স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে কোচিং সেন্টার, পেশাদার লোকজন, শিক্ষক থেকে শুরু করে বিজি প্রেসের লোকজন জড়িত বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সব মিলিয়ে চারটি চক্র জড়িত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অপরাধের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, মূল প্রশ্ন ‘ফাঁস করতে না পারলেও’ ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্ন তিন লাখ টাকায় বিক্রি হয়। বুধবার সচিবালয়ের এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করার কিছু পেশাদার লোক আছে। তারা দীর্ঘদিন থেকে এ কাজ চালিয়ে আসছে। কিছু লোক আছে মাঝে মধ্যে যুক্ত হয়; এরা দুই রকমের বেনিফিট নিতে চায়। তবে কবে, কারা, কোন পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্ন এত টাকায় বিক্রি করেছে- সে তথ্য প্রকাশ করেননি মন্ত্রী।
নাহিদ বলেন, যারা পেশাদার তাদের চিহ্নিত করতে বিজি প্রেসকে আমলে নেই। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন লিংক বের করতে পারি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের লিংক করে তাদের আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসে। দুই-একজন যারা আছে, তারাও দৃষ্টির মধ্যে চলে এসেছে। নাহিদের ভাষায়, এই প্রতারক চক্রের একটি উদ্দেশ্য হলো প্রশ্ন ফাঁস করে কিছু আয় করা। আবার সরকারকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন এবং শিক্ষা কার্যক্রমকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করতেও প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন সত্য-মিথ্যা দুটোই খুব সহজে প্রচার করা যায় মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, দেখা যাচ্ছে, আসল প্রশ্ন যেহেতু বের করতে পারে না, তাই নকল প্রশ্ন বের করছে। অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এভাবেই প্রতারণা করে বেড়াচ্ছে চক্রটি। ভর্তি পরীক্ষার একটি চক্রকে তারা (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) ধরেছেন, যারা ভুল প্রশ্ন প্রচার করেছে- এ কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো ওই প্রশ্নই তারা বিক্রি করেছে পাঁচ হাজার থেকে তিন লাখ টাকায়। ভুল প্রশ্ন, বানানো মিথ্যা বিষয়। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বুধবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সভা করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবার জেএসসি-জেডিসির প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ‘সম্ভাবনা নেই’ দাবি করে তিনি বলেন, বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি এখন আর আগের মতো নেই। বলা যায় নকলমুক্ত পরীক্ষা। তবে ছোটখাটো ভুলত্রুটি থাকতে পারে, সেটা অন্য জিনিস। তিনি বলেন, যারা ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি করে তাদের সবাইকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত থাকতে পারে সবার তালিকা করা হয়েছে। এসব করে কেউ পার পাবে না, ধরা পড়তেই হবে। কিছু শিক্ষকও প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ কেউ ধরাও পড়েছেন। কিছু শিক্ষক নজরদারির মধ্যে আছেন। কোচিং সেন্টারগুলোতেও নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা খুবই দুঃখিত হই, যখন শুনি যে আমাদের শিক্ষকরাও এসব কাজে জড়িত হয়ে পড়েন। এ কারণে পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশ কমিয়ে দিয়েছি।
আগামী ১ থেকে ১৭ নবেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট ( (জেডিসি) পরীক্ষা হবে। এবার দেশের দুই হাজার ৭৩৪টি কেন্দ্রে ২৪ লাখ ১০ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে ১১ লাখ ২৩ হাজার ১৬২ ছাত্র এবং ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৩ ছাত্রী। আট বোর্ডের অধীনে এবার জেএসসিতে ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৪ জন এবং মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭২ জন পরীক্ষা দেবে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানান। পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজেদের প্রস্তুত কর, অন্য কোন দিকে মন দেবে না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ফল ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।