ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিনেশ মাহাতো

নারী সাংবাদিকতার একাল-সেকাল

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

নারী সাংবাদিকতার একাল-সেকাল

সাংবাদিকতা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি পেশার নাম। তারপরও এ পেশাতে নারীদের অংশগ্রহণ বহু আগে থেকেই। বাংলাদেশে নারীদের সাংবাদিকতায় পদচারণা শুরু হয় ব্রিটিশ আমল থেকেই, তখন নারী সাংবাদিকদের আগমন ঘটে সাময়িকী সম্পাদনার মাধ্যমে। প্রথম সাময়িকী পাক্ষিক ‘বঙ্গমহিলা‘ সম্পাদনা করেছিলেন একজন নারী। মোক্ষম দায়িনী মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭০ সালের ১৪ এপ্রিল। প্রথম মাসিক জেন্ডারভিত্তিক ম্যাগাজিন অনাথিনী নারীদের দ্বারা পরিচালিত ও প্রকাশিত হয় ১৮৭৫ সালের জুলাই মাসে। নারী কর্তৃক সম্পাদিত প্রথম সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘বঙ্গবাসিনী’ প্রকাশিত হয় ১৮৮৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। মুসলিম নারী বেগম সুফিয়া খাতুন সম্পাদিত প্রথম মাসিক ম্যাগাজিন ‘অন্বেষা‘ প্রকাশিত হয় ১৯২১ সালে। বিভাবতী সেন কর্তৃক সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘পাপিয়া‘ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে এবং ১৯২৮ সাল থেকে এটি মাসিক ম্যাগাজিনে রূপান্তরিত হয়। লীলাবতী নাগ সম্পাদিত সচিত্র মাসিক ‘জয়শ্রী’ ১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। পূর্ব বাংলায় প্রথম যে সাময়িকী প্রকাশিত হয় তার নাম ছিল ‘বঙ্গনারী’। সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ’বেগম’ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই। বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল। বেগমের শুরুতে নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, পরে সম্পাদকের দায়িত্ব নেন এবং আমৃত্যু বেগম পত্রিকার হাল ধরে জীবন পার করে দিয়েছেন তিনি। ‘বেগম’ পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকতায় নারী জাগরণের সূত্রপাত ঘটে। বেগম পত্রিকার মাধ্যমে তিনি অসংখ্য নারী লেখক, সাংবাদিক তৈরি করেছেন। তিনি বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার পথিকৃত, এক কিংবদন্তি। সেই সময়কার নারী সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যাঁরা তারা হলেন রাজিয়া খাতুন, শামসুন নাহার মাহমুদ, হোসনে আরা, রিজিয়া বেগম, আনোয়ারা বেগম, সুপ্রভা দেবী, প্রতিভা গাঙ্গুলি, প্রভাবতী দেবী, রাজিয়া মজিদ, কল্যাণী রায়, জোহরা করিম, হাজেরা মাহমুদ প্রমুখ। পঞ্চাশের দশকে নারীরা মূলত সম্পাদনায় বেশি জড়িত ছিল। ষাটের দশকে নারীদের সাংবাদিকতায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। যদিও তাদের যাত্রা শুরু হয় খুব ধীরগতিতে। ষাট সত্তর ও আশির দশকে নারী সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লায়লা সামাদ, জাহানারা আরজু, মাফরুহা চৌধুরী, রাজিয়া খান আমিন, মাসুদা চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, মকবুলা মঞ্জুর, মাহফুজা খাতুন, দিল মনোয়ার মনু, নাসিমুন আরা হক, গুলশান আরা, মাসুমা খানম, আখতার জাহান মালিক, উর্মী রহমান প্রমুখ। তবে এদের অনেকে এখনও সাংবাদিকতায় অবদান রেখে চলেছেন। নারী সাংবাদিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন মুন্নী সাহা। বর্তমানে তিনি এটিএন নিউজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ ও বিদেশে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। সুমনা শারমিন তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৯১ সালে আজকের কাগজে সাব-এডিটর হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। বর্তমানে তিনি প্রথম আলোর ফিচার এডিটর হিবেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিক শাহানাজ মুন্নী বর্তমানে একটি টিভি চ্যানেলের বার্তাপ্রধান হিসেবে কর্মরত। টেলিভিশন সাংবাদিক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন সামিয়া রহমান ও ফারজানা রুপার মতো আরও অনেকে। রোজিনা ইসলাম প্রথম আলোর সিনিয়র সংবাদদাতা। পত্রিকাটিতে তার করা বেশ কয়েকটি রিপোর্ট জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আমাদের নারী সাংবাদিকতায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তারা হলেন- নাদিরা কিরণ, ফরিদা ইয়াসমিন, সাজু রহমান, ঝর্না মনি, রাবেয়া বেবী, ্্্্্্্্্্্্্ইয়াসমিন পিউ, তাসকিনা ইয়াসমিন, সেবিকা দেবনাথ, নাজনীন আখতার, নাজনীন বেগম, বিউটি হাজং, দিপা ঘোষ, জয়ীতা রায় প্রমুখ। প্রায় দুই দশক আগেও সাংবাদিকতায় নারীদের হার ছিল শতকরা ৭ শতাংশ। তবে আশার কথা হলো নারী সাংবাদিকরা এখন সে অবস্থান থেকে এগিয়েছে অনেক দূর। গত ১০ বছরে সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে লক্ষণীয় হারে। এ পেশার পরিধি এখন শুধু সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলেই সীমাবদ্ধ নেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও এবং অনলাইন মিডিয়া। প্রতিটি গণমাধ্যমই এখন নারী সাংবাদিকদের দীপ্ত পদচারণায় মুখর। তবে সাংবাদিকতায় এখনও নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত পিআইডি গাইড হিসেবে পরিচিত টেলিফোন নির্দেশিকার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইংরেজী, বাংলা ও অনলাইন পত্রিকাসহ প্রায় ২০০ গণমাধ্যমে কর্মরত নারী সম্পাদক রয়েছে মোট ছয়জন। এদের সবাই সম্পাদক হয়েছেন মালিকানা সূত্রে, সাংবাদিকতার সূত্রে নয়। আর তালিকাভুক্ত ২৫টি টেলিভিশনের মধ্যে নারী সিইও রয়েছেন একটিতে, নারী বার্তাপ্রধান রয়েছেন দুটিতে। যেভাবে নারীরা এখন সাংবাদিকতায় আসতে শুরু করেছে, আগামীতে সাংবাদিকতার শীর্ষ পদগুলোতেও নারীর সংখ্যা বাড়বে এতে সন্দেহ ন্ইে। এমনকি সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। যেমন সাব-এডিটর কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা। নূরজাহান বেগম, সেলিনা পারভীন ও লায়লা সামাদের মতো সাংবাদিকদের পথ অনুসরণ করে নারীরা প্রমাণ করেছেন, আগামীতেও করবেন। নারী সাংবাদিকদের জয় হোক। ফরহবংয.ংধনঁল@মসধরষ.পড়স
×