ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রদীপ সাহা

পাখিদের বিচিত্র ঠোঁট

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

পাখিদের বিচিত্র ঠোঁট

আমাদের চারপাশে রয়েছে নানারকম পাখি। এসব পাখির যেমন রয়েছে বিভিন্ন নাম, তেমনি আচার-আচরণেও রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। কোন কোন পাখির ঠোঁটেও দেখা যায় ভিন্নতা। একটি পাখির স্বভাব কেমন হবে অথবা সেটি পোকা খাবে না ফল খাবে, নাকি অন্য কোন পাখিকেই খাবে সেটা নির্ভর করবে তার ঠোঁটের ওপর। প্রথমে কাকের কথাই ধরা যাক। খাবার নিয়ে কাকের তেমন বাছবিচার নেই। এদের ঠোঁট সবরকম খাবার খাওয়ার উপযুক্ত। তাই কাকের ঠোঁটকে বলা হয় সর্বভুক ঠোঁট। শালিকদের ঠোঁটও সর্বভুক ঠোঁট। তবে তা গঠনে খানিকটা আলাদা। দোয়েলের ঠোঁট ছোট পোকামাকড় শিকারের জন্য খুবই উপযুক্ত। পোকা ধরা এমন ধরনের ঠোঁটের আরও পাখি হচ্ছে- টুনটুনি, শ্যামা ইত্যাদি। কসাই পাখির ঠোঁটও এ ধরনের। তবে ওপরের ঠোঁটটি খানিক সুঁচালো ও বাঁকা হওয়াতে পাখিটি ছোট ছোট গিরগিটি, সাপ পর্যন্ত শিকার করে থাকে। শুধু খাদ্যশস্য খেয়ে বেঁচে থাকে এমন ঠোঁটবিশিষ্ট পাখি হচ্ছে চড়ুই, বাবুই এবং মুনিয়া। তবে চড়–ই শুধু খাদ্যশস্য খায় না; বিভিন্ন ফল, পোকা-মাকড় এবং রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট পর্যন্ত খেয়ে থাকে। ফুলের মধু খেয়ে জীবনধারণ করে মৌটুসি এবং নীলটুনি। এদের ঠোঁট আবার লম্বা ও বাঁকানো। হামিংবার্ডের ঠোঁটের মতো অনেকটা। ফুলের মধু চুষে নিতে পারে এসব পাখি। শুধু ফল খাওয়ার জন্য বিকশিত হয়েছে ধনেশের ঠোঁট। বসন্তবৌরির ঠোঁটও ফলাহারি। তবে আকারে-প্রকারে এর আর ধনেশের ঠোঁটে পার্থক্য আছে। কাঠঠোকরার ঠোঁট আবার বিশেষ ধরনের। গাছের গায়ে আর বাকলের ভেতরের পোকামাকড়, পিঁপড়া এদের খাদ্য। ঠোঁটের সাহায্যে গাছের গায়ে গর্ত করে বাসা বানায় এরা। পেলিক্যান পাখি সারা বিশ্বে বিখ্যাত তাদের ঠোঁটের নিচের থলের জন্য। এরা জলাশয়ে শিকার করার সময় ঠোঁট খোলা রাখে। তখন এদের ঠোঁটের নিচের থলেটা জালের মতো মাছ আটকে দেয়। কাদাতে খাবার অনুসন্ধানকারী অধিকাংশ পাখিদের ঠোঁট বেশ লম্বা ও বাঁকানো। এদের মধ্যে আছে গুলিন্দা এবং চ্যাগা বা স্নাইপ নামের পাখি। এরা ঠোঁট দিয়ে কাদার নিচে কেঁচো, ছোট ছোট কাঁকড়া অনুসন্ধান করে শিকার করে। মাছরাঙাদের ঠোঁট আবার অন্যদের থেকে আলাদা। এ ধরনের ঠোঁট থাকার ফলে মাছ শিকার করায় এরা দক্ষ। একইরকম ঠোঁট পানচিলদের। পানির নিচে ডুব দিয়ে যেসব পাখি মাছ শিকার করে, তাদের ঠোঁট আবার মাছরাঙার মতো নয়। ডুবুরি হাঁস, পানকৌড়ি ও গয়ার এমন ঠোঁটের অধিকারী। এদের ঠোঁট লম্বা ও সামনের দিকে কিছুটা বাঁকানো। ফ্লেমিঙ্গো পাখি ঠোঁট দিয়ে খাবার খায় ছেঁকে বা ফিল্টার করে। ঠোঁট দিয়ে কয়েক ধরনের হাঁসও খাবার ছাঁকতে পারে। চিল, বাজ, ঈগল এসব পাখি দেখতে অনেকটা আগ্রাসী গোছের। ঠোঁট হলো এদের ধারালো অস্ত্র। এই ঠোঁট দিয়ে এরা নানা পাখি, ইঁদুর, খরগোশ আর ছোট ছোট প্রাণী শিকার করে। পেঁচারও আছে এমন ঠোঁট। কিছু পাখি আছে যারা সত্যিই আগ্রাসী। এর মধ্যে রয়েছে গাঙচিল। এরা অন্য পাখির শিকার ছিনতাই করে নিয়ে যায়, অন্য পাখির বাচ্চা অপহরণ করে নিয়ে খেয়ে ফেলে এবং অন্য পাখির খাবার চুরি করে। ফ্রিগেট বার্ড নামের একটি সাগরের পাখিও এমন কাজে সবচেয়ে পটু। কোন পশু মারা গেলে তার মাংস খেতে শকুনের জুড়ি নেই। মরা পশু থেকে মাংস ছাড়াতে সাহায্য করে শকুনের ধারালো ঠোঁট। এ ধরনের ঠোঁট দেখতে প্রায় ঈগলদের মতোই। এমনি অনেক বিচিত্র ধরনের পাখি যেমন রয়েছে আমাদের চারপাশে, তেমনি পাখিদের বিচিত্র ঠোঁটও চোখে পড়ে আমাদের।
×