ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নজরদারি নেই বিসিকের

চট্টগ্রামে বিদেশী ব্র্যান্ডের নামে গাড়ির নকল পার্টস বাজারে

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

চট্টগ্রামে বিদেশী ব্র্যান্ডের নামে গাড়ির নকল পার্টস বাজারে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বিদেশী ব্র্যান্ড ও কোম্পানির নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে গাড়ির পার্টস তৈরি করা হচ্ছে আবাসিক এলাকায়। শিল্প এলাকা বাদ দিয়ে আবাসিক এলাকায় এ ধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও বিসিকের কোন নজরদারি নেই। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে বেরিয়ে এসেছে রাবার কারখানার নামে অবৈধভাবে গড়ে উঠা গাড়ির পার্টস কারখানা। মিরসরাই কেন্দ্রিক এ কারখানার মালিকানা হলেও কারখানার সকল শ্রমিক ও কর্মচারী বড়ুয়া সম্প্রদায়ের। প্রশ্ন উঠেছে, মালিক থেকে শুরু করে শ্রমিক পর্যন্ত কেন একই সম্প্রদায়ের লোক ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযানের পর গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকান এই কোম্পানির নাম ব্যবহার করে গাড়ির পার্টস অবৈধভাবে তারা তৈরি ও বাজারজাত করে আসছিল। তবে নগরীর বিভিন্ন পার্টস মার্কেট থেকে আমেরিকার তৈরি বিভিন্ন পার্টস হুবহু নকল করে ও মোড়কীকরণের মধ্য দিয়ে বাজারজাত করে আসছিল অমল বড়ুয়ার এনজিকে রিপন অটো রাবার কারখানা। জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে আমেরিকান ব্র্যান্ড ও কোম্পানি এনজিকে বিশ্ববাজারে আসে। দীর্ঘ প্রায় ৪৭ বছরের প্রতিষ্ঠায় এনজিকে অটোমোটিভ, কমার্শিয়াল এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল, লন এ্যান্ড গার্ডেন মেরিন মোটরসাইকেল এ্যান্ড রিকোয়েশন টাইপের পার্টস তৈরি করে আসছে। এনজিকে মূলত তৈরি করে কয়েল প্লাগ, গ্লো প্লাগ, ইনজেনশন ওয়্যার, অক্সিজেন সেন্সর, স্পার্ক প্লাগ, শতভাগ গ্যারান্ট্রি দিয়ে আমেরিকার এই প্রতিষ্ঠানটি সপ্তাহে শনি ও রবিবার ব্যতীত অন্যান্য দিনে তাদের প্রোডাক্ট তৈরি করে আসছে। সে অনুযায়ী গ্রাহক সাধারণ এমনকি তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগে পরিপূর্ণ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর যেমন ব্যবহার করছে, তেমনি উৎপাদিত যন্ত্রাংশের বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য থাকলেও তা ওয়েবসাইটের (ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ ডট এনজিকে ডট কম) মাধ্যমে জানানোর নির্দেশনা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব বাজারে সমাদৃত। অভিযোগ উঠেছে, এ প্রতিষ্ঠানের নাম ও প্রস্তুতকৃত আইটেম বাদ দিয়ে অমল বড়ুয়া নগরীর আকবর শাহ থানাধীন বিশ্বকলোনী আবাসিক এলাকায় গড়ে তুলেছেন অবৈধ পার্টস কারখানা। মূলত এনজিকে যেসব আইটেম তৈরি করে তার বিপরীতে অন্য আইটেম তৈরির মধ্য দিয়ে রাবার কারখানায় তৈরি হচ্ছিল গাড়ির পার্টস। বিসিকের পক্ষ থেকে রাবার কারখানার নামে সনদ বা অনুমতিপত্র নেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়েও অমল বড়ুয়ার ভাই রতন বড়ুয়া পুলিশকে কোন তথ্য দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (উত্তর-দক্ষিণ) পরিতোষ ঘোষ জনকণ্ঠকে জানান, কারখানার মালিক অমল বড়ুয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ভাইসহ কর্মরত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা অবৈধভাবে তৈরির বিষয়টি স্বীকার করেছে। নগরীর বিভিন্ন পার্টস মার্কেট থেকে যন্ত্রাংশ কালেকশন করে হুবহু তা তৈরি ও বাজারজাত করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অমল বড়ুয়াকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে, কৈবল্যধাম শিল্প এলাকার আওতায় থাকা বিশ্বব্যাংক কলোনী আবাসিক এলাকায় প্লট নম্বর ২৮, ব্লক-এ ঠিকানায় এনজিকে রিপন অটো রাবার কারখানা রয়েছে। এ কারখানার মালিক অমল বড়ুয়া হলেও বুধবার অভিযানের সময় তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ভাই রতন বড়ুয়া, কর্মচারী ইমন বড়ুয়া, তাপস বড়ুয়া, রিজভী বড়ুয়া, সুমিত্র বড়ুয়া, অন্তু বড়ুয়া, ছোটন বড়ুয়া ও সৈকত বড়ুয়াকে কারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সহোদর যেমন রয়েছে, তেমনি একে অপরের আত্মীয়স্বজন এমন সম্পর্কও রয়েছে এ কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে। কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পিকআপের কোস্টার মন্টিন ৫০টি, ইয়েলেব মন্টিন ৫০টি, ক্যান্টার মন্টিন ২০টি, জার্নিং মন্টিন ২০টি, মাইক্রোবাসের জাম্পিং স্প্রিং বুশ ৫০টি, ট্রাকের ডিভিআর ১৫০টি, হিরো গাড়ির এফএফ ৮০টি ও রিয়ার ৮০টি, পিকআপের গিয়ারবাক্স ১শটি এবং পিকআপের নিকো (৪ ঘাট ও ৬ ঘাট) ৪৫০টি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এনজিকের নাম ব্যবহার করে এসব যন্ত্রাংশ হুবহু তৈরি করা হলেও মূলত প্যাকেটজাত ও বাজারজাতের সময় দেশীয় পণ্য ঘোষণা না দিয়ে বিদেশী পণ্যের দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ তৈরিতে কারখানায় ব্যবহৃত বেশকিছু মেশিনারিজ জব্দ করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
×