ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মংলা সাইলো ও নৌরুট উন্মুক্ত হওয়ায় বাগেরহাট আনন্দমুখর

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

মংলা সাইলো ও নৌরুট উন্মুক্ত হওয়ায় বাগেরহাট আনন্দমুখর

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত পুনঃখননকৃত মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌরুট উন্মুক্ত এবং খাদ্য নিরাপত্তায় নির্মিত বৃহত্তম খাদ্যগুদাম ‘মংলা সাইলো’র উদ্বোধন করামাত্রই হর্ষধ্বনি ও স্বতঃস্ফূর্ত করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠল গোটা বাগেরহাট। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাগেরহাটে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ দুই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে তিনি নিয়মিত ড্রেজিংয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র জন্য কেনা ১১টি ড্রেজারেরও উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বাগেরহাট কালেক্টরেট ভবনের হলরুমে বর্ণাঢ্য ‘শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান’-এর আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, নৌ সচিব অশোক মাধব রায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়েরর সচিব এএম বদরুদ্দোজা, বিআইডব্লিউটএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ বদরুল হাসান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকুসহ শত শত কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌপথটি চালু হওয়ায় আগের তুলনায় মোট ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে শ্যালা নদীর নৌপথটি বন্ধ করে দেয়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতির হুমকি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ চ্যানেলটি পুনঃখননের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বর্তমানে এ চ্যানেল দিয়ে পূর্ণ জোয়ারে ১৫ ফুট গভিরতার নৌযান চলাচল করতে পারছে। এছাড়া মংলা বন্দরের জেটি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক স্থাপনাসহ প্রকল্পটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৫শ’ ৭৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩শ’ ৭৭ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ২শ’ কোটি জাপানের জেডিসিএফ অর্থায়ন করেছে। নৌ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে ২৬ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ড্রেজার দিয়ে ১৮১ দশমিক ৮০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ড্রেজিংকৃত অংশে পলি ভরাটের কারণে সংরক্ষণ খননের আওতায় সর্বমোট ৬২ দশমিক ১২ লাখ ঘনমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র তিনটি ড্রেজার এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি ড্রেজারসহ আটটি ড্রেজার সংরক্ষণ ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নৌপথটি চালুর ফলে ৮১ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। এছাড়া মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের রমজানপুর এলাকায় একটি লুপকাট করায় আরও পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব কমে মোট ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে প্রায় ১৮টি ড্রেজার ও ১৫টি এক্সাভেটর দিয়ে এ খনন কাজ শুরু হয়। এদিকে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মংলা বন্দর থেকে ১৭ কিলোমিটার ভাটিতে জয়মনির ঘোল নামক স্থানে ৪২ একর জমির ওপর ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সাইলো নির্মাণ কাজ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এতে মোট ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আধুনিক এ কংক্রিট গ্রেইন সাইলোতে যান্ত্রিক উপায়ে খাদ্য খালাসের ব্যবস্থা থাকায় অপচয় এবং খরচ কমবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাগেরহাট সদর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা ও মংলা-রামপালের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, উল্লিখিত প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা ও মংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে, এটি গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, যা এ সরকার পূরণ করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর পক্ষে অভিনন্দন জানান।
×