ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঝুলে আছে ঢাকায় ৫ হাজার ট্যাক্সি নামানোর সিদ্ধান্ত

মধ্যবিত্তের বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

মধ্যবিত্তের বিড়ম্বনা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ট্যাক্সিক্যাব নামের গণপরিবহনটি হারিয়েই গেছে। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের কোন শহরেই ট্যাক্সি চোখে পড়ে না। পরিবহন খাতে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও গণপরিবহনের এই গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসটি কী কারণে এত অবহেলিত তা জানা নেই কারও। মাঝে মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা আশার বাণী শোনালেও এর বাস্তবায়ন নেই। গুরুত্বপূর্ণ এ গণপরিবহন ব্যবস্থায় অবহেলার কারণে শহরের রাস্তায় দিন দিন বাড়ছে প্রাইভেট পরিবহনের চাপ। বিষয়টি বুঝার মতো ক্ষমতাও নেই পরিবহন খাতের কর্তাব্যক্তিদের। উত্তরার বাসা থেকে প্রতিদিন মতিঝিলে অফিস করেন মোর্শেদ আলী নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। নিজের প্রাইভেট গাড়ি দিয়েই তাকে আসা-যাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন রাস্তায় কাটে অন্তত চার ঘণ্টা। মতিঝিলে গাড়ি পার্কিং পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও তাকে এত সময় ও জ্বালানি খরচ করে নিজের গাড়ি ব্যবহার করতে হয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়ার আর কোন বিকল্প যানবাহন নেই। মোর্শেদ আলী এই প্রতিনিধিকে বলেন, বিকল্প কোন গণপরিবহনের ব্যবস্থা থাকলে আমি প্রাইভেটটি নিয়ে অফিসে যাওয়ার চিন্তাও করতাম না। এ রাস্তায় যতগুলো বাস চলাচল করে একটিতেও উঠার অবস্থা নেই। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা তো সোনার হরিণ। বিকল্প হিসেবে যদি ট্যাক্সি পাওয়া যেত, তবে আমি ওটাই ব্যবহার করতাম। সুযোগ থাকলে আমার মতো অনেকেই এ ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করতেন। এতে রাস্তার ওপর প্রাইভেটের এত চাপ পড়ত না। নতুন নতুন প্রাইভেট গাড়ি রাস্তায় নামছে প্রতিদিন। বিকল্প পরিবহনের অভাবে রাজধানীর মধ্যবিত্তরা কষ্ট করে, ব্যাংক লোন নিয়ে গাড়ি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবছে বলে মনে হয় না। এক হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে নতুন গাড়ি নামছে ৮৫৫। এর মধ্যে রাজধানীতে নামছে ৩১৭। যার মধ্যে প্রাইভেটকার শতাধিক। স্বাভাবিকভাবে রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়ছে প্রতিদিন। স্থবির হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর জীবনযাত্রা। ’৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি শহরে পাঁচ হাজারের বেশি ট্যাক্সি নামানো হয়েছিল। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সে সময় মাত্র একটি কোম্পানিকেই কাজ দেয়া হয়। পরবর্তী সময় আরও ট্যাক্সি নামানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কোম্পানিটি ভারতে তৈরি নিম্নমানের ট্যাক্সি নামায় রাস্তায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ট্যাক্সি ক্যাবগুলো রাস্তায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। একপর্যায়ে এগুলো রাস্তা থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। মনোপলির কারণে আর কোন কোম্পানি ট্যাক্সি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেনি। বাস্তবায়ন হয়নি আরও ট্যাক্সি নামানের সিদ্ধান্ত। দীর্ঘদিন পর বর্তমান সরকার দুটি কোম্পানিকে ট্যাক্সি নামানোর অনুমতি দেয়। এবার অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় ট্যাক্সি সার্ভিস। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটো আর বেশিদূর এগোতে পারেনি। জনসংখ্যার অনুপাতে রাজধানীতে বর্তমানে ট্যাক্সিক্যাবের চাহিদা অন্তত ১০ হাজার। গণপরিবহন সঙ্কট সমাধানে অতি দ্রুত পাঁচ হাজার ট্যাক্সি রাস্তায় নামানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে কাগজে কলমে রাজধানীতে ট্যাক্সি চলছে মাত্র ৩৫০। তাও আবার দুটি প্রতিষ্ঠান এসব গাড়ি পরিচালনার দায়িত্বে। অথচ এ শহরে এখন দুই কোটি মানুষের বসবাস। আরও প্রায় ৫০ লাখ ভাসমান মানুষের যাতায়াত প্রতিদিন। ভাড়া বেশি। তাই অব্যাহত লোকসানের মুখে ট্যাক্সি চলাচল দিন দিন কমানো হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার ট্যাক্সি নামানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। ফলে নগরীতে যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে দিন দিন। মধ্যবিত্তের প্রাইভেটকার হিসেবে পরিচিত ট্যাক্সি যেন এখন সোনার হরিণের মতো। চড়তে পারা তো দূরে থাক, দেখা মেলাও ভার। এদিকে তমা ও ট্রাস্ট সার্ভিসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়কে আর গাড়ি না নামানোর কথা জানানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওবে রাজধানীতে ট্যাক্সি সার্ভিস পরিচালনার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আসছে ‘ওবে’ সার্ভিস ॥ ঢাকার সড়কে ট্যাক্সি পরিচালনায় নামছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গাড়ি পরিচালনায় অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ‘ওবে’। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা কার্যক্রম শুরু করবে বলে শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেলেও সরকারের কোন পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাত্রী পরিবহনের সেবা দিয়ে থাকে। ভারতে গত ৩ বছর যাবত ওবে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে। এ কোম্পানির বৈশিষ্ট্য হলো, তারা নিজেরা কোন গাড়ি রাস্তায় নামায় না। প্রাইভেট গাড়ির মালিকরা এ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ওবে কোম্পানির একটি নিজস্ব এ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী ও চালকের মধ্যে যোগাযোগ হয়। অর্থাৎ কোন যাত্রী যদি গুলশান থেকে মতিঝিল যেতে চান তবে তিনি এই এ্যাপে তার যাত্রার সময়, গাড়িতে ওঠার স্থান ও নামার স্থান জানাবেন। কাছাকাছি কোন ওবে সার্ভিসদাতার গাড়ি থাকলে তিনি তাকে ওই স্থানে নিয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে যাত্রী যাকে সুবিধাজনক মনে করবেন তাকেই বাছাই করে নিয়ে যাবেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মাস যাবত তারা ঢাকায় কাজ করছেন। এ সময়ে কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার রাস্তাও তারা এ সময় পর্যবেক্ষণ করেছে। ঝুলে আছে ট্যাক্সি নামানোর সিদ্ধান্ত ॥ রাস্তায় পুরনো ট্যাক্সি নেই। মেয়াদ শেষ হওয়ায় মধ্যবিত্তের প্রাইভেটকার হিসেবে পরিচিত পুরনো ট্যাক্সিগুলো তুলে দেয়া হয়েছে। কথা ছিল ২০১৩ সালের জুলাই মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে নামানো হচ্ছে পাঁচ হাজার নতুন ট্যাক্সিক্যাব। সে প্রত্যাশাও পূরণ হয়নি। ঝুলে আছে সরকারের ট্যাক্সি নামানোর সিদ্ধান্ত। প্রায় দুই কোটি মানুষের এ শহরে মাত্র ৩৫০টি গাড়ি, যা খুবই অপ্রতুল বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া ইচ্ছা থাকলেও অনেকে ট্যাক্সি পান না। যেন সোনার হরিণ এই বাহনটি। তাছাড়া উচ্চমাত্রার ভাড়া নির্ধারণ করায় অনেকে পেলেও উঠতে সাহস পান না। রাজধানীর গণপরিবহন সঙ্কট সমাধান ও উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নতুন ট্যাক্সি নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। নতুন করে এ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১২ সালের পর থেকেই। শেষ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৬০০ ট্যাক্সি নামাতে দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল নতুন ট্যাক্সি সার্ভিস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪০০ ট্যাক্সি নামানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এরপর কথা ছিল নির্ধারিত দুটি কোম্পানি পর্যায়ক্রমে ঢাকা-চট্টগ্রামে গাড়ি নামাবে। নতুন ট্যাক্সি সার্ভিসের যাত্রা শুরুর আগে থেকেই ভাড়া নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। এসি ট্যাক্সিতে উঠলেই দুই কিলোমিটারের জন্য গুনতে হয় ৮৫ টাকা। প্রথম পর্যায়ে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা! প্রতি মিনিটের জন্য অপেক্ষমাণ বিল আট টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাড়ায় নির্ধারণ করা হয়েছে নতুন আমদানি করা এসব ট্যাক্সিতে। ১৮-২৬ লাখ টাকা মূল্যের এসব গাড়িতে মতিঝিল-আব্দুল্লাপুর ২২ কিলোমিটারের ভাড়া প্রায় এক হাজার টাকা! মিরপুর থেকে মতিঝিল ১৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রায় ৭০০ টাকা! বর্তমানে রাজধানীতে ১০ হাজারের বেশি ট্যাক্সির চাহিদা থাকার কথা জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে বলেন, এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় খুবই কম ট্যাক্সি চলছে। ভাড়া বেশি হওয়ায় এসব পরিবহন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে রাজধানীতে নতুন ট্যাক্সি নামানো জরুরী। কারণ দিন দিন প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এর লাগাম টেনে ধরতে হলে ট্যাক্সিক্যাবই একমাত্র বিকল্প হতে পারে। নতুন ট্যাক্সি নামানোর ক্ষেত্রে ভাড়া যেন মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে থাকে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, ভাড়া বেশি হওয়ায় তমা ও ট্রাস্টের ট্যাক্সিগুলোতে যাত্রী ওঠে না। চট্টগ্রামে নতুন ট্যাক্সির রঙ পরিবর্তন করে এখন অন্যান্য কাজে লাগানো হচ্ছে। দুই প্রতিষ্ঠানের ‘না’ ॥ ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয় নতুন ট্যাক্সিক্যাব। দুটি পৃথক প্রতিষ্ঠান এখন রাজধানীতে ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা করছে। এরমধ্যে তমা সার্ভিসের ২৫০ ও ট্রাস্টের ১৫০ গাড়ি মহানগরীতে চলাচল করছে। জানা গেছে, ভাড়া বেশি হওয়ায় যাত্রী কম হয় বিলাসবহুল এসব ট্যাক্সিতে। এ কারণে অব্যাহত লোকসানের মুখে এ দুটি প্রতিষ্ঠান। এমন বাস্তবতায় যেসব গাড়ি ঢাকায় চলাচল করত এর প্রায় অর্ধেকও এখন সড়কে নেই। ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেস প্রাথমিকভাবে টয়োটা ব্র্যান্ডের জাপানে নির্মিত ১৫০০ সিসির ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা করছে। অপর বেসরকারী সংস্থা তমা গ্রুপ একই ব্র্যান্ডের ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা করছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন যাত্রীদের চাহিদা ও পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৬৫০টি ট্যাক্সিক্যাব নামানো হবে। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এক হাজার ট্যাক্সি নামানোর। নতুন আরও ট্যাক্সি নামানো প্রসঙ্গে তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক জনকণ্ঠকে বলেন, অব্যাহত লোকসানের মুখে নতুন ট্যাক্সিক্যাবগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। চুক্তি থাকলেও নতুন করে ট্যাক্সিক্যাব নামানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ট্যাক্সি নামানোর প্রক্রিয়াও বন্ধ। এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন দেশে এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি ঢুকতে দেয়া হয় নাÑ এমন নজির নেই। গণপরিবহন বলতে ট্যাক্সির গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজন প্রাইভেটকার হিসেবে এ বাহনটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। আমরা নতুন ট্যাক্সি নামানোর পর থেকেই এ্যায়ারপোর্টে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া বেশি দামে বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় কম ভাড়ায় তা চালানোও সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গতকারণেই বিমানবন্দরের বাইরে ভাড়া কম পাওয়া যায়। ভাড়ার রেট বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ নতুন ট্যাক্সিতে উঠতে চান না। তিনি জানান, বিমানবন্দরে ট্যাক্সি প্রবেশে সুযোগ দেয়া, নগরীর কয়েকটি স্থানে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড করে দেয়ার জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব চিঠি সিটি কর্পোরেশনের কাছে ফরওয়ার্ড করে দিয়ে দায়সারা হয়েছে। সঙ্কটের সমাধান হয়নি এখনও। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদিত দুটি কোম্পানি নতুন করে ট্যাক্সি নামাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। নানা শর্তের বেড়াজালে এ মুহূর্তে পুরো প্রক্রিয়াটিই থেমে আছে। এ কারণে কম টাকায় নতুন করে ট্যাক্সি আনার চিন্তা করছে সরকার। যদিও এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, সঙ্কট সমাধানে আলোচনা চলছে। দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ২০০২ সালে প্রথমে ৮ বছর এবং পরবর্তীতে ২ বছর বাড়িয়ে দশ বছর মেয়াদী কালো এবং হলুদ ট্যাক্সিক্যাব মিলিয়ে রাজধানীতে দশ হাজার এবং রাজধানীর বাইরে ২ হাজার ট্যাক্সিক্যাবের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। উভয় ধরনের ট্যাক্সিক্যাবের মেয়াদ গত ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। চালকদের প্রবল আন্দোলনের মুখে পুরনো ট্যাক্সি তুলে দেয় সরকার। নতুন ট্যাক্সি নামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নতুন এক হাজার ট্যাক্সিক্যাব নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রাস্তায় ট্যাক্সির দেখা মেলে না ॥ রাজধানীতে ট্যাক্সি চলে একথা অনেকে বিশ্বাসই করতে চান না। বাস্তবতা এমনই। এর কারণ হলো পরিবহন স্বল্পতা। নগরীর নির্দিষ্ট এলাকায় শুধুমাত্র কয়েকটি ট্যাক্সির আনাগোনা চোখে পড়ে। এর মধ্যে বিমানবন্দর, গুলশান, বনানী, ধানম-ি এলাকাতেই বেশি। ভাগ্য ভাল হলে কমলাপুরে দেখা পাওয়া যায় হলুদ ট্যাক্সির। তমা গ্রুপের ট্যাক্সিচালক বাঁধন জানান, গাড়ি নামানোর পর থেকে নানান জটিলতার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। একেতে সমস্যা হলো গাড়ির সংখ্যা কম, অন্যদিকে অনেকেই বেশি ভাড়ার কারণে উঠতে চান না। তবে কোন কোন সময় যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও গাড়ির যোগান দেয়া সম্ভব হয় না। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান গাড়ি পরিচালনা করে সন্তুষ্ট নয় বলে জানান তিনি। নিরাপদ নৌসড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আশীষ কুমার দে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাবে রাজধানীতে গণপরিবহন সঙ্কট সমাধান হচ্ছে না। নগরীতে উন্নত বাস সার্ভিস নেই। নেই ট্যাক্সি সার্ভিসও। তাহলে মানুষ কিভাবে যাতায়াত করবেন। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য বিপুল পরিমাণ ট্যাক্সির ব্যবস্থা থাকে। তিনি যাত্রীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে কম মূল্যে নতুন ট্যাক্সি নামানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, বেশি টাকায় গাড়ি আমদানি করা হলে ভাড়াও বেশি গুনতে হয়, যা সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে সম্ভব হয় না। বন্ধ হওয়া ১২ হাজার ট্যাক্সির বিপরীতে নতুন ট্যাক্সি নামানোর দাবি জানান এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ। মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ॥ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্যই ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সবার আগে জনস্বার্থের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ট্যাক্সিক্যাব মালিক চালক ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মোঃ ওবায়দুল হক নতুন ট্যাক্সিক্যাবের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার বিরোধিতা করে বলেন, ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে এসব ট্যাক্সিক্যাব। যাদের বাড়ি গাড়ি আছে, বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক, তারাই এসব ট্যাক্সিতে ওঠতে পারবেন। বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, আগের ট্যাক্সিগুলো ছিল ৮০০ সিসি, নতুন ট্যাক্সি এক হাজার ৫০০ সিসি। এ কারণে নতুন গাড়ি টেকসই বেশি হবে। এসব গাড়ি সিসি ক্যামেরায় কন্ট্রোল রুম থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ কারণে ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গাড়িতে কোন কিছু রেখে গেলে যাত্রীরা অভিযোগ করলে ফেরত পাবেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন করে আরও ২৫০টি ট্যাক্সি নামার কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আমার কাছে নেই। তিনি বিআরটিএ সহকারী পরিচালক শফিকুজ্জামান ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ ব্যাপারে শফিকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, নতুন ট্যাক্সি নামার খবর আমার কাছে নেই। তবে আমি বিআরটিএতে নতুন যোগ দিয়েছি। বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠানের রাজধানীতে ট্যাক্সি নামানোর বিষয়ে কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নিতে হবে। এ বিষয়ে বিআরটিএ সচিব শওকত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ট্যাক্সি নামানোর বিষয়ে কোন তথ্য আমার কাছে নেই। এ ব্যাপারে তিনি বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মোঃ নূরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। নূরুল ইসলাম জানান, আমি বেশ কয়েক দিন দেশের বাইরে ছিলাম। তাই এ সংক্রান্ত কোন তথ্য দিতে পারছি না। তিনি পরিচালক রোড সেফটি মোঃ মাহবুব-ই-রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি অন্য শাখায় বদলি হয়েছি। তাই ট্যাক্সিক্যাব সংক্রান্ত কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
×