ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৮০ শতাংশই যাচ্ছে বাণিজ্য খাতে বিআইবিএমের সেমিনারে বক্তারা

উৎপাদনশীল খাতে ২০ শতাংশ এসএমই ঋণ বিতরণ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

উৎপাদনশীল খাতে ২০ শতাংশ এসএমই ঋণ বিতরণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে যে বিনিয়োগ হয় তার প্রায় ৮০ শতাংশই হচ্ছে বাণিজ্য খাতে। বাকি মাত্র ২০ শতাংশ যাচ্ছে শিল্প ও উৎপাদনশীল খাতে। কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য এসএমই বাণিজ্য নয়, শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে এক সেমিনারে সংশ্লিষ্ট খাতের পেশাজীবীরা একথা বলেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ার?ম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ, বেসরকারী খাতের ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম চৌধুরী, বিআইবিএমের সম্মানিত ফেলো ড. মোহাম্মদ ইউনুস। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সূর চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিআইবিএমের পক্ষে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে প্রায় ৬৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালের প্রথম ছয় মাসে এর পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৩৭৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এতে বলা হয়, চলতি বছরে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ১৩ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে আট শতাংশ বেশি। তবে আলোচ্য সময়ে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬১ দশমিক ৩৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। ২০১৫ সালে এ খাতে এক লাখ ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ হয়েছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি বিতরণ হয়েছিল। গত বছর প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণের হার ছিল ৫৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, চলতি বছর ব্যবসা খাতে ৪৩ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। আর শিল্প খাতে ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এসকে সূর চৌধুরী বলেন, সরকার অন্তর্ভুক্তিমূক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে এটি খুব জরুরী। এক্ষেত্রে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে এজন্য শিল্প বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। যাতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিচ্ছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করবে কে। তবে এর তদারকি করতে হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সামনের সারির কর্মকর্তারা। তাদের উৎসাহ দিতে হবে। যাতে এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে কাজ করে। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে এসএমই বিনিয়োগ করছে ব্যাংকগুলো। তবে এর মান নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। প্রায় ৮০ শতাংশই যাচ্ছে বাণিজ্য খাতে। এতে লাভ হচ্ছে না। উৎপাদনশীল খাতে যাতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে এজন্য নীতি তৈরি করতে হবে। ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির জন্য এসএমই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে সঠিকভাবে। প্রয়োজনীয় তদারকিও থাকতে হবে। সেমিনারে বক্তারা বলেন, শিল্প খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সরাসরি যেহেতু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এ কারণে এ উপখাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে উৎসাহিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো সব সময় ব্যবসায় বেশি ঋণ দিতে উৎসাহ দেখায়। ২০১৬ সালেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সব চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে ব্যবসা উপখাতে। মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ৬২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ব্যবসায় বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে শিল্প খাতে যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আর সেবা খাতে দেয়া হবে ১৩ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
×