ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুলতানা ইয়াসমীন

অগ্রজদের সম্মান

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

অগ্রজদের সম্মান

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘নবজাতক’ কাব্যগ্রন্থের ‘প্রবীণ’ নামের কবিতা শেষ করেছেন এভাবে- ‘ওগো প্রবীণ, চলো এবার সকল কাজের শেষে/নবীন হাসি মুখে নিয়ে চরম খেলার বেশে।’ কবিতায় তিনি বলেছেন আশি বছর বয়সী এক পিপুল গাছের কথা, আশ্বিনের রোদ্দুরে যে বিপুল নাচে, পাতায় পাতায় চলে আবোলতাবোল দোলাদুলি। প্রাণশক্তি তো এখানেই। বয়সের কিছু সংখ্যা কি আর প্রাণচাঞ্চল্যকে থামিয়ে দিতে পারে? প্রবীণ মানে কি তথাকথিত স্টেরিওটাইপ, ‘বুড়োটা আর কী বুঝে’? নাকি প্রবীণ সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ভাণ্ডার। জীবনযাত্রার দীর্ঘ পথচলায় অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ প্রবীণরাই তো নবীনদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারেন। দেখাতে পারেন পথ। প্রবীণ সমাজের অভিজ্ঞতাকে আমরা কিভাবে কাজে লাগাব সেটিই হচ্ছে কথা। জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘পৃথিবী প্রবীণ হয় আরও মিরুজিন নদীটির তীরে;/বিবর্ণ প্রাসাদ তার ছায়া ফেলে জলে।’ পৃথিবী যেমন প্রবীণ হয় মিরুজিন নদীর তীরে, তেমনই দিনযাপনের অংশ হিসেবে নবীন-প্রবীণ হয়ে ওঠে জীবনের তীরে। প্রবীণরা যেন জীবনের শেষের দিককার সময়গুলো সুন্দরভাবে কাটাতে পারেন তা দেখার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের। সিনিয়র সিটিজেনদের ব্যাপারে ঘোষণা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি চমৎকার একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের গুরুজন এবং পথপ্রদর্শক। তাদের যথাযথ মর্যাদা, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বসবাসের সুবিধাসহ সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। এ জন্য আমাদের ঐতিহ্যগত পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে। পাশাপাশি শৈশব থেকেই শিশুদের গুরুজনকে সম্মান করার সুমহান শিক্ষা দিতে হবে। কারণ এটাই আমাদের চিরকালীন ঐতিহ্য।’ আমাদের এই চিরকালীন ঐতিহ্য যেন আমরা ভুলে না যাই। প্রবীণদের স্বস্তিময় ও নিরাপদতম স্থান তাদের পরিবার। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী মানুষের জীবনকাল ৬০ বা ততধিক হলেই তিনি প্রবীণ। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশও প্রবীণ। বিআইডিএসের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রবীণ ছিলেন ১৯৯০ সালে। প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৫০ সালে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হার হবে ২০ শতাংশ। তখন বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন হবেন প্রবীণ। বলা হয়ে থাকে, পরিবারই বড় পাঠশালা। পরিবার থেকেই প্রবীণদের সম্মান প্রদর্শন শেখাতে হবে। প্রবীণদের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন শেখাতে হবে শিশুদের। আজকের শিশুই আগামী দিনে প্রবীণ হবে। প্রবীণদের সম্মান দিলে, পরবর্তী প্রজন্মও অগ্রজদের সম্মান দেখাবে। এভাবেই প্রবীণদের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন চলবে বংশপরম্পরায়। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। নিউটাউন, যশোর থেকে
×