ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক

দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভাল নেই ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম, ব্যবসা-বাণিজ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা, বিনিয়োগে মন্দা, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং ব্যয় অনুপাতে আয় না বাড়ার কারণে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো চরম সঙ্কটে রয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারের মন্দাভাবের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত ঋণের সুদ ব্লক করে রাখায়ও তাদের সমস্যা হচ্ছে। এতে এ খাতে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় আজ বুধবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। চলতি বছরের জুনভিত্তিক আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর এই বৈঠক হবে। জানা গেছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আগে ব্যবসার মূল ভরসা ছিল ব্যাংক আমানত। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয় নীতির কারণে তারা এখন জনসাধারণ থেকে স্বল্পমেয়াদী আমানতও সংগ্রহ করতে পারছে। তবে তা অপ্রতুল। এজন্য বন্ড মার্কেন্ট উন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বন্ড মার্কেন্ট উন্নয়নে কর অব্যাহতি সুবিধা পুনর্বহালের দাবি জানানো হবে। জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত সেবার বিপরীতে সার্ভিস চার্জ পুনর্নির্ধারণের দাবি জানানো হবে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজ উদ্দিন সরকার জানান, আগে বন্ড ইস্যু করলে বিনিয়োগকারীরা যে মুনাফা পেতেন, তার জন্য কোন কর দিতে হতো না। কিন্তু বর্তমান নিয়মে কোন প্রতিষ্ঠান বন্ড কিনলে এর আয়ের ওপর নির্ধারিত হারে কর দিতে হবে। কিন্তু বন্ড মার্কেটকে সচল করতে কর মওকুফ সুবিধা দিতে হবে। কারণ যে বন্ড কিনবে সে যদি কোন ইনসেনটিভ বা লাভ না পায়, তাহলে বন্ড কিনতে আগ্রহী হবে না। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কী মানের তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের জন্য ২০১৪ সালের ১৭ জুন বিশেষ এই সফটওয়্যার (স্ট্রেস টেস্টিং বা চাপ সহনক্ষমতা) চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের মার্চ শেষে স্ট্রেস টেস্টিংয়ে ১১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রেড জোনে পড়েছে। দ্বিতীয় ধাপ ইয়েলো জোনে পড়েছে ১৭টি প্রতিষ্ঠান। আর প্রথম ধাপ তথা গ্রিন জোনে পড়েছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান। গেল তিন মাসে ইয়েলো জোন থেকে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রেড জোনে চলে গেছে। আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্যাস, বিদ্যুত ও অবকাঠামো সমস্যার পাশাপাশি বিগত সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব এ খাতের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে অনেকেই সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। আর খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে আগের চেয়ে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে তাদের আয়ও কমে যাচ্ছে। আবার আয় অনুপাতে পরিচালন ব্যয়ও কমছে না। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ও লিজের স্থিতি ছিল ৪৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণ ও লিজের ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। তথ্যে আরও দেখা যায়, ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে প্রাইম ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা কমে যাচ্ছে। আগে যেখানে আমরা ৩ থেকে ৫ শতাংশ মার্জিনে ব্যবসা করতাম, এখন সেখানে ২ শতাংশ মার্জিন করাটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ দেশের ৫৬টি ব্যাংক এবং ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান একই গ্রাহকের পেছনে দৌড়াচ্ছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি ফেরা এবং তহবিল ব্যয় কমে আসায় এ খাতটি আগামী বছর থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
×