ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘশিরীষে মুগ্ধ প্রকৃতি

ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে দারুণ রঙিন ফুল

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে দারুণ রঙিন ফুল

মোরসালিন মিজান ॥ প্রকা- বৃক্ষ। কয়েকতলা বিল্ডিংয়ের মতো উঁচু। মাপজোখ করলে ২০ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত হয়ে যায়। ছড়ানো ডালপালা। আকাশ যেন ঢেকে দিতে চায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিপুলভাবে দৃশ্যমান গাছের নাম মেঘশিরীষ। অবশ্য সুন্দর বাংলা নামে গাছটিকে কম লোকই চেনেন। ইংরেজীটা রেইনট্রি। এই নামে বেশ পরিচিত। ততোধিক পরিচিতি কড়ই গাছ নামে। এর পর আর গাছটির বর্ণনা না দিলেও চলে। গ্রামে বেশি দেখা যায়। শহরেও দুর্লভ নয়। বড় রাস্তার ধারে খোলা জায়গায় আয়েশি ভঙ্গিতে বেড়ে উঠেছে। ফলের গাছ নয়। কাঠও ভাল হয় না। তবে ফুলের যে সৌন্দর্য, মুগ্ধ হওয়ার মতো। হঠাৎ দেখলে রীতিমতো অবাক হতে হয়। অনেকদূর থেকে চোখে পড়ে। উদ্ভিদবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুল ফোটার কাল গ্রীষ্ম। শরতে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। হয়ত তাই এখন এই হেমন্তে গাছ ভর্তি ফুল। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয়া ফুলগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে না দিলেই নয়। গাছের নামের সঙ্গে রেইন বা মেঘ থাকলেও, বর্ষার সঙ্গে এর বিশেষ কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। গাছের দ্বিপক্ষল পত্র। পত্রিকা ডিম্বাকৃতি। অনেকটা লজ্জাবতী গাছের পাতার মতো। শীতে পাতাশূন্য হতে থাকে। অনেক উঁচু থেকে ঝরে পড়ার সময় ছোট ছোট পাতাগুলোকে মনে হয় বৃষ্টির ফোঁটা। এ কারণেই রেইনট্রি বা মেঘশিরীষ নামকরণ বলে ধারণা করা হয়। শীতের শেষ দিকে কিংবা বসন্তের শুরুর সময় গাছটি একদমই পত্রহীন থাকে। তখন বিশাল বৃক্ষকে চুলোয় দেয়া লাকড়ি ছাড়া কিছু মনে হয় না। ঠিক উল্টোটা দেখা যায় বর্ষায়। কচি পাতায় নতুন করে সাজে। ঘন সবুজ পাতা গাছকে যেন নতুন প্রাণ দান করে। আর যখন ফুল ফোটে তখন চোখ ফেরানো যায় না। মেঘশিরীষের ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে রাখে। সাধারণ ফুলের গঠন স্পষ্ট হয় পাপড়িতে। মেঘশিরীষের বেলায় পাপড়ি গৌণ। মূল ভূমিকা রাখে পরাগকেশর। পরাগকেশরই ফুলের আকৃতি স্পষ্ট করে। ফুল গোলাপী, হালকা সবুজ ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। পরাগকেশরের রংটাই ফুলের রং। মেঘশিরীষের আলাদা আলাদা ফুল হলেও, হঠাৎ দেখায় আলাদা করা মুশকিল হয়ে যায়। ফুল পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে। বেশ কয়েকটি ফুল নিয়ে একটি মঞ্জরি। পুষ্পগুচ্ছের মাঝখানে থাকে সবচেয়ে বড় এবং সুসজ্জিত ফুলটি। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, রেইনট্রি এদেশের আপন বৃক্ষ। বহুকাল ধরেই আছে। আদি নিবাস দক্ষিণ ব্রাজিল। দুর্যোগ কবল বাংলাদেশে ঝড় প্রতিরোধে ভাল ভূমিকা রাখে এই গাছ। ঘন সবুজ পাতার কারণে নিচের অংশটা হয় ছায়াসুনীবিড়। তবে রঙিন ফুল গাছের সৌন্দর্যটাকে বিশেষভাবে দৃশ্যমান করে। তাঁর ভাষায়, প্রস্ফুটিত রেইনট্রির মাথা যেন অজস্র বিক্ষিপ্ত রক্তিম ফোঁটায় চিত্রিত এক বিশাল সবুজ ক্যানভাস।
×