ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বীরের সম্মান

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

বীরের সম্মান

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা যেমন বাঙালীর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, তেমনি সন্দেহাতীতভাবে সত্য মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ অবদানের কারণেই বাঙালী জাতি আজ পরাধীনতার জিঞ্জির ভেঙ্গে স্বাধীন সার্বভৌম ভূখ-ে বসবাস করতে পারছে। বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালী জাতি হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে নিজস্ব পরিচয় ও লাল সবুজের কাক্সিক্ষত পতাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের সেই ঋণ কখনও শোধ করার মতো নয়। কিন্তু জাতি যেন তাদের সেই ঋণ চিরকাল স্মরণ করে। শুধু কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেই অবদান সমুন্নত করা যাবে না বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য বানিয়ে ওরা লড়াই করেছিল দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। তাদের সেই অবদানের কোন আর্থিক বা বৈষয়িক মূল্য হতে পারে না। চিরশাশ্বত ও ভাস্বর হয়ে থাকা তাদের সেই অবদান চিরকালই গৌরবের, অহঙ্কারের। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন বাজি রেখেছিল, তারা যুদ্ধ শেষের প্রাপ্য চেয়েছিল সোনার বাংলায় উন্নীত হতে। তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যায় পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পর। দেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নেয় সামরিক জান্তা শাসকরা। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার জন্য ইতিহাস বিকৃতি শুরু করে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটিয়েছে। জীবন-জীবিকার জন্য কর্মসংস্থানও হয়নি অনেকের। অসহায় এক সময় গিয়েছে তাদের জীবনে জান্তা শাসনামল থেকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামায়াতের ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার পর। সরকার পরিবর্তন হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের সার্বিক উন্নয়ন ঘটেনি। সে সরকারগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থে- সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে নিগৃহীত হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটা সংরক্ষণসহ ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়। জান্তা শাসনামলে শহীদ পরিবারগুলোও নিগৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু যেসব শহীদ পরিবারকে বাসা-বাড়ি বরাদ্দ করেছিলেন, সেখান থেকে জান্তা শাসকরা তাদের উচ্ছেদ করে নির্মমভাবে। এটা তো সত্য যে, যারা দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তারা কখনও কোন সম্মাননার আশায় এ মহান দায়িত্ব পালন করেননি। ন্যায়ের পথে, মানবতার পক্ষে, নিজের জন্মভূমিকে রক্ষার তাগিদে সর্বোপরি স্বাধীন স্বদেশ লাভের আশায় জীবন বিপন্ন হবে জেনেও তারা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল রাষ্ট্রের অন্যতম পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। জান্তা শাসকরা এবং বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেই নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে। যাতে অমুক্তিযোদ্ধাদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর গেজেটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযুদ্ধে অসীম সহযোগিতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চারটি ভাগে খেতাব প্রদান করেন। ২০১১ সালে শেখ হাসিনা সরকার খেতাবপ্রাপ্তদের ভাতা বৃদ্ধি করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদেরও বাড়ানো হয়। আবারও তিনি খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়িয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে যা কার্যকর হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মাননা প্রদান মানেই জাতির প্রতিটি সদস্যকে মর্যাদাবান করে তোলা। সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রশংসাযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত। সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। সেই সঙ্গে সরকারপ্রধানকেও অভিনন্দন।
×