ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী

সরকারের দুর্নাম করতেই রামপাল নিয়ে আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

সরকারের দুর্নাম করতেই রামপাল নিয়ে আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রামপাল বিরোধীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অজ্ঞ বলেই আন্দোলন করছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনারে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি মনে করেন গবেষকদের কারোর প্রযুক্তি জানা না থাকায় রামপালের বিরোধিতা করছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলার প-িত ইংরেজী না জানলে কিংবা ইংরেজীর প-িত বাংলা না জানলে যা হয় তাই হচ্ছে আমাদের। এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকা আয়োজিত ‘বড় প্রকল্পে বিতর্ক’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের বড় প্রকল্পগুলো সময়মতো আসছে না। এগুলো নিয়ে সৃষ্ট হচ্ছে নানা বিতর্ক। সরকারের নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও দক্ষতার অভাবেই এসব সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ছাড়াও ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ড. সেলিম মাহমুদ, ট্রাইব্যুনালের সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক, বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী বিদ্যুত কোম্পানির ব্যবস্থপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য, বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকারের সব উন্নয়ন কাজেই একটি মহল না, না করছেন। এসব না, না করা লোকদের হ্যাঁ, হ্যাঁ করতে হবে নইলে দেশের উন্নয়ন হবে না। বিভিন্ন প্রকল্পের সমালোচনা ও বিরোধিতাকারীদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের কথা শুনলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রর পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে ইউনেস্কো থেকে যারা এসেছিলেন তাদের সকলেই মাইক্রোবায়োলজিস্ট (অনুজীব বিজ্ঞানী)। তাদের কারোরই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। আবার আমাদের দেশেও যারা রামপালের বিরোধিতা করছেন তারাও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। তাদের কেউ ইকোনমিস্ট (অর্থনীতিবিদ), কেউ বায়োলজিস্ট (জীববিজ্ঞানী) আবার কেউ জিওলজিস্ট (ভূতাত্ত্বিক)। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বা এর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলেও উনারা এসব নিয়ে কথা বলছেন। নসরুল হামিদ বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ঝড় তুলছেন তারা কারা তা আমরা জানি, তাদের পরিচয় ও ছবিও আমাদের কাছে আছে। তাদের নাম এখানে বলতে চাই না। কিন্তু তাদের সঙ্গে লিংক কাদের, তাদেরও ছবি আছে। এরা বিএনপি-জামায়াতের এ্যাক্টিভিস্ট। এতেই বোঝা যায়, রামপাল নিয়ে যে আন্দোলন তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনার সরকারের দুর্নাম করতেই রামপালকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সবাই দেশটাকে ভালবাসি। সুতরাং সবাই জেনে বুঝে কথা বলবেন। নিজের পায়ে নিজে যেন আমরা কুড়াল না মারি সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। নসরুল হামিদ বর্তমান সরকারের নেয়া বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের নানা সফলতা তুলে ধরে বলেন, টাকা কোন সমস্যা নয়। আমাদের ৩০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। আমাদের টাকা খরচের জায়গা নেই। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী খন্দকার আব্দুস সালেক। এতে বলা হয়, বড় প্রকল্প নিয়ে দেশে নানা বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের জন্য পরিবেশ ইস্যু, পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের বিষয়ে নিরাপত্তা ইস্যু, এলএনজির বিষয়ে দাম ইস্যু নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোর জন্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সক্ষমতা না থাকলে আমদানি করা জ্বালানির ব্যবস্থাপনা ও চুক্তির বিষয়ে সমস্যা হবে। আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে সমঝোতায় দক্ষতার পরিচয় না দিলে দেশের স্বার্থ বিঘিœত হতে পারে। বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে তথ্য সহজলভ্য হতে হবে। ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, যত বড় প্রকল্প তত বেশি দুর্নীতি। এসব প্রকল্প হচ্ছে দায় মুক্তি আইনে। তাই স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যায়। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে বেসরকারী খাতকে সহযোগী হিসেবে পেতে হলে নীতি নির্ধারণে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে হবে। পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের চুক্তি, আলোচনাসহ কোন তথ্যই সহজলভ্য নয়। শামসুল আলম বলেন, ইউনেস্কোর পরামর্শ না শুনে রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সুন্দরবন বিশ^ ঐতিহ্য তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। এতে প্রধানমন্ত্রীর পাওয়া জলবায়ু পুরস্কারের ওপর একটি চিরস্থায়ী কালিমা পড়বে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, পারমাণবিক বর্জ্য রাশিয়া ফেরত নেবে কিনা তা নিয়ে একটা বিতর্ক চলছে। রাশিয়া যদি এটা পরিশোধন করে আবার ফেরত দেয় তখন এই তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বোঝা না হয়ে সম্পদ হবে। কারণ পরিশোধনের পর আবারও ব্যবহার করা যায়। অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, গত আট বছর সরকার বড় বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু সময়মতো বড় কোন প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১০ সালের উদ্যোগ এলএনজি টার্মিনালের নির্মাণ কাজ এখনও শুরু হয়নি। ফলে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমলেও তার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে না। মর্তুজা আহমেদ ফারুক বলেন, বাপেক্স পাঁচ বছরে ১০৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা খুব উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
×