ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মান্দালয়ে ২ হাজার মুসলিমকে বাস্তুচ্যুত করেছে সেনাবাহিনী

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যা তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যা তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

মিয়ানমারের মান্দালয় রাজ্যের একটি গ্রাম থেকে প্রায় দুই হাজার মুসলিমকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর সাম্প্রতিক হামলার জের ধরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ নির্মম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে সংঘাতকবলিত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচারে গ্রেফতার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তের জন্য সে দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। মিয়ানমারের সেনারা রবিবার মধ্যাঞ্চলীয় মান্দালয় রাজ্যের ‘কি কান পিন’ গ্রামের সব মুসলিম অধিবাসীকে গ্রামটি ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। এ সময় জরুরী প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া তাদের অন্য কিছু নিতে দেয়া হয়নি। বর্তমানে তারা পার্শ্ববর্তী বন ও ধানের ক্ষেতে লুকিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। উচ্ছেদ হওয়া এক মুসলিম জানিয়েছেন, রবিবার বিকেলে আমাকে আমার বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আমার পরিবারের সব সদস্যসহ প্রায় ২০০ মানুষ ধানক্ষেতে অবস্থান করছি। সৈন্যরা গ্রামে ঢুকে আমাদের দ্রুত ঘরবাড়ি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে বলে, সরকারের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, সরকারের পক্ষে ওই এলাকার কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কারণ ওটি সেনা অভিযানের একটি ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তিনটি পুলিশ পোস্টে সশস্ত্র হামলা হয়। এ হামলায় দুই পুলিশ নিহত ও ছয় পুলিশ নিখোঁজ রয়েছে বলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ, রোহিঙ্গা মুসলিমরা এ হামলা চালিয়েছে। এদিকে দাতব্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ওই হামলার পর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং এদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী এ পর্যন্ত ৩০ হামলাকারীকে হত্যা এবং ৫৩ সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। এছাড়া আরও ৪০০ সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা মুসলিমকে খুঁজছে। মানবধিকার গ্রুপ ও রোহিঙ্গা সূত্রগুলো জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন অভিযানে বেসামরিক নাগরিকরাই বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা যা প্রকাশ হয়েছে, তারচেয়ে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, কথিত হামলাকারীদের সন্ধানে কর্তৃপক্ষের পরিচালিত নিরাপত্তা অভিযানের প্রেক্ষাপটে নির্বিচারে গ্রেফতার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বহু অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। তিনি জেনেভায় এক বিবৃতিতে বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রবেশাধিকারের অভাবে সেখানকার প্রকৃত অবস্থা যাচাই করা যাচ্ছে না। সংক্ষিপ্ত বিচারে মৃত্যুদ-, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত জনগণ ও নির্যাতন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধিরা লির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে মিয়ারমারের চলমান সংঘাত নিয়ে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
×