ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ইংল্যান্ড শেষ টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশ ইংল্যান্ড শেষ টেস্ট শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বৃষ্টি পড়েই চলেছে। সবার চোখ আকাশের দিকে। বৃষ্টিই না শেষ পর্যন্ত আজ সকাল দশটায় শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। আর সেই নিয়তি কী? ড্র। বৃষ্টি যদি পাঁচদিনের মধ্যে দুইদিনও পড়ে, তাহলেইতো টেস্ট ড্র হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তা অবশ্য কেউই চান না। ক্রিকেটাররা চান খেলতে। আর সবাই চান, ক্রিকেটপ্রেমীরা চান; খেলা দেখতে। যদি শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির শঙ্কা দূর হয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বল মাঠে গড়ায়, তাহলে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়েই নামতে হবে। প্রথম টেস্টে ২২ রানে জিতে যে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড। ঢাকা টেস্টে যদি ইংল্যান্ড জিতে যায়, তাহলে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার সঙ্গে ইংলিশদের বিপক্ষে টানা পঞ্চম টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৩ সালে বাংলাদেশের মাটিতে, ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মাটিতে দুইদলের মধ্যকার সিরিজ হয়। প্রতিবারই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হয়। ইংল্যান্ডই দাপটের সঙ্গে ৮টি ম্যাচ জিতে। প্রতি সিরিজেই ব্যবধান দাঁড়ায় ২-০। বাংলাদেশ প্রতি সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয়। এবারও সেই একই নিয়তির সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। হারলেই হোয়াইটওয়াশ হবে। আর যদি কোনভাবে ফল বাংলাদেশের পক্ষে যায়, জয় মিলে বা ড্র হয়; তাহলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাসের সেরা সাফল্যই মিলবে। বাংলাদেশ পারবে সেই সাফল্য কুড়িয়ে নিতে? সম্ভব, উইকেট যেরকমই হোক; যদি ব্যাটসম্যান ও বোলাররা নিজেদের কাজটুকু, নিজেদের সামর্থ্য মতো নৈপুণ্য দেখাতে পারেন। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘উইকেটের চেয়েও বেশি নির্ভর করে আপনি কতটা ভাল করতে পারছেন। উইকেট যেমনই হোক, ভাল জায়গায় বল না করলে বা বল সিলেকশন ভাল না হলে, ভাল করা কঠিন। হতাশা (প্রথম টেস্ট হারের পর) আছে। কারণ, দিনশেষে আমরা জিতিনি। তবে সেই ক্ষুধাটা (জয়ের) আছে, আত্মবিশ্বাসও আছে। ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে টানা চারদিন খুব ভাল খেলেছি। আমরা জানি ইংল্যান্ড আরও স্ট্রংলি ফিরে আসার চেষ্টা করবে। তবে এখানে উইকেট আলাদা হবে। আশাকরি ওরা আগেভাগে বুঝে উঠতে পারবে না। আশাকরি আমরা ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে পারব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যদি জয়ের মতো সুযোগ আসে, আমরা অবশ্যই এবার হাতছাড়া করব না। আমাদের মূল লক্ষ্য অবশ্যই থাকবে, জয়ের মতো সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সেটা কাজে লাগানো।’ প্রথম টেস্টে ২৮৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও পারেনি বাংলাদেশ। ২৬৩ রানেই গুটিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে যে ২৭ রানেই শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ, সেখানেই দল পিছিয়ে পড়ে। এবার সেরকম কিছু না ঘটলেই হয়। তাহলে যে আত্মবিশ্বাস আছে, তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে দল। কিন্তু ইংল্যান্ড কী এবার চট্টগ্রাম টেস্টের মতো কোন সুযোগ দেবে? মিরপুরের উইকেটে সবসময়ই ব্যাটিংটা ভাল হয়। ব্যাটসম্যানরা উইকেট আঁকড়ে থাকলে রান পান। উপমহাদেশের উইকেটে যেহেতু স্পিনটাও ভাল হয়। তবে সেটি শেষে গিয়ে আরও তেজ দেখায়। শুরুতে পেসটাই বেশি ধরে। যেভাবে বৃষ্টি ঘিরে ধরেছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, পেসের গতি ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েই ছাড়বে। আর তা যদি হয়, তাহলেতো ইংল্যান্ডেরই বেশি সুবিধা। ইংল্যান্ড দলে পেসারের ছড়াছড়ি। স্টোকস, ওকস আছেন। এরসঙ্গে ব্রডের পরিবর্তে ফিন খেলবেন। তিন স্পেশালিস্ট পেসার খেলাবে ইংল্যান্ড। সেই তুলনায় বাংলাদেশ দলে আছেন দুইজন পেসার। রাব্বি ও শুভাশীষ। দুইজনের মধ্যে আবার একজনকে খেলান হতে পারে। স্পিনে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। সেখানেও ইংল্যান্ড ব্যবধান কমাতে চাচ্ছে। ব্যাটির পরিবর্তে স্পিনার জাফর আনসারিকে অভিষেক করান হবে। যিনি চট্টগ্রামে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। জাফর ছাড়াও মঈন ও রশিদ আছেন। বাংলাদেশের সাকিব, তাইজুল, মিরাজ আছেন। এরসঙ্গে একজন পেসার কমিয়ে শুভাগত হোমকেও যোগ করা হতে পারে। ইংল্যান্ড দলে ব্যাটসম্যানের ছড়াছড়ি। কুক, ডাকেট, রুট, ব্যালান্স, মঈন, স্টোকস, বেয়ারস্টো, ওকস, রশিদ আছেন। ব্যাটিংয়ে অবশ্য বাংলাদেশও শক্তিশালী। তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিব, গ্যাসট্রিক থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকা টেস্টে খেলার জন্য সুস্থ হয়ে যাওয়া সাব্বির, মিরাজ রয়েছেন। শুভাগত যোগ হলে আরেকজন ব্যাটসম্যানও বাড়বে। সবদিক বিবেচনা করলে দুইদলের মধ্যে আসলে পেস আক্রমণেই দুর্বল বাংলাদেশ। আর সেটিই ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে। ম্যাচে প্রভাব আরেকদিকেও পড়তে পারে। বাংলাদেশ যে বছরে খুব অল্প টেস্ট খেলে, তাতে করে টানা দুই ম্যাচেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়া কঠিন। একটি উদাহরণেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। একজনের টেস্ট অভিষেক ২০০৫ সালের মে মাসে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। তিনি বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। আরেকজনের টেস্ট অভিষেক পরের বছর, ২০০৬ সালের মার্চ মাসে। ভারতের বিপক্ষে। তিনি ইংল্যান্ড অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক। অথচ দুইজনের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতায় কত পার্থক্য! আজ মুশফিক তার ৫০তম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামবেন। সেই তুলনায় গত ১০ বছরে কতদূর এগিয়ে গেছেন কুক। ১৩৫তম টেস্ট খেলতে নামবেন। চট্টগ্রাম টেস্টেই ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন। টেস্ট খেলার মেজাজ, ধারাবাহিকতা, পরিস্থিতি বুঝে খেলার অভিজ্ঞতায় ইংল্যান্ড ‘যোজন-যোজন’ এগিয়ে। আর সেটিই না শেষ পর্যন্ত টেস্টে প্রভাব ফেলে। কুক বলেই দিয়েছেন, ‘জেতার তীব্র চেষ্টা থামেনি।’ শেষ পর্যন্ত ফল যদি ইংল্যান্ডের দিকেই যায়, আবার হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। এই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়েই নামবে মুশফিকবাহিনী।
×