হাসে।) নির্দেশক : (ছেলে ও মেয়েকে) গো অন। মেয়ে : (একটু চুপ থেকে) কোথায় নিয়ে যাবে? ছেলে : (উঠে দাঁড়ায়) যেখানে সুনীল আকাশের গায়ে সবুজ পাহাড় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। যার নিচে দিগন্ত বিস্তারী সমুদ্র গভীর শান্ততায় ঢেউ হয়ে দুলতে থাকে, সেখানে। মহিলা : (পুরুষকে) এই, ও কিন্তু আমাকেও এসব বলেছিলো। মেয়ে : সেখানে শুধু তুমি আর আমি। ছেলে : যেখানে নেই হিংস্র জন্তুর চেয়েও শাণিত নখর মানুষের কোলাহল। পুরুষ : (মহিলাকে) সাতরাঙা পরীদের কথা ও আমাকেও বলেছিলো। একই ডায়ালগ যে আর কতজনকে শোনাবে। মহিলা : একই ডায়ালগ আমিও যেমন অনেককে শুনিয়েছি, তুমিও তেমনি, সবাই তাই করে। এখন চুপ করো তো। নির্দেশক : ওহ আবারও! মেয়ে : কিন্তু এখানে যদি কাজীর অফিস না থাকো। ছেলে : নাই থাকলো আমি আর তুমি থাকবো। থাকবে চিরবসন্ত। মেয়ে : কিন্তু আমার যে ভয় লাগে। ছেলে : কেন? মেয়ে : আমার দাদী না বসন্তে মারা গিয়েছিলো। ছেলে : আর ভয় নেই, কোন ভয় নেই। সেখানে যে শুধু থাকবে ফুলেল সৌরভ আর পাখিদের কুজন। মেয়ে : চলো যাই। ছেলে : (আবেগায়িত হয়ে বলতে বলতে মেয়ের কাছে চলে আসে) যাবে, সত্যি তুমি যাবে। .... আমার জানো আমার কতোদিনের সাধ, পৃথ¦ীরাজের মতো আমার সংযুক্তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো। সারা রাজ্যজুড়ে কি যে গৌরবময় কেলেঙ্কারি হবে। মেয়ে : ( যেন ভাবের ঘোরে চলতে চলতে সম্মুখ মঞ্চে নেমে আসে) আমারো তাই সাধ, কতোদিনের সাধ।... আমার সন্তান হবে পুত্রসন্তান রাজপুত্র। ছেলে : (মেয়ের সংলাপের সঙ্গে সেও মেয়েকে অনুসরণ করে তার পাশে দাঁড়ায়) যদি না হয়, যদি আমি দিতে না পারি তাহলে... তাহলে, ওগো রানী রাতের অন্ধকারে কোন মায়ের কোল থেকে সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে আমি... আমি... আমি হাইজ্যাক করে নিয়ে এসে দেবো তোমাকে। একটা ইতিহাস হয়ে যাবো আমরা। শুষ্ক বক তোমার মরুদ্যান হয়ে যাবে। মহান পীর সাহেবদের আশীর্বাদে আমরা হয়ে যাবো জেনুইন পিতামাতা। (শেষ বাক্যটি বলতে বলতে হাঁটু গেড়ে বসে মেয়ের হাত ধরে।) কাঞ্চু : (ঘোষণা দেয়ার মতো) উহার জন্য গাউছে পীর আবু আলি মিরধার দোয়া খয়রাত লাগিবে। নির্দেশক : ( ধমক দিয়ে) কাঞ্চু! মেয়ে : আহ কি শান্তি। ছেলে : ( বলতে বলতে মেয়েকে আলিঙ্গন করেই ছেড়ে দিয়ে তার হাত ধরে।) ওহ মাই লাভ। ( তারা দু’জনে হাত ধরাধরি করে ঘুরতে থাকে।) নির্দেশক : হোয়াট? এগেইন? (ছুটে যেয়ে ছেলে ও মেয়েকে আলাদা করে দেয়।) (চলবে)
×