ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রেক্সিট ॥ ব্রিটেনের সামনে বন্ধুর পথ

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

ব্রেক্সিট ॥ ব্রিটেনের সামনে বন্ধুর পথ

গত জুন মাসের গণভোটের সরল সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বেরিয়ে যাওয়ার এই পথটা অনেক জটিল ও বিঘœসঙ্কুল হবে। তাতে অনেক বিপজ্জনক মোড় ও বাঁক থাকবে। থাকবে নানান চড়াই উতরাই ও ঝুঁকিপূর্ণ ফাঁদ। ৬ কোটি ৪০ লাখ ব্রিটেন এখন আরোহীর আসনে থাকায় প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে এ ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হচ্ছে। সামনের পথটা যে কত ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে বক্তব্য দেয়া তিনি এড়িয়ে চলেছিলেন। তবে ক’দিন আগে রক্ষণশীল দলের সম্মেলনে তিনি আর দেরি করতে পারেননি। এক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন যে, আগামী মার্চের শেষ দিকে তিনি ইইউ চুক্তির ৫০ নং অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করবেন। তাতে করে দু’বছরের কাউন্টডাউনের সময় মিলবে এবং ব্রিটেন ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তিনি আরও আভাস দেন যে, ব্রেক্সিটের জন্য তিনি ব্রিটেনকে কঠিন পথে চালিত করতেও প্রস্তুত। সেখানে শ্রম, পণ্য অর্থের বাজারগুলো ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ব্রেক্সিট আগামী কয়েক দশকের জন্য ব্রিটেনের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে। কাজেই ব্রেক্সিটের কাজটা যদি করতেই হয় তাহলে তা সঠিকভাবে করতে হবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। বলাই বাহুল্য যে, থেরেসা মে অনিবার্য কিছু টেনশনের মুখোমুখি হয়েছেন। যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছে তাদের আশ্বস্ত করার তাগিদ তিনি অনুভব করে বলেছেন যে তাদের রায়ের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা হবে। আর অভিবাসন, সার্বভৌমত্ব ও লুক্সেমবার্গের ইউরোপীয় আদালতের এখতিয়ারের প্রশ্নে তিনি নিয়েছেন কঠোর ভূমিকা। এই ভূমিকার জন্য ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার সর্বোত্তম উপায় নিয়ে ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনার কাজটা ব্যাহত হতে পারে। দরকষাকষির সমতাকে যথাসাধ্য বাড়িয়ে তুলতে হলে মের এখন সময়ের প্রয়োজন। আর সর্বোত্তম ফল অর্জন করতে হলে অভিবাসন প্রশ্নে তাকে নমনীয় হতে হবে। তার মূল লক্ষ্য হতে হবে ইউরোপের একক বাজারে প্রবেশের সর্বাধিক সুযোগ সুনিশ্চিত করা। ব্রেক্সিট প্রধানমন্ত্রী মের সামনে যে মৌলিক সমস্যা হাজির করেছে তা স্পষ্ট। একদিকে তিনি বিশ্বের একক বৃহত্তম বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্তরায়ের সম্মুখীন না হওয়ার অর্থনৈতিক সুবিধাটুকু আগের মতো বজায় রাখতে চান। অথচ অন্যদিকে, তার ২৭ ইইউ অংশীদার এ ব্যাপারে একমত হতে রাজি নয় যদি না ব্রিটেন একক বাজারের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে। আর ব্রিটেন সে দায়-দায়িত্ব নিলে তাকে শ্রমিকদের অবাধ চলাচল মেনে নিতে এবং ইইউর বিধিসমূহও মেনে চলতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের শেষদিকে ইইউ ত্যাগের সিদ্ধান্ত মোটামুটিভাবে নিয়ে ফেলেছেন। ব্রেক্সিটের আগ পর্যন্ত শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর যে নিশ্চয়তাটুকু প্রয়োজন সেটা দেয়ার জন্যই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যত সম্পর্ক কি হবে সেই মৌলিক প্রশ্নটি তিনি এড়িয়ে গেছেন। এখানে বলে রাখা ভাল যে ব্রিটেনের রফতানির ৪৪ শতাংশ যায় ইউরোপীয় বাজারে। কিন্তু দলীয় সম্মেলনে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ভড়কে গেছে ব্যবসায়ী সমাজ। তিনি বলেছেন, ব্রিটেন হতে চলেছে পুরোপুরি স্বাধীন ও সার্বভৌম। নিজের খাদ্যের লেবেল কিভাবে দেয়া হবে তা থেকে শুরু করে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের কৌশল পর্যন্ত সবকিছু সিদ্ধান্ত সে নিজেই নেবেÑ এমনকি শুল্ক আরোপ করা পর্যন্ত। আর এখানেই ব্যবসায়ীদের অস্বস্তি ও উদ্বিগ্ন বোধ করার কারণ ঘটেছে। কারণ তার এই বক্তব্যগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবশিষ্ট প্রথা ও রীতি এবং একক বাজারের ধারণার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। নিজেদের মধ্যে শুল্ক ও অশুল্ক প্রাচীর তুলে দেয়ার ফলে এই একক বাজার ব্যবসায়ীদের কাছে অতি মূল্যবান একটি বাজারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শুল্ক ও শুল্কবহির্ভূত প্রাচীর দেয়া হলেই পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ব্যবসা মার খাবে। মনে রাখতে হবে বিচ্ছেদ কদাচিৎই সুখের হয়। এ সংক্রান্ত হুঁশিয়ারি সঙ্কেত ইতোমধ্যে কিছু কিছু পাওয়া গেছে। যেমন থেরেসা মের ভাষণের পর ডলারের সঙ্গে পাউন্ডের বিনিময় মূল্য কমে গেছে। পাউন্ডের দাম এতখানি পড়ে যাওয়ার ঘটনা গত ৩১ বছরের মধ্যে আর ঘটেনি। দরপতনের এই ঘটনা বিনিয়োগকারীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে ব্রিটেনের এখনও চলতি হিসাবে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়ে গেছে। ভোগ ব্যবহারের মাত্রা যথেষ্ট প্রবল থাকলেও আগামী বছর প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস মিলেছে তা থেকে বোঝা যায় যে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পরিকল্পনা ধরে রেখেছে, সামনে এগিয়ে নিচ্ছে না। সম্ভবত এসব কারণেই অর্থমন্ত্রী ব্রিটেনদের সামনের দিনগুলো হবে রোলার কোস্টারে চড়ার মতোÑ অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। তবে সেই সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে ব্রিটেনরা আরও বেশি গরিব হবওয়ার জন্য ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেয়নি। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×