ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পুষ্টিহীনতার কারণে বছরে ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০১:১৬, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

পুষ্টিহীনতার কারণে বছরে ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষুধা ও অপুষ্টি সমস্যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার প্রধান অন্তরায়। পুষ্টিহীনতার কারনে দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের উৎপাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। যা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের চেয়েও বেশি। পুষ্টির অভাবে প্রতি তিন শিশুর একটির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত (খর্বাকৃতি সমস্যা) হচ্ছে। আবার খাদ্য উৎপাদনে সাফল্য এলেও চার কোটি মানুষ এখনও রয়ে গেছে খাদ্য নিরাপত্তার বাইরে। এর মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ মানুষের ক্ষুধা সমস্যা তীব্র। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ অব ফুড সিকিউরিটি এ্যান্ড নিউট্রিশান ইন বাংলাদেশে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন তৈরিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নানা উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষুধা ও অপুষ্ট মানুষ রেখে কোনো দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হতে পারে না। আশঙ্কাজনক হলেও সত্য যে, দেশের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ এখনো খাদ্য সংকটে রয়েছে। এমনকি তিনবেলা পেটপুরে খাওয়াই তাদের অনেকের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ইচ্ছে মতো বৈচিত্র্যময় খাবার (ডাইভার্স ডায়েট) গ্রহণ করতে পারেন না। তারা অপুষ্টিরও শিকার। নানা পদক্ষেপ সত্বেও গত কয়েকবছরে দেশের অতি পুষ্টিহীনতা ও শিশুর খর্বাকৃতি সমস্যার হার সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। দেশের গ্রামাঞ্চল ও বস্তিতে এ প্রবণতার হার বেশি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, অপুষ্টির সঙ্গে শিক্ষা কিংবা আর্থিক সচ্ছলতার কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষিত ও সচ্ছল পরিবারের শিশুরাও ওজনহীনতা ও অপুষ্টির শিকার। মায়ের পুষ্টিহীনতাই এর অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে সরকার প্রতিবছর ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হারে খর্বাকৃতি সমস্যা নিরসনের অঙ্গীকার করেছিল। ওয়ার্লড হেলথ এ্যাসেম্বলিতে ২০১২ সালে করা এই অঙ্গীকার পূরণে সরকার অনেকটা পিছিয়ে আছে। তখন থেকে প্রতিবছর মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে শিশুর খর্বাকৃতি প্রতিরোধ করা গেছে। অপুষ্টির পাশাপাশি আর্থসামাজিক কারণে শিশুদের স্থুলতা, কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করতে না পারা এবং শহুরে নারীদের স্থুলতা ভবিষ্যতে চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও মোকাবেলা করতে হবে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ১৬-১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া দেশের সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। অপুষ্টি আমাদের অন্যতম সমস্যা। কিশোরী বয়সে বিয়ে হলে মায়ের অপুষ্টি সন্তানের মধ্যেও প্রকাশ পায়। এ দুটি সমস্যা মোকাবেলায় তৃণমূলে সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। বাল্য বিবাহ বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে আগামী বাজেটে পৃথক বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা দূর করা, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং উন্নত পুষ্টি নিশ্চিত করা বিষয়ক এসডিজি’র দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবদেনে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- খাদ্য উৎপাদন ও গ্রহণে বৈচিত্র আনা, পুষ্টি সংবেদনশীল কৃষি ধারনা প্রবর্তন, চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, পুষ্টির ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীতে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ, সুনির্দিষ্ট পুষ্টি কর্মসূচী চালু করা ইত্যাদি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধি ক্রিসটা রাদের, চিফ অব স্টাফ জেমস হার্ভে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের যুগ্ম প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
×