ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রগতির মাইলফলক

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

অগ্রগতির মাইলফলক

দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সোপানে চড়ে তার পথচলা ক্রমশ উর্ধগামী। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্র তার সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০২১ সালের আগেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে বলে আশাবাদ এখনও উচ্চকিত। তলাবিহীন ঝুড়ির একদা দেশটি সর্বক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠার পথে সবল বেগে এগিয়ে যাচ্ছে। কোন বাধা, প্রতিবন্ধকতা তাকে প্রতিহত করার সাধ্য রাখে না। তাই দেশের অর্থনীতি আজ স্পর্শ করেছে নতুন ফলক। অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাত দশমিক এগারো শতাংশে পরিণত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির মাত্রার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশ থেকে গরিবী যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি বাড়ছে সঞ্চয়। এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির বৃদ্ধি মানেই এক দশমিক পাঁচ শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস। বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন ঘটছে দ্রুত গতিতে। ফলে প্রাক্কলিত হিসাবের চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে প্রবৃদ্ধি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে। ধারণা করা হয়েছিল প্রবৃদ্ধির হার হবে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। অবশ্য বেশ ক’বছর ধরেই প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের মধ্যেই অবস্থান করছিল। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এমনটাই বলে আসছিল সংখ্যা উপাত্ত দিয়ে। তাদের সেই ধারণাকে পশ্চাতে ফেলে দেশ এগিয়ে গেছে এ খাতে অনেক বেশি পরিমাণে। জাতীয় বাজেটেও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সাত শতাংশ। কিন্তু প্রবৃদ্ধি তা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ যদি প্রতি বছর আট দশমিক আট শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, তাহলে ২০৩০ সালে অতি দরিদ্রের হার দুই দশমিক ছিয়ানব্বই শতাংশে নেমে আসবে। বিশ্বে যে হারে দারিদ্র্য কমছে, বাংলাদেশে কমছে তা দ্রুতহারে। শ্রম থেকে আয় বাড়ছে এবং প্রতিটি পরিবারে কর্মযোগ্য মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির সুফল আগের চেয়ে বেশি পাচ্ছে জনগণ। উন্নত দেশগুলো প্রবৃদ্ধি অর্জনে হিমশিম খেলেও বাংলাদেশে গড় প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। গত চার বছর ধরে গড়ে প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক এক শতাংশে স্থির ছিল। প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার কারণ শিল্প ও সেবা খাতের ওপর ভর করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তবে কৃষি খাতে কমেছে। এখন কোন কোন খাত এবং উপখাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে কেন বেড়েছে তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। তা না হলে এসব খাতে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, বর্ধিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখার কারণে। চার বছর আগেও বিশ্বব্যাংকের কোন প্রতিবেদনে শীর্ষ পঞ্চাশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকত না। থাকত পঞ্চাশের পর। চলতি বছর চলতি মূল্য ও পারচেজিং পাওয়ার প্যারেটি (পিপিপি) এই দুই ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে উভয়ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। দেশের জিডিপির বর্তমান আকার দাঁড়িয়েছে সতেরো লাখ বত্রিশ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও মাথাপিছু আয় এক ডলার কমেছে। এর কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বদলে যাওয়া। ডলারের দাম বাড়ায় এ অবস্থা হয়েছে। গত তিন মাসে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের বাজেটে সাত দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও তা বেড়ে যাবে। আগামী পাঁচ বছরে ক্রমশ তা বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সেজন্য কৃষি ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানো জরুরী। অবশ্য উন্নত দেশগুলোতে শিল্প ও সেবা খাতের তুলনায় কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক কমই হয়। দেশ দ্রুত মধ্যম আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির বৃদ্ধিসহ সার্বিক অর্জন ধরে রাখাই হবে মূল কাজ। বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে এমন স্বপ্ন পূরণে দেশবাসী এগিয়ে আসবেই।
×