ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ব ইউরোপে রাশিয়াকে রুখতে বিমান পাঠাচ্ছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র

মস্কো-ন্যাটো উত্তেজনা চরমে

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

মস্কো-ন্যাটো উত্তেজনা চরমে

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন এবং পূর্ব ইউরোপীয় মিত্রদের শক্তি বৃদ্ধি করতে পশ্চিমা জোটের নয়া তৎপরতাকে কেন্দ্র করে এ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এদিকে ন্যাটোর চাপের মুখে রাশিয়া স্পেনের এক ভূখণ্ড থেকে এর যুদ্ধ জাহাজগুলোতে পুনরায় জ্বালানি ভর্তি করার চেষ্টা পরিত্যাগ করেছে। খবর ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও ইয়াহুনিউজের। পূর্ব ইউরোপে রাশিয়াকে রুখতে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বিমান ও সৈন্য পাঠাচ্ছে। বুধবার ব্রিটেন আগামী বছর রোমানিয়াতে জঙ্গী বিমান পাঠাবে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডে সৈন্য ট্যাংক ও গোলন্দাজ বাহিনী পাঠাবে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডে সৈন্য, ট্যাঙ্ক ও গোলন্দাজ বাহিনী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি হবে ঠা-া লড়াই শেষ হওয়ার পর রুশ সীমান্তে ন্যাটোর সবচেয়ে বেশি মাত্রায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধিই অংশ। জার্মানি, কানাডা ও ন্যাটোর অন্যান্য মিত্র ব্রাসেলসে বুধবার অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক বৈঠকে সেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সৈন্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একই দিন ক্লুজ ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত দুটি রুশ যুদ্ধবিমান সুইডেন ও ডেনমার্কের মধ্যবর্তী বাল্টিক সাগরে প্রবেশ করে। এদিকে, মস্কো স্পেনের উত্তর আফ্রিকান ছিটমহল বন্দর সিউটায় তিনটি যুদ্ধজাহাজে পুনরায় জ্বালানি ভর্তি করতে দিতে স্পেনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া এ খবর জানায়। ওই অনুরোধ অগ্রাহ্য করতে মাদ্রিদ মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ক্রমশ চাপের মুখে পড়লে মস্কো ওই পদক্ষেপ নেয়। এসব জাহাজ সিরিয়ায় বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ন্যাটো মিত্ররা স্পেনকে জানায়। ওই সব জাহাজ রাশিয়ার একমাত্র বিমানবাহিনী জাহাজ এ্যাডমিরাল কুজনেৎসভসহ গঠিত এক নৌবহরের অংশ। এ বহরটি সিরীয় উপকূলের অদূরে ইতোমধ্যে মোতায়েন অন্য ১০টি রুশ নৌযানের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, মস্কোর কাছে রাশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে মোতায়েন প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার রুশ সৈন্যের অনুপাতে বাল্টিক দেশসমূহ এবং পূর্ব ইউরোপে নতুন ৪ হাজার সৈন্যের বাহিনী মোতায়েন এক পরিমিত পাল্টা ব্যবস্থা। ন্যাটোর লক্ষ্য হলো ইউরোপের সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোকে রাশিয়ার করতলগত হওয়ায় হাত থেকে রক্ষা করা। এর আগে মস্কো ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন জানান, তার দেশ মে মাস থেকে ৮০০ সৈন্যের এক ব্যাটেলিয়ন এস্তোনিয়ায় পাঠাবে। ফরাসী ও ড্যানিশ সৈন্যরা ব্রিটিশদের সহায়তা করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের জুনের মধ্যে প্রস্তুত রাখতে চায়। লন্ডন কৃষ্ণসাগরের চারদিকে টহল দিতে রোমানিয়ায় উক্ত টাইফুন জঙ্গী বিমান ও পাঠাচ্ছে। তুরস্ক এ টহলদানে সহায়তা করবে। কানাডা লাটভিয়ায় ৫০০ সৈন্য পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছে। জার্মানি লিথুয়ানিয়ায় ৪০০ থেকে ৬০০ সৈন্য পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছে। নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া ও লুক্সেমবার্গ থেকেও সেখানে বাড়তি সৈন্য যাবে। ন্যাটোর পরিকল্পনা হলো আগামী বছরের প্রথম থেকে মোট প্রায় ৪০০০ সৈন্য নিয়ে চারটি ব্যাটল গ্রুপ গঠন করা। তাদের সহায়তা করবে ৪০ হাজার সৈন্যের দ্রুত মোতায়েনক্ষম এক বাহিনী। প্রয়োজন হলে আরও বাহিনী এগিয়ে আসবে। রাশিয়া এর জাহাজগুলোতে আবার জ্বালানি ভরতে কি করবে তা স্পষ্ট নয়। এসব জাহাজ রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় নৌবহরের সদর দফতর সেভারোমরস্কস্থ মুরমানস্কের কাছাকাছি অবস্থান করে থাকে। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া কোন তেলবাহী ট্যাংকার পাঠাতে পারে না ন্যাটোর অন্য মিত্র গ্রীসে জ্বালানি চাইতে পারে কিন্তু স্পেনের মতো গ্রীসকে নিয়েও বিতর্ক দেখা দিতে পারে। রুশ জাহাজগুলো সিরিয়ার দিকে যেতে থাকায় পাশ্চাত্য ও মস্কোর মধ্যে অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ন্যাটোর নৌযানগুলো সিরিয়া অভিমুখী রুশ বহরকে অনুসরণ করছে। জোট কর্মকর্তারা বলেন, তারা সম্প্রতি বাল্টিক সাগরে প্রবেশ করেছে এমন দুটি রুশ হাজাজের দিকেও দৃষ্টি রাখছেন। পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করেন, কালিনিনগ্রাডস্থ নৌ ঘাঁটির শক্তি বাড়াতেই মস্কো জাহাজগুলো পাঠিয়েছে এবং এতে ওই অঞ্চলে আরও সংঘাত দেখা দিতে পারে। কালিনিনগ্রাড ন্যাটো মিত্র পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে অবস্থিত এক রুশ ছিটমহল।
×