ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শুরু ঢাকা টেস্ট, বৃষ্টি-আকাশের দিকে তাকিয়ে মুশফিক ও কুকরা

পরাজয় ঠেকাতে লড়বে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

পরাজয় ঠেকাতে লড়বে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ উইকেট নিয়েই যত ভাবনা চলছে। যেন ‘ভেল্কিবাজি’ চলছে। চট্টগ্রাম টেস্টে উইকেট নিয়ে ‘ভেল্কি’ খেয়েছে ইংল্যান্ড। আর তাতে করে ম্যাচে সমান তালে লড়াই করে গেছে বাংলাদেশ। এবার আজ শুরু হতে যাওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টেও কী তাই হবে? যদি তাই হয়, তাহলেতো এবারও বাংলাদেশ অসাধারণ খেলেই টেস্ট শেষ করবে। সেই শেষটা হার দিয়ে হয়, না অন্য কিছু দিয়ে; তা সময়ই বলবে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মনের আশা, খেলা পাঁচদিনে নিয়ে যেতে হবে। এরপর ফল নিজেদের দিকে যদি নিয়ে আসা যায়, তাহলে সেই চেষ্টা করতে হবে। না হলে ড্র’র প্রাণপণ চেষ্টা করে যেতে হবে। তাহলে অন্তত সিরিজটিতে হোয়াইটওয়াশ হবে না বাংলাদেশ। আর হার হয়ে গেলে ইংল্যান্ড যে প্রথম টেস্ট ২২ রানে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে, সেই ব্যবধান হয়ে যাবে ২-০। সবার মনেই প্রশ্ন, ঢাকা টেস্টে হার এড়াতে পারবে বাংলাদেশ? উইকেট প্রস্তুত। কিন্তু বৃষ্টিতে এমন অবস্থা হয়েছে, উইকেট বেশিরভাগ সময়ই ঢাকা থাকছে। যতই উইকেট স্পিননির্ভর করার চেষ্টা করা হোক, যতই চট্টগ্রামের মতো তৈরি করার চেষ্টা হোক; সেটি শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট যে সবসময়ই ব্যাটসম্যান সহায়ক হয়েছে। এখানে ব্যাটসম্যান যদি ভুল না করে, তাহলে উইকেটে টিকে থাকা সম্ভব। রানও স্কোরবোর্ডে যোগ করা সম্ভব। সঙ্গে ভয়ও আছে। উপমহাদেশের উইকেট মানেই হচ্ছে স্পিননির্ভর। কিন্তু মিরপুরে সেই স্পিন ঘূর্ণিতে কুপোকাত হওয়ার ব্যাপারটি অনেক পরেই দেখা যায়। শুরুতে সেখানে পেস গতিতে ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলার চিত্রই ফুটে ওঠে। যেভাবে বৃষ্টি হানা দিচ্ছে তাতে শুরুতে পেসাররাই যে সুবিধা পাবে, তা বলাই যায়। বাংলাদেশ দলেও আবার নেই পেস আধিক্য। কামরুল ইসলাম রাব্বি আর এখনও টেস্ট অভিষেক না হওয়া শুভাশীষ রায়ই ভরসা। কিন্তু তারাও কী বিশেষ কিছু করতে পারবেন? ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অনেক শক্তিশালী। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরাতো আছেনই, আবার নিচের সারিতে থাকা ব্যাটসম্যানরাও ব্যাট হাতে পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করতে পারেন। এখানেই ইংল্যান্ড এগিয়ে যাচ্ছে। ইংলিশরাতো এগিয়ে থাকছে পেস আক্রমণেও। পেসার বেন স্টোকসতো সিরিজজুড়েই মাতিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামে স্পিন সহায়ক উইকেটেই দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের ইনিংসের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। তার সঙ্গে কোন মতে উইকেট পেস সহায়ক হলেতো ক্রিস ওকসও ভয়ঙ্কর রূপেই দাঁড়াতে পারেন। স্টুয়ার্ড ব্রডের ১০০তম টেস্ট বাংলাদেশের বিপক্ষেই না খেলার সম্ভাবনা। তার পরিবর্তে স্টিভেন ফিনের হাতে সুযোগ ধরা দিতে পারে। ফিনতো পেস সহায়ক উইকেটে দুর্ধর্ষ বোলার! ইংল্যান্ডের হাতে পেস আক্রমণে অনেক অপশন আছে। আবহাওয়া রিপোর্ট যা ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে বৃষ্টি আজও হতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলেতো পেসে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে থাকবে ইংলিশরাই। যদি টস জিতে আবার শুরুতেই বাংলাদেশকে ব্যাটিং দিয়ে দেয় ইংল্যান্ড, তাহলেতো শুরুতেই বিপদ আসতে পারে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের হাতে সেইরকমটি নেই। পেস আক্রমণে দুর্বল বাংলাদেশ। তবে কোনভাবে যদি আবার উইকেটে শুরু থেকেই স্পিন ধরা শুরু করে, তাহলে ইংল্যান্ডেরই বিপদ ঘনীভূত হতে পারে। আবার চট্টগ্রাম টেস্টের আলামত মিলতে পারে। বিপাকে পড়তে পারে ইংলিশরা। বাংলাদেশ দলই যে স্পিনে ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে। সাকিব আল হাসানতো আছেনই। রয়েছেন তাইজুল ইসলামও। সেই সঙ্গে প্রথম টেস্টেই জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজও আছেন। যদি শুভাগত হোম চৌধুরীকে যোগ করা হয় একাদশে, তাহলেতো অফস্পিনার আরও শক্তিশালী হয়ে যাবে। সেই তুলনায় ইংল্যান্ড শিবিরে স্পিনে ভরসা লেগস্পিনার আদিল রশিদ ও মঈন আলী। তবে যতদূর জানা গেছে, ইংল্যান্ড এবার স্পিন শক্তি আরও শক্তিশালী করে নামবে। স্পিনার জাফর আনসারিকে অভিষেক করান হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্পিনে যে দুইদলের মধ্যে পার্থক্য, তা কমে আসবে। তবে যেভাবেই হোক, স্পিন সহায়ক উইকেট মিললে লাভ হবে বাংলাদেশেরই। ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা পুরোদস্তুর স্পিনে দুর্বল। এখন দেখা যাক, স্পিননির্ভর উইকেট মিলে কিনা। অবশ্য বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বৃহস্পতিবার ঢাকা টেস্টপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কথা বলেছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে যে দাপটের সঙ্গেই খেলেছে বাংলাদেশ, তাতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দলের ক্রিকেটারদের। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে কোন ইনিংসেই ৩০০ রান করতে দেয়নি। প্রথম ইনিংসে অভিষিক্ত স্পিনার মিরাজের (৬/৮০) অসাধারণ বোলিংয়ে ২৯৩ রানেই ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব আল হাসানের (৫/৮৫) স্পিন দাপটের কাছে ২৪০ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সামনে ২৮৬ রানের টার্গেট যে দাঁড় হয়, তাই করতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা। আর তাতে করে হারও হয় নিয়তি। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে চার টেস্ট সিরিজ খেলে যা করতে পারেনি বাংলাদেশ, এবার তা করে দেখিয়েছে। ম্যাচে জয়ের আশা জাগিয়েছে। প্রায় ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে এমন নৈপুণ্য ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। মুশফিকও তাই মনে করেন, ‘অবশ্যই বিশ্বাস বেড়েছে। ১৫ মাস পর মাঠে নেমে দল হিসেবে আমরা অবশ্যই একটু ব্যাকফুটে ছিলাম। অবশ্যই ফেবারিট ছিলাম না। ইংল্যান্ডের মতো দল। আল্লাহর রহমতে ছেলেরা যেভাবে খেলেছে, অবশ্যই আত্মবিশ্বাস আছে। তবে বড় ব্যাপার হলো, আমি সবসময়ই বলেছি, টেস্ট ক্রিকেটেও আমরা যেন ধারাবাহিক হতে পারি। সেদিকেই আমাদের মনোযোগ। শুরুটা ভাল হয়েছে। চট্টগ্রামে যেভাবে শেষ করেছি, সেখান থেকেই এখানে শুরু করতে চাই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ঢাকার উইকেট অবশ্যই আলাদা হবে। এখানে উইকেটের মাটি অন্যরকম। জানি না কেমন ব্যবহার করবে। তবে যেমনই করুক, আশা করব আমাদের স্পিনাররা সুবিধা পেলে সেটা নিতে পারবে এবং আমাদের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারবে। তাহলে ভাল ফল এখানেও আসবে। উইকেটের চেয়েও বেশি নির্ভর করে আপনি কতটা ভাল করতে পারছেন। উইকেট যেমনই হোক, ভাল জায়গায় বল না করলে বা বল সিলেকশন ভাল না হলে, ভাল করা কঠিন। চেষ্টা করব, উইকেট এখানে যদি চট্টগ্রামের মতো নাও হয় কিংবা আরও ভালও হয়, যেটাই থাকুক না কেন, দু’দলের জন্য একইরকম হবে। চেষ্টা করব যত দ্রুত হোক, মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। চট্টগ্রামেও যেটা হয়েছে, অনেকবার বলেছি, এখানেও প্রথম ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেদিকেই মন দিচ্ছি।’ মুশফিক ঠিকই বলেছেন, উইকেট যেমনই হোক; বোলার ও ব্যাটসম্যানদের তা বুঝেই খেলে যেতে হবে। নৈপুণ্য দেখাতে হবে। না হলে উইকেট নিজেদের পছন্দমতো হলেও লাভ নেই। হার তখন হবেই। তা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন। তবে উইকেট যেরকমই হোক, ইংল্যান্ড যতই ভাল খেলুক; টেস্ট বাঁচাতে হলে বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদেরই ভাল করতে হবে। ব্যাটিংয়ে যদি তামিম, ইমরুল, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিকরা বিশেষ কিছু করতে না পারেন, তাহলে টেস্ট হারই নিয়তি, তা ধরে নিতে হবে। এখন দ্বিতীয় টেস্টে হার থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে কিনা বাংলাদেশ, তা দেখার অপেক্ষাই রইল।
×