ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গবর্নরের নির্দেশ

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানে অনিয়ম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কনফারেন্স হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে ফজলে কবির বলেন, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ম হচ্ছে। এ কারণে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যে কোন ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর অবস্থানে থাকবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর ফল ভোগ করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপী ঋণ প্রায় ৮ শতাংশ যা মোটেই সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে গবর্নর বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা বিদ্যমান নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে পরিচালকদের ব্যক্তিগত ঋণ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানে অনিয়ম, শ্রেণীকৃত ঋণকে অশ্রেণীকৃত ঋণ হিসেবে দেখানোসহ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি এসব অনিয়মের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। ফলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠানে তা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। মাত্রাতারিক্ত অনিয়মের কারণে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাজারে ধার্যকৃত সুদহারের চেয়ে অযৌক্তিকভাবে বেশি সুদ আরোপ করবেন না। মনে রাখবেন, আর্র্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদহার তহবিল ব্যয়ের ৫ শতাংশের বেশি হওয়া সমীচীন নয়। বিনিয়োগ সম্পর্কে গবর্নর বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ শিল্পখাতে ৪৩ শতাংশ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৮ শতাংশ ও হাউজিংয়ে ১৭ শতাংশ। কিন্তু কৃষিতে দুই শতাংশেরও কম। তাই এ খাতে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাসেল নীতিমালা অনুযায়ী কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম আবশ্যকীয় মূলধন তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের নিচে। শীঘ্রই এই মূলধন ১০ শতাংশের উপরে উন্নীত করতে হবে। বৈঠক শেষে ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এসব খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিচালকদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে শেয়ারের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ নেয়ার বিধান রয়েছে। কেউ যেন তথ্য গোপন করে এর চেয়ে বেশি ঋণ নিতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের কারণে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যেন অনিয়মের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তবে রেড জোনে বা বেশি ঝুঁকিতে থাকা ১৫টি আর্র্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়। এ সময় এসব প্রতিষ্ঠানকে ফটকাবাজি না করে উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে বিনিয়োগ করারও নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকের মতো আচরণ না করে বরং ব্যবসায় মনোযোগ দেয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন-বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান মফিজউদ্দিন সরকার বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর ডিপোজিটের ২ শতাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়টি বীমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-আইডিআইরএকে জানানো হবে বলে গবর্নর আশ^াস দিয়েছেন। এছাড়া বন্ড মার্কেটে পুনরায় কর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে, যদিও এটি এনবিআরের ওপর নির্ভর করে তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গবর্নর ফজলে কবির। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গুড গবর্ন্যান্স বা সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার বিষয়টি স্বীকার করে মফিজউদ্দিন সরকার বলেন, নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক আমরা উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া বর্তমানে বিদ্যমান সার্ভিস চার্জ বা প্রসেসিং ফি শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক শতাংশ ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ করার আবেদন করা হয়েছে।
×