ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হুটড়া- আমনের আগাম জাতের আবাদ নিয়ে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

হুটড়া- আমনের আগাম জাতের আবাদ নিয়ে তোলপাড়

ডি.এম. তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ধানের নাম ‘হুটড়া’। আগাম জাতের এ ধান কাটা শুরু হয়েছে আশ্বিনের শেষ সপ্তাহে। অর্থাৎ অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। গত ১৮ অক্টোবর ৩ কার্তিক দৈনিক জনকণ্ঠের শেষের পাতায় এ আগাম জাতের (আমন) ধান কাটার একটি ছবি বের হলে তোলপাড় শুরু হয় পুরো কৃষি মন্ত্রণালয়ে। খামার ভবনের চত্বরজুড়ে নানান উর্ধতন কৃষিবিদ কর্মকর্তাদের মধ্যে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। বরেন্দ্র অঞ্চলের এ সাফল্য যে কৃষি বিভাগে নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি হওয়া এ তোলপাড়। খুবই জনপ্রিয় ও অধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সরকারের অন্যতম সৈনিক বিপ্লবী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর চোখ না এড়ানোয় তিনি জনকণ্ঠের ছবি দেখামাত্র কৃষি মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন আগাম এ নতুন জাতটির খোঁজখবর নিয়ে অবিলম্বে তার টেবিলে রিপোর্ট পেশ করার। কারণ একটাইÑ আগাম এ জাতটি ওঠা বা কাটার পর একটা দীর্ঘ সময় পাওয়া যাবে নানান জাতের রবি চাষের। তারপর যথাসময়ে কৃষকদের অসুবিধা হবে না বোরো আবাদের। সনাতন নিয়মে বা পূর্বের মতো আমনের জমিতে মৌসুম শেষে রবি চাষ করলে সেই জমিতে বোরো আবাদ কঠিন হয়ে পড়ত সময় স্বল্পতায়। জমি থাকত অনাবাদী। কিন্তু এই ধান চাষ করলে জমি আর অনাবাদী থাকবে না। কিন্তু এ আগাম নতুন জাত ‘হুটড়া’ ধান কাটার পর রবি আবাদ করলেও হাতে যথেষ্ট সময় থাকবে বোরো আবাদের। কারণ মাঠে থাকে ৯৫ দিন। আর বীজতলায় মাত্র ২০ দিন। তাই কৃষি মন্ত্রণালয় বড় ধরনের মনোযোগ দিয়ে আগাম নতুন জাতের খবরাখবর নিতে শুরু করে। বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণার (বিনা) এক উর্ধতন কর্মকর্তা ছুটে আসেন গোদাগাড়ীর বরেন্দ্রর ভিকারপাড়া কান্তাপাশায়। রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা হলেও এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার একেবারে লাগোয়া একটি বরেন্দ্র উপজেলা। তাই ছবিটি প্রকাশের পর পরই বরেন্দ্রর পাশাপাশি দুই জেলার কৃষি সম্প্রসারণে বাড়তি ঝড়ো উষ্ণ ঢেউ এসে লাগে। প্রথম চোটেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচারের উপ-পরিচালক কৃষি গবেষক কৃষিবিদ ডক্টর সাইফুর যোগাযোগ করেন গোদাগাড়ী কৃষি উপজেলা কর্মকর্তা তৌফিকের সঙ্গে। নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনে কোন ধরনের কৃত্রিমতা আছে কিনা, কিংবা কোন রাসায়নিক ব্যবহার করে এ সাফল্য কিনা। তাছাড়া এর বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত সব ধরনের খুঁটিনাটি সংগ্রহ করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে জানানোর পর পরই ছুটে আসেন বিনা কর্মকর্তা। তিনি সরাসরি মাঠে গিয়ে কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে কিছু ধান সংগ্রহ করে ফিরে গেছেন মন্ত্রণালয়ে। উদ্দেশ্য একটাই- এর সাফল্য যাচাইবাছাই করে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ গোটা দেশে আগাম জাতের এ আমন জাতটি (হুটড়া) ছড়িয়ে দেয়া বা সম্প্রসারিত করা। একই সঙ্গে কিষান কিষানিদের বোঝানো এর শুভ ফল। যাতে তাদের মুখে আরও হাসি ফুটে, আগাম জাতের ‘হুটড়া’ আমন আবাদ বা চাষ করে।
×