ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তাহেরা বেগম জলি

গোকুলে বাড়িছে সে

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

গোকুলে বাড়িছে সে

আমি সেই গর্বিত নারী জাতি। কঠিন মাটির নিচে বিজ বপন করে মানুষ জাতিকে দিয়েছিল যারা জীবনের সন্ধান। অহঙ্কারে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হাসতে চাই আমি! চিৎকার করে বলতে চাই, ফিনিক্স পাখির মতো বার বার ধ্বংসের অতল গহ্বর থেকে জেগে উঠবে মানব জাতি। কারণ, মানব জাতির সঙ্গে নারী শব্দটা জড়িয়ে আছে। আমি মানব জাতির সেই গোত্র, যাদের যৌবনের আশ্রয়ে টিকে আছে মানুষের চলমান জীবন। যার বুকের উত্তাপে প্রায় রক্তপিণ্ড থেকে এক শিশু পায় মানব জীবন। এবং এ আমার আকাশছোঁয়া অহঙ্কার। সে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, নারির পেশিশক্তি হার মেনেছিল পশু শক্তির কাছে। সে এখন শুধুই অতিত। শুধুই ইতিহাস। পানি গড়িয়েছে এখন অনেক দূর। হাত দিয়ে যেমন সূর্যের আলো আড়াল করা যায় না। তেমনি সমস্ত অন্ধকার ভেদ করে নারী জাতি ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। যুদ্ধের ময়দান থেকে রন্ধনশালা, সবখানেই আজ নারীর দুরন্ত উপস্থিতি। সমান উজ্জ্বলতা নিয়েই নারী-পুরুষ এক হয়ে পাড়ি দিয়ে চলেছে যতসব বিপদসঙ্কুল পথ। প্রীতিলতা-সূর্যসেনের যৌথ মানববন্ধনেই বিতাড়িত হয়েছে ব্রিটিশরাজ। রাজা রাম মোহন, মহান বিদ্যাসাগর এবং বেগম রোকেয়াদের যৌথ সংগ্রামের পরিণতিই আজ আমাদের দেশে নারীর উত্থান। সভ্যতাবিরোধী পাশবিক শ্রেণী, নারী-পুরুষের যৌথ শক্তির সামনে স্বাভাবিকভাবেই বিচলিত। ছল করা দেহের উত্তাপে যে নারীকে তারা করেছিল করতলগত, পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তার আত্মপ্রকাশে, কি এক অপমানের জ্বালায় যেন দগ্ধ হচ্ছে সেই পরাজিত শ্রেণী। এ যেন মরিয়া হয়ে শেষ চেষ্টা। যেভাবেই হোক আবার বদ্ধ করও খাঁচায়। তনু, মিতু ফারজানা থেকে খাদিজাদের রক্তাক্ত দেহ সেই প্রতিহিংসার-ই ফল। বা এখন খুব-ই দৃশ্যমান, এক শ্রেণীর বিকৃত মানুষের উদ্ভব হয়েছে, যাদের প্রধান কাজ, বিষবাষ্প ছড়িয়ে দাও নারী পুরুষের মাঝে। ওরা শুধু নারী বিদ্বেষী নয়, ওরা মানববিদ্বেষী। শুধু নারীমুক্তি নয়, ওদের ধ্বংসস্তূপের ওপরে গড়ে উঠবে গোটা সভ্যতার ইমারত। ইয়াসমিন হত্যা, ১ বৈশাখের নারী নিপীড়ন বা আজকের খাদিজা হত্যা চেষ্টার বিরুদ্ধে-খুব-ই সোচ্চার, মনুষ্যত্বের ঝাণ্ডাধারী বাংলার হার না মানা মানুষেরা। এবং যার অধিকাংশ-ই পুরুষ। অন্তত আমাদের দেশে চোখে পড়ার মতো নারী আন্দোলন আজও গড়ে ওঠেনি। তারপরেও প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে আমাদের দেশের বিকৃত শক্তি। এবং আমাদের দেশের সূর্য সন্তানদের স্বভাব প্রমাণ করে, এটাই স্বাভাবিকতা। আমরা ভুলে যাইনি, ইয়াসমিন হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে, জীবন দিয়েছে দিনাজপুরের কৃষককুলের ৭ জন বীর। আমি তাদের জানাই লাল সালাম। স্বাধীন জীবনের সৈনিকদের কোন গোত্র নেই। হতে পারে তারা নারী অথবা পুরুষ। এবং তার জ্বলন্ত উদাহরণ, খাদিজার পাশে চোখে-মুখে উজ্জ্বলতা ছড়ানো এক টগবগে তরুণের উপস্থিতি। ‘আপুকে আপনারা বাঁচান।’ ঐ পবিত্র যুবকের আপু খাদিজা, ক্রমেই ফিরে পাচ্ছে তার প্রাণ। আর যেন ঘোষণা করছে ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।’
×