ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চালু হোক স্বাস্থ্যবীমা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

চালু হোক স্বাস্থ্যবীমা

দেশে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এমবিবিএস পাস ডাক্তারের ফির নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। স্থানীয় চাহিদার নিরিখে ফি আদায় করা হয় চিকিৎসকের মর্জিমাফিক। দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা খুব কম। যারা আছেন, তাদের অবস্থান ও চেম্বার প্রধানত রাজধানীকেন্দ্রিক। কোন দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তের পক্ষেও তাদের কাছে পৌঁছানো ও চিকিৎসা নেয়া একরকম আকাশকুসুম কল্পনা। সরকারী হাসপাতাল ঢাকা ও বিভাগীয় শহর-নগরে কিছু আছে বটে, তবে সেগুলোতে প্রচ- রোগীর চাপ। সেই অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, আয়া ও ওষুধপত্র মেলে না। তদুপরি স্বল্পমূল্যে কিংবা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা বলা হলেও কড়ি না ফেললে মেলে না কিছুই। আবার একটু ভাল সেবা পাওয়ার আশায় বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বাধ্য হয়ে ছুটোছুটি করলেও সেখানে গুচ্ছের খরচ। এর পাশাপাশি আছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এক্সরে ইতাদির খরচ। আজকাল ডাক্তাররা ল্যাব রিপোর্ট ছাড়া সহজে রোগ নির্ণয় করতে চান না। কেননা, সেখানেও আছে কমিশনের হাতছানি। গত কয়েক বছরে প্রায় সব রকম ওষুধের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সাধারণের আয়ত্তের বাইরে। ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি-লিভারের ওষুধ তো অনেকক্ষেত্রে দুর্মূল্য ও দুর্লভ। ফলে সাধারণ আয়ের মানুষ পারতপক্ষে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে চান না। এক হিসেবে দেখা যায়, প্রায় ৮০ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হয় সাধারণ মানুষকে। বাকিটা বহন করে সরকার। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ অনেক কম। তদুপরি সর্বত্র এই সুবিধা সহজলভ্যও নয়। তবে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক সম্প্রসারণের মাধ্যমে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবুও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হলে সরকারের আরও অনেক কিছু করা দরকার। এই ক্ষেত্রে দেশের সব নাগরিককে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনা এর অন্যতম সহায়ক হতে পারে। এক হিসেবে দেখা যায়, দেশের ১৭ শতাংশ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর পরিবার ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে নেমে যায় দারিদ্র্যসীমার নিচে। শুধু চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক। এর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব প্রকট ও সুদূরপ্রসারী। সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমা এক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনির মতো জটিল রোগব্যাধি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ-বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া অধিকাংশ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যাদের অর্থবিত্ত আছে তাদের পক্ষে স্বাস্থ্যবীমায় অংশগ্রহণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। যাদের তেমন অর্থকড়ি নেই, তারা নামমাত্র প্রিমিয়াম দিয়ে এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। বাকিটা দেবে সরকার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের তহবিল থেকে। অথবা গঠন করা যেতে পারে বিশেষ তহবিল। এ বিষয়ে প্রয়োজনে বীমা খাতের বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমান সরকার দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি তারা ভূমিহীন ও ছিন্নমূলদের আশ্রয় ও খাদ্য নিরাপত্তা দেয়ার কথাও বলেছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির বিষয়টিও মানুষের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। সব নাগরিককে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে সরকার এই কাজটি শুরু করতে পারে।
×