ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢামেকে চিকিৎসা ॥ ধর্ষক সাইফুল গ্রেফতার

পাঁচ বছরের শিশুর ওপর বীভৎস নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

পাঁচ বছরের শিশুর ওপর বীভৎস নির্যাতন

আজাদ সুলায়মান ॥ পাঁচ বছরের শিশুটির সর্বাঙ্গে পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন। ক্ষতবিক্ষত তার গোপনাঙ্গ। তার ওপর হিংস্র নরপশুদের থাবার ভয়াবহতা দেখে আঁতকে ওঠেন চিকিৎসকরাও। ধর্ষণের আগে ব্লেড দিয়ে তার গোপনাঙ্গ কাটার মতো বর্বরোচিত কা- ঘটিয়েছে নরপশুরা। কোথায় নেই নির্যাতনের দাগ- বুক, মুখ, গলা, পেট ও নিম্নাঙ্গ। সর্বত্র পৈশাচিকতার ছাপ। কর্তব্যরত ডাক্তাররা এমন পৈশাচিকতার চিত্র আগে কখনও দেখেননি বলেও জানিয়েছেন। বুধবার ঢাকা মেডিক্যালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে শিশুটির সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণসহ পাশবিক নির্যাতনের শিকার এ হতভাগা শিশুটির চিকিৎসায় ৯ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করেছে ঢাকা মেডিক্যাল। এখন তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে শিশুটি প্রাণে বেঁচে গেলেও সারাজীবনের জন্য তার গোপনাঙ্গের হানি হতে পারে। বুধবার ভোরে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সম্পর্কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শিশুটির গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটি যখন হাসপাতালে ভর্তি হয় তার অবস্থা গুরুতর ছিল। এখন সে আশঙ্কামুক্ত। তবে শিশুটির গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভবিষ্যতে তার গোপনাঙ্গের হানি হতে পারে। এ ঘটনায় গাইনী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ ফেরদৌসী ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এদিকে বুধবার বেলা ১২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শিশুটির শরীরে সফল অস্ত্রোপচার শেষে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এর আগে চারটি বিভাগের সমন্বয়ে শিশুটির চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের ওসিসি’র তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ বিলকিস বেগম। তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার পর নিউরো সার্জারি, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, গাইনী ও পেডিয়াট্রিক বিভাগের অধীনে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়। বুধবার অস্ত্রোপচারও করা হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ আশরাফ-উল-হক কাজল জানান, শিশুটিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন ও ইনফেকশন আছে। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে অপারেশন করা হবে এবং আশা করি এরপর সুস্থ হয়ে উঠবে। হাসপাতালে শিশুটির স্বজনরা দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার জমিরহাট তকেয়াপাড়া গ্রামে গত ১৮ অক্টোবর বর্বরোচিত ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সকালে বাড়ির বাইরে খেলতে যাওয়ার পর শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত ১১টার দিকে পার্বতীপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শিশুটির বাবা। পরদিন ১৯ অক্টোবর ভোর ৬টায় শিশুটিকে বাড়ির পাশের হলুদ ক্ষেত থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিতা শিশুর বাবা গত ২০ অক্টোবর প্রতিবেশী মাদকসেবী সাইফুল ইসলাম (৪১) ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে (৪৭) আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ধর্ষক সাইফুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। শিশুটির সঙ্গে থাকা স্বজনদের অভিযোগ, সাইফুলই বেলা ১২টায় শিশুটিকে হলুদ ক্ষেতে নিয়ে যায়। পরে আফজাল হোসেন কবিরাজকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে যৌনাঙ্গ কেটে ধর্ষণ করে। শিশুটির বুকে কামড় এবং গলাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করে। নির্যাতনের পাশাপাশি শিশুটির শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেয়া হয়। প্রথমে তাকে পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় দিনাজপুরের বিভিন্ন মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠন সোচ্চার হয়ে উঠছে।
×