ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশু হেল্পলাইন, মংলায় সাইলো ও নৌচ্যানেল উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

মানবিক গুণাবলী জাগিয়ে তুলতে হবে, যেন পশুত্ব জেগে না ওঠে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

মানবিক গুণাবলী জাগিয়ে তুলতে হবে, যেন পশুত্ব জেগে না ওঠে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে অনলাইনে বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছেন, সারাদেশের আদালতগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে নবনির্মিত যে কারাগার (কেরানীগঞ্জ) আছে, তার সঙ্গেই কোর্ট রুম থাকবে। যেসব আসামি ভয়ঙ্কর ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির, যাদের বারবার আদালতে আনা-নেয়া করাটা সমস্যা, তাদের জন্য ওখানেই আদালত বসবে। সেখানে তাদের আইনজীবীরা থাকবেন এবং অনলাইনে বিচার হবে। এ অনলাইনের বিচার কার্যক্রম শুরু করতে আমি ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি। আর শিশু আদালতের জন্য এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রকল্প তিনটি হলোÑ শিশুদের সুরক্ষায় ‘১০৯৮’ হেল্পলাইন, বাগেরহাটের মংলায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন শস্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কনক্রিট গ্রেইন সাইলো এবং খননকৃত মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেল ও এর ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জাতির জন্য সর্বনাশা প্রকল্প গ্রহণ করে এবং দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। এ কারণে অন্যের কাছে হাত পেতে চলতে হয়। আসলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চিন্তাভাবনাই ছিল দেশে খাদ্য ঘাটতি রাখা। কারণ খাদ্য ঘাটতি থাকলে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যায়। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ স্বাবলম্বী হয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মর্যাদার আসনে। বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি তা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার, যাতে আপাদকালীন সময়ে সঙ্কট মোকাবেলা করা যায়। শিশুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ‘হেল্পলাইন’র উদ্বোধন করে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজকে সচেতন করতে হবে। মানুষের মধ্যে সুপ্রবৃত্তি থাকে, কুপ্রবৃত্তিও থাকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সচেতনতা সৃষ্টি কতে হবে, মানুষের মধ্যে যেন পশুত্ব জেগে না ওঠে। নিজের ভেতরের মানবিক গুণাবলী জাগিয়ে তুলে সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অপরের ক্ষতি করতে গেলে সেই ক্ষতিটা যে নিজের হতে পারে সেই চিন্তা থেকে নিজের ভেতরের মানবিক গুণাবলীটা জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষের ভেতরের সুপ্রবৃত্তিগুলো যেন জাগ্রত হয় সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত এবং ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় স্থাপিত ‘চাইল্ড হেল্পলাইন (সিএইচএল)’ এর কল সেন্টারের ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে ২৪ ঘণ্টা এর সেবা পাওয়া যাবে। যে কোন শিশু ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে ঝুঁকি বা নির্যাতনের কথা জানিয়ে সহায়তা চাইতে পারবে। চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ এর কেন্দ্রীয় কল সেন্টারে কর্মরত সমাজকর্মীগণ দুস্থ এবং সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের টেলিফোনের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনমাফিক তথ্য ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করে থাকেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে চাইল্ড হেল্পলাইন বিষয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ১২৫ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি)’ শীর্ষক একটি কারিগরি প্রকল্পের আওতায় সমাজসেবা অধিদফতর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অনানুষ্ঠানিকভাবে ১০৯৮ এই হেল্পলাইনের কার্যক্রম শুরু করে। চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ ব্যবহারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭৯টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করাসহ মোট ২০৭০ জন শিশুকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। চাইল্ড হেল্পলাইনে এ পর্যন্ত মোট কল হয়েছে ৪৫ হাজার ৭০৫টি। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের কল সেন্টারে ফোন করে শেখ হাসিনা এই হেল্পলাইন সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অপর প্রান্ত থেকে অপারেটর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘আমি শিশু না। আমাকে অবশ্য ৭০ বছর বয়স্ক শিশু বলা যেতে পারে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ হেল্পলাইন উদ্বোধন করলাম। যারা এখানে কাজ করবেন, তারা সচেতন থাকবেন। আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করব, এই শিশুদের কিভাবে সাহায্য করা যায়। যখনই কোন শিশু বিপদে পড়বে, তারা এখানে ফোন করে সাহায্য পাবে। যারা অপরাধ করবে তারাও ভয় পাবে।’ বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হলো না। তাকে লেখাপড়া শেখাতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। হেল্পলাইনে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী অপারেটরের কাছে জানতে চান, ‘একজন ৭০ বছরের শিশু হিসেবে আমি কী সহায়তা পেতে পারি? জবাবে ১০৯৮ এর অপারেটর জানান, তথ্য সহায়তা সেবা, আইনী সেবা, কাউন্সিলিং সেবা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে শিশুকে উদ্ধারে সহায়তা পাওয়া যাবে। এছাড়া স্কুলে কোন সমস্যা হলেও শিশুরা বলতে পারবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অপকর্ম করবে তারা একটু ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে যে, সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে। আর এ লাইনটি যদি কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপব্যবহার করে তাহলে তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা আছে, যাতে বিনাকারণে কেউ বিরক্ত করতে না পারে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের শান্তিনিবাসে থাকা শিশুদের সঙ্গেও কথা বলেন। যাদের নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, শান্তিনিবাস ৫০ আসনের হলেও এ মুহূর্তে সেখানে ৬৫ জন রয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে শিশু ৫৬ জন; আর ৯ জন ছেলে শিশু। প্রধানমন্ত্রী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ১৭ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন, যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করে মেয়েটি। মেয়েটিকে স্বাবলন্বী হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাকে তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’ জবাবে মেয়েটি জানায়, সে শান্তিনিবাস থেকে ফিরে গিয়ে লেখাপড়া করতে চায়। এ শান্তিনিবাসে থাকা মাগুরার সালিখার আরেক তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কোরবানির ঈদের দুই দিন পর মেয়েটিকে বিক্রি করে দেয় তার স্বামী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৫ বছর বয়সী আরেক কিশোরীর পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল এক প্রবাসীর সঙ্গে। সেখান থেকে সমবয়সী এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায় মেয়েটি। পরে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের শান্তিনিবাসে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশে চাকরি করে বলেই তার সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে, এ বিপদ যেন কেউ না ডেকে আনে। শান্তিনিবাসে থাকা শিশুদের শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেয়া এক কিশোরী ও তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েরা বিপদে পড়লেই যে সাহায্য পাবে, এটা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে অপরাধ প্রবণতাটাও কমে যাবে। সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সকলেরই মা-বোন আছে, নিজের সন্তান আছে। নিজের সন্তানের নিরাপত্তা দেয়া যেমন দায়িত্ব, অপরের ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দেয়াও তাদের দায়িত্ব। এটা মনে রাখতে হবেÑ অন্যের মেয়ের ক্ষতি করতে গেলে, নিজের বোন বা মেয়েরও ক্ষতি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজটাকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত, তারা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। তাদের মন-মানসিকতা ভাল হবে। তারা লেখাপড়া শিখবে বা যে কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবেÑ সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এভাবেই সমাজকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ভিক্ষা করে যাবে আর আমি ভিক্ষুকের সরদার হয়ে বসে থাকব, তার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমরা নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে চলব। এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ অর্জন আমাদের চিন্তাভাবনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষক ও বর্গাচাষীদের দেয়া নানা সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনাসহ খাদ্য ও কৃষি খাতের উন্নয়নে তার সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনাই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ অন্যের কাছে হাত পাতবে না। আমরা ভাবি নিজেরা কিভাবে দেশের মানুষকে খাদ্যের নিরাপত্তা দেব। প্রধানমন্ত্রী তাদের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা তখন যখন ক্ষমতায় ছিলাম ৫ বছরে খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে যাই। খাদ্য ঘাটতি রাখার চিন্তাভাবনা যাদের সেই বিএনপি এই উদ্বৃত্ত অবস্থাকে ঘাটতিতে নামিয়ে আনে। আমরা ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় এসে দেখলাম দেশে আবারও খাদ্য ঘাটতি। সেই অবস্থার বদল করেছি আবার। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যিনি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাঙালী জাতি নিজে মাথা উঁচু করে চলবে। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেই আওয়ামী লীগ কাজ করছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নজির আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের উদ্বোধন। খুলে গেল মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল ॥ নৌ-চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে পুনঃখনন করা মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল। বৃহস্পতিবার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি উন্মুক্ত করে দেন। এ সময় তিনি নবনির্মিত ১১টি ড্রেজারেরও উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে এ চ্যানেলটি যেন সবসময় সচল থাকে সেজন্য নিয়মিত ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, মংলা বন্দরটা সচল রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন। এটি ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। বাংলাদেশের প্রতিটি নদী সচল রাখতে প্রতি বছর মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নৌপথ বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং খুব সস্তায় পণ্য পরিবহন নৌপথেই হয়ে থাকে। শ্যাওলা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলে সুন্দরবন ও পরিবেশের ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্যাওলা নদী ডলফিনের একটা জায়গা। ওখানে ডলফিন আসে। ওই নদীর পানি আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার খায়। ওই জায়গাটা বন্যপ্রাণীর একটা অভয়ারণ্য ছিল। তিনি বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় শ্যাওলা নদী দিয়ে আমাদের জাহাজগুলো চলাচল শুরু করে। এটা সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতাকারী পরিবেশবিদদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি। সেটা নিয়ে তারা কেঁদে মরেন। তিনি বলেন, ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হলো। এর সঙ্গে সংযুক্ত ২৩৪টি খালের মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ করা হলো। বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম নষ্ট হলো। এসব নিয়ে আমাদের পরিবেশবিদদের কখনও একটু টু শব্দও করতে শুনিনি। তাদের কোন কান্নাকাটিও শুনিনি, কোন আন্দোলনও দেখিনি। কেউ কোন কথাও বলেননি। নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সমস্যা এখানে ড্রেজার নেই, মাটি রাখার জায়গা নেই। তারপরও একরকম জোর করে, সোজাসুজি হুকুম দিয়ে আমরা এই খাল কাটার কাজ শুরু করি। নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, নৌ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজটি করেছে। ২৩৪টি সংযোগ খালে দুই হাজারের বেশি বাঁধ অপসারণ করেছে। খননের বাকি আরও ৮৩টি খাল খনন করতে গণভবনে উপস্থিত পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল হককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাকি খালগুলোর খনন শেষ করতে সেখানকার এলাকাবাসীরও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এ সময় খুলনা শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের সফলতার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লার রহমান, সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি ঈমান আলী, ইউনিসেফ প্রতিনিধি সারা বোরদাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেনÑ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ। নৌ-রুটটি চালুর ফলে সুন্দরবনের ভেতরে শ্যাওলা নদী হয়ে যে নৌপথটি ছিল, এর থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। এখন আর সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে সুন্দরবনের ক্ষতি করে, ঘুর পথে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হবে না। মংলা-ঘষিয়াখালী এ নৌ-রুটটির দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি খননের মাধ্যমে উন্মুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে মংলা-ঘষিয়াখালী সংযুক্ত খালগুলোর মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ ও বিভিন্ন পোল্ডার নির্মাণ করায় ভরাট প্রক্রিয়া শুরু হয়। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে ২৩৪টি সংযোগ খাল ছিল। ২০০১ সালের পর থেকেই এ চ্যানেলের নাব্য সঙ্কট শুরু হয় এবং ২০১০ সাল থেকে এটি পুরোপুরি শুকিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেলে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে নৌপথটি পুনরায় খনন শুরু করা হয়। নৌপথটির ১৩-১৪ ফুট গভীরতা ও ২-৩শ’ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হয়েছে। একই সঙ্গে খনন করা হয়েছে সংযোগ খালগুলোকে। নৌপথটি পুনঃখনন করার পর ২০১৫ সালের মে মাসে পরীক্ষামূলভাবে খুলে দেয়া হয় এবং ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন গভীরতায় মোট ৩৫ হাজার ১৫টি জাহাজ এ নৌপথে চলাচল করেছে।
×